সংসদ নির্বাচন চট্টগ্রাম চাঙ্গা হচ্ছে বিএনপি’র মামলা

0

জুবায়ের সিদ্দিকীঃ  আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চাঙ্গা হচ্ছে বিএনপি-জামায়াতের ৬০ মামলা। হামলা ও নাশকতার অভিযোগে এসব মামলা হয়েছিল। এসব মামলার আসামী ৫ শ’র বেশি। আসামীদের মধ্যে শীর্ষ নেতাও রয়েছেন। জামিন না নেয়া আসামীদের গ্রেফতারে শিগগিরই অভিযান শুরু করবে পুলিশ। তবে পুলিশ বলছে আসামীদের গ্রেফতারে আমাদের নিয়মিত অভিযান চলছে।

জানা যায়, সরকারের কাছে খবর রয়েছে নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি-জামাত দেশজুড়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারে। নির্বাচন বানচালের জন্য নাশকতা, হামলার ঘটনা ঘটাতে পারে। তারা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরী করতে পারে। এ জন্য উপর মহল থেকে সতর্ক থাকার জন্য নগর ও জেলা পুলিশকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামীদের গ্রেপ্তারের নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

সিএমপি সুত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী মানবতা বিরোধী অপরাধ মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জামাত নেতা কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়ার পর থেকে সহিংসতা শুরু হয়। কিন্তু এ সহিংসতা কয়েকগুন বৃদ্ধি পায় ২৮ ফেব্রুয়ারি জামাতের দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির আদেশ দেয়ার পর। নগরীতে সহিংসতা চালায় জামাত শিবির কর্মীরা।

নগরীর এ কে খান মোড়, পাহাড়তলী, জিইসি মোড়, ষোলশহর ২ নম্বর গেট, বহদ্দারহাট সহ বিভিন্ন স্থানে সহিংস ঘটনা ঘটে। গাড়ি ভাঙ্গচুর, বাড়িঘরে আগুন দেয়া, লুটপাটসহ নানা সহিংস ঘটনা ঘটে। এরপর সাঈদীকে চাঁদে দেখা যাওয়ার গুজব ছড়িয়ে দ্বিতীয় দফায় সহিংসতা চালানো হয়। একই কায়দায় সহিংসতা চালিয়ে বাড়িঘর ভাঙ্গচুর, হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট করা হয়। নগরীতে ব্যাপক গাড়ি ভাংচুর করা হয়।

এদিকে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে ঘিরে ব্যাপক সহিংস ঘটনা ঘটে। বিএনপি ও জামাত শিবির এ নাশকতা চালায় বলে অভিযোগ করে আওয়ামী লীগ। নগরীতে হামলা-ভাংচুর অগ্নিসংযোগসহ সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এ সময় কয়েকশ’ গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। রেললাইন উপড়ে ফেলা হয়।

২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি ২০ দলীয় জোটের ডাকে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ ও পরবর্তীতে লাগাতার হরতাল শুরু হয়। টানা তিন মাসের অবরোধ হরতালে পেট্রোলবোমা, ককটেল ও আগুনে পুড়ে হতাহত হয়েছেন বহু মানুষ। এ সময় কয়েকশ গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়। নগরীর ষোলশহর ২ নম্বর গেট, একে খান গেট, চকবাজারসহ বহু স্থানে সহিংস ঘটনা ঘটে।

এ সময় পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করা হয়। যাত্রীবাহী গাড়িতেও নিক্ষেপ করা হয় পেট্রোল বোমা। এসব ঘটনায় ৭০টি মামলা করা হয় নগরীর বিভিন্ন থানায়। মামলাগুলোর মধ্যে ৩০টি চার্জশিট দেয়া হলেও বাকিগুলো তদন্তাধীন রয়েছে। সর্বশেষ গতমাসে দেয়া হয়েছে দুটি মামলার চার্জশিট। এ দুই মামলায় ৬টি চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ।

সুত্র জানায়, সব মিলিয়ে ৬০টি মামলা চাঙ্গা করা হচ্ছে। এর সবগুলোও নাশকতার অভিযোগ করা হয়েছে। আসামীদের মধ্যে রয়েছেন, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, যুগ্ন-মহাসচিব আসলাম চৌধুরী, মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন ও সাধারন সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, বিএনপি নেতা ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, মহানগর জামাতের সাবেক আমির আ ন ম শামসুল ইসলাম ও নায়েবে আমির শাহজাহান চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এনামুল হক এনাম, মহানগর জামাতের সহকারী সেক্রেটারী ও আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আ জ ম ওবায়দুল্লাহ, দক্ষিন জেলা জামাতের সভাপতি জাফর সাদেক, ইসলামী ছাত্র শিবিরের তৎকালীন মহানগর (উত্তর) সভাপতি নুরুল আমিনসহ বিএনপি-জামাত ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

এদিকে আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন,’ আন্দোলনের নামে নাশকতা করলে তার সময়োচিত জবাব দেওয়া হবে’। সিএমপির উর্দ্ধতন কর্মকর্তা বলেন,’ মামলার আসামী গ্রেফতার অভিযান একটি চলমান বিষয়। যে কোন মামলার আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালায়’।

তিনি বলেন,’ কেউ যাতে নাশকতা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য নাশকতা মামলার আসামীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হয়। এখানে রাজনৈতিক কোন বিবেচনা নেই। আসামী হিসেবেই গ্রেপ্তার করা হয়। জানা যায়,’ সরকার নাশকতার আশঙ্কায় সক্রিয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছে। যাতে আন্দোলন চাঙ্গা করতে না পারে বা নাশকতা সৃষ্টি করতে না পারে। সুত্র জানায়, এসব মামলায় ৫ শতাধিক নাম উল্লেখ করে আসামী ছাড়াও অজ্ঞাতনামা রয়েছে আরো কয়েকশ। জানা যায়, থানা এবং গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান শুরু করবে। যারা জামিনে নাই তাদেরকে গ্রেপ্তারে ইতিমধ্যে অভিযান শুরু হয়েছে’।

নগর বিএনপি সুত্রে জানা গেছে, বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের ছোট বড় সব নেতাই এখন গ্রেফতার ও মামলার আতঙ্কে রয়েছে বলে জানান যুবদল সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তি। গত এক মাসে শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান তিনি। সুত্র মতে, বায়েজিদ থানা যুবদল নতা মাহাবুব উদ্দিন, ডবলমুরিং থানা বিএনপি নেতা মো: ইলিয়াছ ও ভাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আকবর শাহ থানা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুস ছাত্তার সেলিম, সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ, যুগ্ন সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া গোলাপ ও নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারন সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু সম্প্রতি গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে নাশকতার পরিকল্পনার সাথে যুক্ত অভিযোগে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। এ ছাড়া নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান, সাধারন সম্পদক আবুল হাশেম বক্কর থেকে শুরু করে প্রথম সারির একেকজন নেতার বিরুদ্ধে হড়ে ডজনের উপর মামলা রয়েছে। কারো কারো নামে রয়েছে ৩০ এর অধিক মামলা।

তেমন একজন হচ্ছেন নগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও নগর বিএনপির যুগ্ন সম্পাদক গাজী সিরাজ উল্লাহ। তার বিরুদ্ধে ৩৭টি মামলা রয়েছে। নেতাদের দাবী সম্প্রতি ৪ অক্টোবর নগরীর লালদীঘি ময়দানে জনসভা করার ঘোষনা দেয় চট্টগ্রামের বিএনপি। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ট নির্বাচনের দাবীতে এই জনসভার ঘোষনা দেয়ার পর তৃনমুলের নেতার্কীরাও বাড়িঘরে থাকতে পারছেন না। পুলিশী অভিযান চলছে।

নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন,’ বিগত প্রায় ১০ বছর ধরে বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের নানাভাবে হয়রানী করে আসছে পুলিশ প্রশাসন। মুলত পুলিশকে এ কাজে ব্যবহার করছে সরকারী দল। তবে বর্তমানে যে হারে মিথ্যা মামলা ও গ্রেপ্তার করে আমাদের নেতাকর্মীদের হয়রানী ও নির্যাতন করা হচ্ছে তা অতীতকে ছাড়িয়ে গেছে। যাকে-তাকে গ্রেপ্তার করে একটা আতঙ্ক সৃষ্টি করছে পুলিশ। বিএনপির কোন নেতাকর্মী কখন আটক হচ্ছে, এই আতঙ্কেই এখন দিন কাটে।

জানা গেছে,’ পুলিশী অভিযানে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা আটক হলেও এখন অনেকটা নিরব রয়েছে জামায়াত কর্মীরা। তারা রাজনৈতিক ভাবে বেকায়দায় থাকলেও কর্মীদের মধ্যে রয়েছে প্রযুক্তিগত যোগাযোগ। সময় ও সুযোগমত তারা মাঠে নামবে। দায়িত্বশীল অনেক জামায়াত-শিবির নেতা বাড়িঘর ছেড়েছেন বহু আগে।

অন্যত্র বসতি গড়েছেন ভীন্ন পরিচয়ে। কেউ কেউ বিভিন্ন কলকারখানায় চাকরী বা ব্যবসা-বানিজ্যে ব্যস্ত। তা সত্ত্বেও সাংগঠনিক কর্মকান্ডে ভাটা পড়েনি। যোগাযোগ হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মোবাইলে। ফলে দেখা সাক্ষাত না হলেও সাংগঠনিক ঐক্য ঠিকই রয়েছে। জানা গেছে,’ নগর জামায়াতের নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী গ্রেপ্তার হবারও পর থেকে তারা আত্বগোপনের কৌশল অবলম্বন করছে।

সংশ্লিষ্ট সুত্র মতে,’ পুলিশের দৌড়ের উপর থেকে হয়রান হতে চায় না তারা। নির্বাচনের ডামাঢোলে রাস্তায় নামার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। নগর গোয়েন্দা পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা বলেন,’ জামায়াত-শিবিরের অনেক চিহ্নিত নেতাকর্মীকে খুঁজছে পুলিশ। যাদের বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগ রয়েছে’। গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে,’ এসব নেতাকর্মীরা রয়েছেন চট্টগ্রামের সাতকানিয়া-লোহাগাড়া, বাঁশখালী ও ফটিকছড়ি এলাকায়’।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.