কাল নির্বাচনের ভোটযুদ্ধ

0

গোলাম সরওয়ার,সিটি নিউজ : কাল ভোট ।মাত্র কয়েক ঘন্টা বাকি। ‍এরপরই শুরু হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটযুদ্ধ। ৩০ ডিসেম্বর, রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলবে। এতেই নির্ধারণ হবে কোন দল সরকার গঠন করবে।

এদিকে নির্বাচনে ভোটগ্রহণের প্রস্তুতিও প্রায় সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরইমধ্যে তিক্ত ও একমুখি প্রচারণায় শেষ হয়েছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা। প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে গতকাল শুক্রবার সকাল ৭ টা ৫৯ মিনিটে। টানা ১৯ দিন বিরামহীনভাবে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে চষে বেরিয়েছেন প্রার্থীরা।

যদিও শুরু থেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা প্রচারণা চালাতে পারছেন না বলে অভিযোগ করে আসছিলেন।অন্যদিকে মহা ধুম-ধামে ঢাক, ঢোল পিটিয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন মহাজোটের প্রার্থীরা। হামলা মামলা ও গ্রেপ্তারে মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হলো প্রচারণা। তবে গতকাল থেকে সেনা টহলে ভোটারদের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। ভোটাররা মনে করছেন সেনা থাকাতে ভোট দেয়াটা অনেকটাই শঙ্কামুক্ত হবে। ভোটের শেষ দিনেও সুবিধা করতে পারেনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।ইতিমধ্যেই ভোট প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সারাদেশে ইতিমধ্যে ব্যালট পেপারসহ ভোটগ্রহণ সামগ্রি পৌঁছে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

তফসিল ঘোষণার পরপরই আইনশৃঙ্খলার পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে সারাদেশে পর্যাপ্ত পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও আনসার সদস্য মোতায়েন রয়েছে। গত ২৪ ডিসেম্বর থেকে মাঠে রয়েছেন সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা। গতকাল থেকে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বিশেষ টহল ও চেকপোস্ট পরিচালনা করছেন সেনাসদস্যরা। ভোটের শেষ মুহুর্তে এসে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘাত-সংঘর্ষ ও সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।

ভোট ‘উৎসবমুখর’ হবে দাবি করে গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, ভোটাররা যাতে ভোট দিয়ে নিরাপদে বাড়ি যেতে পারে, সকলের জন্য নিরাপত্তা ও নিরাপদ অবস্থা সৃষ্টি করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনুরোধ করব। যারা ভোটার, তারা যেন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারে, সে ব্যবস্থার আশাই করব। দেশে ইতোমধ্যে ১০টি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি প্রথম দলীয় সরকারের অধিনে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন এই নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি জোটসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। তবে এবারই প্রথম সবদলের অংশগ্রহণে দলীয় সরকারের অধিনে একাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জন করা বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এবং ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিবন্ধিত ৩৯ টি রাজনৈতিক দল এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। যদিও তফসিল ঘোষণার পর থেকেই নির্বাচনের আগমুহূর্ত পর্যন্ত নেতাকর্মীদের নামে গায়েবী মামলা ও গ্রপ্তার-হয়রানির অভিযোগ করেছে বিএনপি জোট।

‘নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি এবং সুষ্ঠু ভোট নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করছে মাঠের বিরোধী দল এই রাজনৈতিক জোটটি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া একটি দুর্নীতি মামলায় জেলে থাকায় নানা সমীকরণে ২০ দলীয় জোট অক্ষুন্ন রেখে ড. কামালের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে নির্বাচনি মাঠে রয়েছে কয়েকবারের দেশ পরিচালনা করা জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি।

৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন কমিশনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির দাবী জানিয়ে আসছে এই দুই জোট। গায়েবি মামলা দায়ের করে দলীয় নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেপ্তারসহ প্রার্থী ও সমর্থকদের হয়রানি বন্ধে দুই দফায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করে ড. কামাল হোসেন ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। নির্বাচন কমিশনেও বার বার অভিযোগ দিয়ে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার-হয়রানির অবসান চেয়েছেন তারা। ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর মহাজোটের প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা প্রচার-প্রচারণা চালাতে গেলে ক্ষমতাসীন দলীয় নেতাকর্মী ও পুলিশি বাধা এবং মারপিট-গ্রেপ্তারের ঘটনা নিয়ে ইসিতে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে বারবার।

সর্বশেষ পুলিশ ইস্যুতে সিইসি কে এম নূরুল হুদার সঙ্গে ড. কামাল হোসেনের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ও হয়েছে। গতকাল নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দাবি করেছেন, ৮ নভেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০ হাজার ৩২৯ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার ও ৮৪৪টি গায়েবি ও মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের ওপর দুই হাজার ৮৯৬ বার হামলা চালানো হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন ১৩ হাজার ২৫২ জন, মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের। এছাড়াও বিএনপি দল হিসেবে আত্ম প্রকাশের পর এটাই প্রথম জিয়া পরিবারের কেউ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেনি।

এবার ভোটে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে ৬৬ জন দায়িত্বপালন করছেন। এরমধ্যে দুইজন বিভাগীয় কমিশনার এবং ৬৪ জন জেলা প্রশাসক। সচিব জানান, এবার ৪০ হাজার ১৮৩টি ভোটকেন্দ্রে ২ লাখ ৭ হাজার ৩১২টি ভোটকক্ষে ১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৭ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ কোটি ২৫ লাখ ৭২ হাজার ৩৬৫ জন এবং মহিলা ভোটার রয়েছেন ৫ কোটি ১৬ লাখ ৬৬ হাজার ৩১২ জন। এবার ইসিতে নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের সবগুলো দলই অংশগ্রহণ করছে। ২৯৯টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ৮৬১ জন। এরমধ্যে রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ৭৩৩ জন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ১২৮ জন প্রার্থী।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.