১৮ বছর পরও মাহমুদউল্লাহর আক্ষেপ
২০০০-এর ১০ই নভেম্বর ভারতের বিপক্ষে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ প্রবেশ করেছিল টেস্ট যুগে। আজ ঠিক পেরিয়ে গেছে ১৮ বছর।
সেই থেকে ১০৯ ম্যাচ খেলেছে, যেখানে জয় ১০ আর ড্র ১৬ টি। বাকি ৮৩ ম্যাচেই হার। আজ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মিরপুর শেরেবাংলা মাঠে নিজেদের ১১০তম টেস্ট খেলতে নামবে টাইগাররা। যেখানে তারা দাঁড়িয়ে আছে সিরিজ হারের শঙ্কায়।
দলের নেতৃত্ব দেবেন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তাই সংবাদ সম্মেলনে তার দিকেই ছুটে যায় প্রশ্নের তীর। ১৮ বছরে ক্রিকেটের এই অভিজাত ফরমেটে বাংলাদেশের সত্যিকারের অর্জন পেয়েছে কতটা? কতটা এগিয়েছে দল!
জবাবে তিনি যা বললেন তা ছিল শুধু্ই আক্ষেপ। ‘যদি ফলাফল হিসেবে করে দেখেন, তাহলে হয়তো অতটা প্রাপ্তবয়স্ক হয়নি। টেস্ট ক্রিকেটটা আপনাকে খেলতে থাকতে হবে, তারপর আপনি ফলাফলটা পাবেন। অন্য ফরম্যাটে আমরা যেভাবে ভাল খেলছি, রিদম ধরতে পেরেছি, টেস্টে হয়তো সেটা ধরতে পারছি না।’
১৮ বছর পরও মাহমুদুল্লাহ আক্ষেপ করছেন। আর তাতো করবেনই, কারণ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চলতি সিরিজের প্রথম টেস্টে সিলেটে হেরেছে ১৫১ রানের বড় ব্যবধানে। যেখানে টাইগারদের কাছে ওয়ানডে সিরিজে তারা হয়েছিল হোয়াইটওয়াশ।
বিশেষ করে টেস্টের ব্যাটিং ভীষণ লজ্জার। প্রথম ইনিংসে ১৪৩ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬৯ রান। শুধু কি তাই? এর আগে ৩ টেস্টের ৬ ইনিংসে তো দেড়শ’ই ছুঁতে পারেনি দল।
তাহলে এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ কি? অধিনায়কই নয়, দলের সিনিয়র ক্রিকেটার হিসেবে করণীয়টাও বাতলে দিলেন মাহমুদুল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘কিছু ম্যাচে আমরা ভালো করেছি, কিছু ম্যাচে আবার বাজে পারফর্ম করেছি। এই জিনিসটা থেকে বের হওয়া দরকার, বের হতেই হবে। ধারাবাহিকতাটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ, টেস্ট ক্রিকেটে। আমাদের আরো ডিসিপ্লিন হতে হবে ক্রিকেটের তিন বিভাগেই। টেস্ট ক্রিকেটে আপনাকে বড় জুটি গড়তেই হবে, ব্যাটিং কিংবা বোলিং। তাহলে আপনার ফল পক্ষে আসবে।’
টেস্টে যে একেবারেই উন্নতি করেনি বাংলাদেশ তাও নয়। গেল দুই বছরে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াকে টেস্ট হারিয়ে নয়া ইতিহাস রচনা করে টাইগাররা। এমনকি গেল বছর শ্রীলঙ্কার মাটিতে নিজেদের শততম টেস্ট ম্যাচও জিতে নেয় দল।
কিন্তু সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখাটাই যেন কঠিন। বিশেষ করে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নিজেদের মাটিতে হারটা যেন কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না ভক্ত-সমর্থক থেকে শুরু করে দলের সদস্যরাও। ক্রিকেট বিশ্লেষকই নয়, ভক্তদেরও ধারণা হয়তো জিম্বাবুয়েকে হালকাভাবে নেয়ার কারণেই এমন হার। কিন্তু মাহমুদুল্লাহ তা মানতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘না তেমন কোনো অনুভূতি আমাদের মধ্যে কাজ করে না। কারণ আমরা প্রতিটি প্রতিপক্ষকে ওভাবেই দেখি। ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়াকে যেভাবে দেখি, আমি জিম্বাবুয়েকেও একই চোখে দেখি। কারণ মাঠে গিয়ে ভালো খেলাটাই মূল লক্ষ্য। সেটা যদি আপনি করতে না পারেন তাহলে আপনারও খারাপ লাগবে, কারণ আপনি দেশের হয়ে ভাল করতে পারছেন না। এটা সবাইকেই অনেক পীড়া দেয়।’
আজ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট খেলতে মাঠে নামবে বাংলাদেশ দল। তবে এই ম্যাচে মাথার উপর চক্কর কাটছে সিরিজ হারের শঙ্কার মেঘ। যা বাঁচাতে হলে নিজেদের সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে লড়াই করতে হবে। তবে এখানেই আরো বড় চিন্তার নাম ব্যাটিং।
অধিনায়ক এ নিয়ে নিজেও যে চিন্তায় আছেন তা তার কথাতেই স্পষ্ট। ‘আমার কাছে মনে হয় ব্যাটিংয়ে শৃঙ্খলার অভাবে এমনটা হচ্ছে। যেটি আমি আগেই বললাম যে, টেস্ট ক্রিকেটে মনোযোগের লেভেলটাও সেরকম পর্যায়ে থাকতে হবে। তা না হলে পারফর্ম করার সুযোগটি অনেক কম। বিশেষ করে যেটি আগেই উল্লেখ করলাম যে স্লো এবং স্পিনিং উইকেটে যেখানে বল হয়তো কাছে কম আসে, তখন আপনাকে অবশ্যই সেভাবে খেলতে হবে। এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে খেলা লাগবে এবং শৃঙ্খলার ব্যাপারটি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। টেস্টে আরো ধৈর্য নিয়ে খেলতে হবে।’