নুসরাত হত্যায় গ্রেপ্তার রানা : জাবেদ ও মনি’র স্বীকারোক্তি

0

সিটি নিউজ ডেস্ক : ফেনীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যায় অভিযুক্ত ইফতেখার উদ্দিন রানা (২১) নামের আরেক জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেপ্তার রানা ওই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারীদের একজন বলে তদন্তকারীদের ভাষ্য।

গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে রাঙামাটি শহরের টিঅ্যান্ডটি এলাকার একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। রাঙামাটি কোতোয়ালী থানার ওসি জাহিদুল হক রণি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, গ্রেপ্তার যুবককে চট্টগ্রামে প্রেরণ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী নুসরাত ছিলেন এবারের আলিম পরীক্ষার্থী। গত ৬ এপ্রিল আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে গেলে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় কয়েকজন। এ ঘটনায় দগ্ধ নুসরাত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল মারা যান।

মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে নুসরাতের পরিবারের দায়ের করা মামলা তুলে না নেওয়ায় অধ্যক্ষের লোকজন তার গায় আগুন দেয় বলে পরিবারের অভিযোগ। এ ঘটনায় মামলায় অধ্যক্ষ ও কমিটির সদস্যসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করে নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান ৮ এপ্রিল সোনাগাজী থানায় মামলা করেন।

আ. লীগ নেতা রুহুল রিমান্ডে : নুসরাত হত্যা মামলায় ফেনীর সোনাগাজী উপজেলা আ. লীগ সভাপতি রুহুল আমিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। আদালত পুলিশের পরিদর্শক গোলাম জিলানি জানান, গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শরাফ উদ্দিন আহমেদ এই আদেশ দেন। বিকালে পুলিশ রুহুল আমিনকে আদালতে হাজির করে নুসরাত হত্যার ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের হেফাজতের (রিমান্ড) আবেদন করে বলে তিনি জানান। গত শুক্রবার বিকালে নিজ বাড়ি থেকে রুহুল আমিনকে আটক করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পরে তাকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
মনি ও জাবেদের স্বীকারোক্তি : নুসরাত হত্যার ঘটনায় আরও দুই আসামি কামরুন নাহার মনি ও জাবেদ হোসেন আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। গতকাল শনিবার রাতে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শরাফ উদ্দিন আহম্মেদের আদালতে তারা ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। গতকাল বিকাল ৫টায় কামরুন নাহার মনি ও জাবেদ হোসেনকে আদালতে আনা হয়। সন্ধ্যার আগে শুরু করে কয়েকঘণ্টা তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।

নুসরাতের সহপাঠী কামরুন নাহার মনি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বোরকা কেনার কথা স্বীকার করেছিলেন। এরপর পুলিশ মনিকে নিয়ে মাদ্রাসার ছাদ ও বোরকার দোকান পরিদর্শন করে।

পিবিআইয়ের চট্টগ্রামের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. ইকবাল সাংবাদিকদের একথা জানিয়েছেন। এ নিয়ে আলোচিত এ মামলায় নুসরাত হত্যার দায় স্বীকার করে সাতজন জবানবন্দি দিয়েছেন। এর আগে স্বীকারোক্তি দেন নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, আবদুর রহিম শরিফ, হাফেজ আবদুল কাদের ও উম্মে সুলতানা পপি। এ মামলায় এ পর্যন্ত ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও পিবিআই।

বোরকা উদ্ধার : নুসরাত হত্যায় যারা বোরকা পরে অংশ নিয়েছিল তাদের একজনের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে খাল থেকে একটি বোরকা উদ্ধারের কথা জানিয়েছে পিবিআই।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফেনীর পিবিআই পরিদর্শক মো. শাহ আলম বলেন, নুসরাতের সহপাঠী রিমান্ডে থাকা জোবায়েরের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল শনিবার দুপুরে সোনাগাজী সরকারি কলেজের পেছনের খাল থেকে তারা এই বোরকাটি উদ্ধার করেন। জোবায়ের এই মামলার এজহারভুক্ত ৮ আসামির একজন। তাকে গত ৯ এপ্রিল সোনাগাজী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। জোবায়ের এখন রিমান্ডে রয়েছেন।

পরিদর্শক শাহ আলম বলেন, নুসরাতের সহপাঠী জোবায়ের এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সোনাগাজী সরকারি কলেজের পেছনে একটি খালে অভিযান চালানো হয়। সেখানে থেকে হত্যার সময় ব্যবহৃত তিনটি বোরকার একটি উদ্ধার করে পিবিআই।

এর আগে গত শুক্রবার দুপুরে অপর আসামি কামরুন নাহার মনির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পিবিআই জেনেছে সোনাগাজী পৌরশহরের মানিক মিয়া প্লাজার একটি দোকান থেকে মনি বোরকা কেনেন। হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া পুরুষদের গায়ে যে তিনটি বোরকা ছিল তার একটি উদ্ধার করল পিবিআই।

সিআইডির বক্তব্য : সিআইডি জানিয়েছে, নুসরাত হত্যাকাণ্ডে অবৈধ লেনদেনে কেউ জড়িত থাকলে আইনের আওতায় আনা হবে।

ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির হত্যাকাণ্ডে অবৈধ অর্থ লেনদেনের যে অভিযোগ উঠেছে এবং এব্যাপারে যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদেরকে আইনের আওতায় আনার কথা জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর সিআইডি প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম একথা জানান।

মোল্লা নজরুল বলেন, সম্প্রতি নুসরাত হত্যাকাণ্ডে অবৈধ অর্থ লেনদেনের অভিযোগ সংক্রান্ত সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে এ বিষয়টি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ড ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে কিংবা ঘটনা ধামাচাপা দিতে কোনো অবৈধ লেনদেন হয়েছে কিনা, কিংবা কে বা কারা এসব লেনদেনের সঙ্গে জড়িত সেসব বিষয় খতিয়ে দেখতে কাজ শুরু করেছে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিট।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার জানান, সংস্থার অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের সদস্যরা আগামী সপ্তাহে বিষয়টি অনুসন্ধানের জন্য ফেনীর সোনাগাজীতে যাবে। সেখানে সংশ্লিষ্ট অন্যসব সংস্থার সাথে সমন্বয় করে এ বিষয়ে অনুসন্ধান চালানো হবে বলে জানান তিনি।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.