দোহাজারীতে সংঘর্ষে ৪ পুলিশসহ আহত-৩০, গ্রেফতার-৯

0

নিজস্ব সংবাদদাতা, চন্দনাইশ : চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী পৌরসভা এলাকায় সোমবার ২২ অক্টোবর রাত ৮টা থেকে সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত উল্লাপাড়া ও বার্মা কলোনী দু’পক্ষের সংঘর্ষে ৪ পুলিশসহ উভয় পক্ষের ৩০জনের অধিক আহত হয়।

আহতদের মধ্যে পুলিশসহ ১১জনকে দোহাজারী হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। তৎমধ্য গুরুত্বর আহত অবস্থায় দোহাজারী উল্লাহ পাড়ার নুরুল হকের ছেলে সাইফুল (৩৫) কে চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।

সংঘর্ষ চলাকালে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের দোহাজারী এলাকায় প্রায় ২ঘন্টাকাল যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। এতে দূর্ভোগে পড়ে দুরপাল্লার যাত্রীরা। পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ২৫ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়েছে বলে জানিয়েছেন থানা অফিসার ইনচার্জ কেশব চক্রবর্তী।

পরে অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। ঘটনার সময় কতিপয় দুস্কৃতিকারীরা কয়েকটি দোকানপাটে ভাংচুর ও লুটপাঠ চালায়। এতে প্রায় ২০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীরা জানান।

ঘটনার পর রাতে দোহাজারী বার্মা কলোনী ও উল্লাপাড়ায় অভিযান চালিয়ে ৯ জনকে আটক করে। আটককৃতরা হল দোহাজারী সদর উল্লাপাড়ার আবদুর শুক্কুরের ছেলে মো. নাজিম (৩০), মো. ইসলামের পালক ছেলে শহিদুল ইসলাম সোহাগ (২২), হাবিবুর রহমানের ছেলে বেলাল রানা (২২), বার্মা কলোনীর মৃত আজিজের ছেলে আবদুর রহিম (৪০), ইমতিয়াজের ছেলে মো. সুমন (২০), মৃত নুর হোসেনের ছেলে করিমুল্লাহ (২০), মো. ইসমাইলের ছেলে মো. উল্লাহ (১৮), মনির আহমদের ছেলে মো. জিকু (২০), হাশেমের ছেলে আবদুল্লাহ (২২)। আটককৃতদেরকে গতকাল ২৩ অক্টোবর আদালতে প্রেরণ করা হয়। স্থানীয়রা জানান, গত ১৭ অক্টোবর বার্মা কলোনীর জসীমের মুদি ও ইজিলোডের দোকান চুরি হয়।

এ ঘটনায় ১৮ অক্টোবর জসীম বাদী হয়ে চন্দনাইশ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে। অভিযোগ দায়েরের রেশ ধরে ওইদিন বিকালে উল্লাপাড়া ও বার্মা কলোনীর দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে ১২জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে বার্মা কলোনীর মাসেক (১৬) নামে একজনের অবস্থা আশংঙ্কা জনক হওয়ায় তাকে চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছিল। এঘটনার জের ধরে দু’গ্রুপের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করে গত ২১ অক্টোবর রাতে দু’গ্রুপ মুখোমুখি হলে পুলিশ উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

কিন্তু গত ২২ অক্টোবর রাতে উল্লাহপাড়ার রানাকে দোহাজারী ব্রিজ এলাকায় মারধরের কথা ছড়িয়ে দিলে রাত ৮টায় পক্ষদ্বয়ের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দোহাজারী সদর উল্লাহপাড়ার লোকজন লোহার রড, দা, কিরিচসহ বার্মা কলোনীতে হামলা চালিয়ে আসকর খান বাবুর মাছের আড়ৎ, অটোরিক্সা গ্যারেজ, নুর আলমের চায়ের দোকান, সাহাবউদ্দীনের কম্পিউটারের দোকান, কালামের বিস্কুটের গুদামসহ প্রায় ২৫টির অধিক দোকান ও বাসা ভাংচুর করে বলে স্থানীয়রা জানান।

পরে বার্মা কলোনীর লোকজন সংগঠিত হয়ে লোহার রড, দা, কিরিচ, হকিষ্টিক নিয়ে পাল্টা হামলা চালিয়ে দোহাজারী বাস ষ্টেশনের শানে ষ্টোর পারভেজ, আমজাদ, আবদুর রশিদ, বেলাল, নাছির, হাজারী টাওয়ারের পাশে পেঠান, আহমদ হোসেন, ইসমাঈল, সোলায়মান, আবদুল আজিজ, ও আবদুস ছমদের ফলের দোকান, ওয়ালটনের শোরুমের গ্লাস ভাংচুর, সুভাষ ও রানার ঘড়ির দোকান, নাজিমের জুতার দোকান, হেলাল, জাফর ও হাবিবের পানের দোকানে ভাংচুর চালিয়ে নগদ টাকা ও বিভিন্ন মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায়।

এতে ব্যবসায়ীদের প্রায় ২০ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীরা দাবী করেন। সংঘর্ষের সময় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের উভয় পাশের শত শত দুরপাল্লার যানবাহন আটকা পড়ে যাত্রী সাধারণের চরম দূর্ভোগ পোহাতে হয়। পরে দোহাজারী তদন্ত কেন্দ্র ও চন্দনাইশ থানার অতিরিক্ত পুলিশ এসে ২৫ রাউন্ড ফাঁকাগুলি গুলি বর্ষণ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

সংঘর্ষে দোহাজারী তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সফেক্টর বিদুৎ কুমার বড়ুয়া (৪৪), এএসআই আতিকুর রহমান (৩৭), কনষ্টেবল সালাউদ্দীন (২৩), নুরে রহমান (২১), মো. সাইফুল (৩৫), মো.তানভীর (১০), মো. সাকিব (১৯), আনোয়ার হোসেন (৩০) মো. আসিফ (১৮), রফিকুল ইসলাম (২০), মো. আরিফ (১৮), নুর আলী (২৫), মো. ফরহাদ (২২), মো. আলমগীর (২৫), মো. নুরু (২৩), মো. পারভেজ (১৮), মুন্না (২৫), মো. খোকন (২০), মো. শাকিল (১৮), লাখি (৩৫), পিংকি (৩০), লিটন (৩৫), হাসিনা বেগম (২৫), মুন্নি আকতার (৩০), মাসেক (১৬) আহত হয়।

আহতদের মধ্যে বার্মা কলোনীর মাসেককে আশংকাজনক অবস্থায় চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। এ ব্যাপারে দোহাজারী তদন্ত কেন্দ্রের এএসআই আতিকুর রহমান বাদী হয়ে ২৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৮০ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে দোহাজারী বার্মাপাড়া ও উল্লাহপাড়া এলাকার লোকজন গ্রেপ্তার আতংকে রয়েছে। উভয় পাড়ায় প্রতিটি ঘর অনেকটা পুরুষশূণ্য অবস্থায় রয়েছে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

এব্যাপারে চন্দনাইশ থানা অফিসার ইনচার্জ কেশব চক্রবর্তী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ২৫ রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে। উভয় পক্ষ দা, কিরিচ, লোহার রড নিয়ে খানপ্লাজার সামনে মুখোমুখি হয়। এসময় পক্ষদ্বয়ের মধ্যে সংঘর্ষে দু’পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৪ জন পুলিশ আহত হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছে। মামলার সূত্র ধরে ৯ জনকে আটক করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে এবং পুলিশ টহলে রয়েছে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.