চন্দনাইশ উপজেলায় নির্বাচনী প্রচারণা শুরু

0

চন্দনাইশ,সিটি নিউজ : চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়া বিভিন্ন প্রার্থী বাংলাদেশের সরকার ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রতি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন। আসন্ন ৩য় ধাপে চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৪ মার্চ রোববার । নির্বাচন কমিশন চেয়ারম্যান ব্যতিত ভাইস-চেয়ারম্যান উম্মুক্ত করে দেয়ায় নৌকার প্রার্থী রয়েছে একজন। চেয়ারম্যান ও ভাইস-চেয়ারম্যানপদে পদে ২ জন করে প্রার্থী থাকলেও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন চন্দনাইশ উপজেলায়।

গত ৮ মার্চ প্রতীক পেয়ে ৮ জন প্রার্থী নিজ নিজ সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। মূলত প্রতীক পাওয়ার পর থেকেই প্রচারণা শুরু করেন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা। নৌকা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও দক্ষিণ জেলা আ’লীগের সাবেক সদস্য, উপজেলা আ’লীগ নেতা একেএম নাজিম উদ্দীন।

তার সাথে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন, কর্ণেল অলির হাত ধরে এলডিপি থেকে পর পর ২ বার নির্বাচিত বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার চৌধুরী। তিনি বিগত পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী কর্ণেল অলির ভাতিজা মো. আইয়ুবের পক্ষে কাজ না করায় তাকে ৩১ ডিসেম্বর’১৫ এলডিপি’র সকল পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

পরবর্তীতে তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম চৌধুরীর হাত ধরে ২৪ সেপ্টেম্বর’১৬ আ’লীগে যোগদান করেন। তিনিসহ ৯ জন প্রার্থী নৌকা প্রতীকের জন্য দক্ষিণ জেলা আ’লীগের সভাপতি-সম্পাদক বরাবরে লিখিতভাবে আবেদন করেন।

জেলা কমিটির সভাপতি-সম্পাদক, উপজেলা কমিটির সভাপতি-সম্পাদক যৌথ স্বাক্ষরে কেন্দ্রে তালিকা পাঠানোর পর ২৩ ফেব্রুয়ারী রাতে একেএম নাজিম উদ্দীন নৌকা প্রতীক পেয়ে যান। পরবর্তীতে উপজেলা চেয়ারম্যান পদের জন্য একেএম নাজিম উদ্দীনের পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এলডিপি থেকে নির্বাচিত বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার চৌধুরীও মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন।

গত ৭ মার্চ প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত এ ২ প্রার্থী নির্বাচনী যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার কোমর বেঁধে নেমেছেন মাঠে। উভয় প্রার্থী গত ৮ মার্চ প্রতীক বরাদ্ধ পেয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে। যে যার অবস্থান থেকে সিনিয়র নেতৃবৃন্দের আশির্বাদ নিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।আগামী ২৪ মার্চ রাতে শেষ হাসি কে হাসবে, তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরো ১২ দিন। আবদুল জব্বার চৌধুরী আ’লীগে যোগদান করার পর দীর্ঘ সময় ধরে আ’লীগের নেতা-কর্মীদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেছিলেন। তাছাড়া তিনি আ’লীগে আসার পরও তার সে পুরানো দিনের রাজনীতির সঙ্গীদের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত ছিল বলে অভিযোগ করেছেন বেশ কিছু আ’লীগ নেতা। বিজ্ঞ মহলের মতে তিনি আ’লীগের কিছু অংশ তার সাথে রয়েছে এবং পুরানো সে রাজনীতির সঙ্গীদের আশ্বাসের সুবাদে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আ’লীগের নেতা-কর্মীরা যেভাবে আ’লীগের প্রার্থীর জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে গেছেন, তার ফলশ্রুতিতে কর্ণেল অলির মত একজন হেভিওয়েট প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।

একইভাবে উপজেলা নির্বাচনে নেতা-কর্মীরা ভূমিকা রাখলে নৌকার প্রার্থীর বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবেনা বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন নেতা-কর্মীরা। তাছাড়া আ’লীগ বা অঙ্গ সংগঠনের কোন নেতা-কর্মী প্রকাশ্যে নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে ভূমিকা রাখার বিষয়টি প্রকাশ পেলে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেয়ার হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন উপজেলা আ’লীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর।

তাছাড়া সংসদ সদস্য আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম চৌধুরী উপজেলা আ’লীগের বর্ধিত সভায় নৌকার প্রার্থীকে জয় করার জন্য সকল নেতা-কর্মীকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহবান জানান। অন্যথায় সবাইকে দায়ভার বহন করতে হবে।

আবদুল জব্বার চৌধুরী আ’লীগে যোগদান করার পরও বিগত ২ বছর ৫ মাসে আ’লীগ বা অঙ্গ সংগঠনের কোন কমিটির সদস্য পদ পর্যন্ত লাভ করেন নাই। ফলে তাকে আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবেও উল্লেখ করা যাচ্ছে না। তাই তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে “দোয়াত-কলম” প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন।

এদিকে ভাইস-চেয়ারম্যান পদে যুবলীগের ২ নেতার মধ্যে ১ জন প্রত্যাহার করায় মো. মঈন উদ্দীন (তালা)’র সাথে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী বর্তমান ভাইস-চেয়ারম্যান মাও. সোলাইমান ফারুকীর দলীয় প্রতীক মোমবাতি’র মধ্যে ভোট যুদ্ধ হবে।

অপরদিকে মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত বর্তমান মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান শাহনাজ বেগম (হাঁস)’র সাথে তিন আ’লীগ সমর্থীত প্রার্থী সাবেক মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান খালেদা আকতার চৌধুরী (পদ্মফুল), সঞ্চিতা বড়ুয়া (কলসি), এড. কামেলা খানম (প্রজাপতি) প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন।

কেউ যেন কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। যে যার যোগ্যতা দিয়ে আগামী নির্বাচনে জয়লাভ করে উপজেলা পরিষদের দায়িত্ব নিবেন। এ স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে চন্দনাইশ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৮ প্রার্থী। যতই নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসছে, ততই যেন প্রার্থীরা নির্ঘুম রাত কাটাবে।

৮ প্রার্থীর মধ্যে উপজেলার চেয়ারম্যান পদে আবদুল জব্বার চৌধুরী, ভাইস-চেয়ারম্যান পদে বর্তমান ভাইস-চেয়ারম্যান মাও. সোলাইমান ফারুকী ও মো. মঈন উদ্দীন ৩ জনেই হাশিমপুর ছৈয়দাবাদ এলাকার। তাছাড়া নৌকা প্রতীকের প্রার্থী একেএম নাজিম উদ্দীন বরমা, মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান প্রার্থী বর্তমান শাহনাজ বেগম, খালেদা আকতার ২ জনই বরকলের অধিবাসী। তাছাড়া মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে সঞ্চিতা বড়ুয়া পৌরসভা, এড. কামেলা খানম পৈত্রিক বাড়ী বৈলতলী।

এদিকে, চন্দনাইশ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল জব্বার চৌধুরীর নির্বাচনী অফিস ভাংচুর করে দখল ও নির্বাচনী প্রচারের মাইক ভাংচুরসহ পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ রয়েছে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় জনগণ ও ভোটারদের মাঝে শঙ্কা-আতঙ্ক বিরাজ করছে।

এ বিষয়ে সহকারি রিটার্নিং অফিসার আ.ন.ম বদরুদ্দোজা অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, অভিযোগে যাদের নাম দেয়া হয়েছে, তদন্ত সাপেক্ষে সত্যতা পাওয়া গেলে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।

উল্লেখ্য,গত সোমবার ১১ মার্চ রিটার্নিং অফিসার ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক)’র বরাবরে ছৈয়দাবাদ এলাকার নুরুল আমজাদ চৌধুরী বাদী হয়ে লিখিত অভিযোগ করেন, গত ৯ মার্চ আবদুল জব্বার চৌধুরীর দোয়াত- কলমের একটি অফিস গাছবাড়ীয়া কলেজগেইট এলাকায় নির্মাণ করা হয়। কতিপয় লোকজন পরদিন ভোর ৪ টায় অফিস ও অফিসের আসবাবপত্র ভাংচুর করে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.