অন্যের জীবন বাঁচাতে নিজের জীবন দিলেন সোহেল-প্রধানমন্ত্রীর শোক

0

সিটি নিউজ ডেস্কঃ নিজরে জীবনের তোয়াক্কা না করে অন্যের জীবন বাঁচাতে গিয়ে নিজেই চলে গেলেন ফায়ারম্যান সোহেল রানা। তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকার আলোচিত বনানীর এফ আর টাওয়ারে আগুন লাগার পর উদ্ধার অভিযানে যোগ দেন ফায়ারম্যান সোহেল রানা। আগুন নেভানো ও আটকে পড়া ব্যক্তিদের উদ্ধারে নিজের জীবনকে তুচ্ছ করেন তিনি। একপর্যায়ে নিজেই গুরুতর আহত হন। তারপর চলেই গেলেন না ফেরার দেশে।

রবিবার টানা ১১ দিন মৃত্যুর সাথে লড়াই করে চলে গেলেন পরপারে। সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে বাংলাদেশ সময় রবিবার দিবাগত রাত ২টা ১৭ মিনিটে সোহেল মারা যান।

জানা গেছে, ঢাকার কুর্মিটোলা ফায়ার স্টেশনে ফায়ারম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন সোহেল। গত ২৮ মার্চ এফ আর টাওয়ারে ভয়াবহ আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকাজে যোগ দেন সোহেল। ফায়ার সার্ভিসের উঁচু ল্যাডারে (মই) উঠে এফ আর টাওয়ারের আগুন নেভানো ও আটকে পড়া ব্যক্তিদের উদ্ধারকাজ করছিলেন সোহেল। একপর্যায়ে তার শরীরে লাগানো নিরাপত্তা হুকটি মইয়ের সঙ্গে আটকে যায়। একপর্যায়ে তিনি ডান পায়ে আঘাত পান। এতে পায়ের হাড় কয়েক টুকরো হয়ে যায়। পা শরীরের সঙ্গে কোনো রকমে আটকে ছিল। পেটে চাপ লেগে নাড়িভুঁড়িও থেঁতলে যায়।

ঘটনার দিন দেখা যায়, মইয়ের সঙ্গে আটকে গিয়ে সোহেল বিপজ্জনকভাবে ঝুলছিলেন। একপর্যায়ে তিনি কোনোমতে এক পায়ে ভর দিয়ে মই থেকে নেমে আসেন। তখন তার পা শরীর থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিল, প্রচুর রক্ত ঝরছিল। সঙ্গে সঙ্গে তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নিয়ে যাওয়া হয়। সিএমএইচে সোহেলের শরীরে দুটি অস্ত্রোপচার করা হয়ে। দেশে তিনি সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেখানে তার কোনো উন্নতি না হওয়ায় পরিবারের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সিঙ্গাপুরে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে সোহেল রানাকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনি সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। কিন্তু তার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিতই ছিল বলে জানান কুর্মিটোলার ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন ম্যানেজার বজলুর রশীদ।

সোহেলের ভগ্নিপতি জসীমউদ্দিন জানান, দেশে চিকিৎসাধীন থাকাকালে তার (সোহেল) অবস্থা ভালো ছিল না। তিনি সংজ্ঞাহীন ছিলেন। তার শরীর রক্ত গ্রহণ করতে পারছিল না। অন্যের জীবন বাঁচাতে গিয়ে নিজেই মৃত্যুর মুখে পড়েন সোহেল। বিভিন্ন তলায় আটকে পড়া ব্যক্তিদের উদ্ধার করতে গিয়েছিলেন।

সোহেল রানা কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার চৌগাংগা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি চৌগাংগা শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। সোহেলের বাবা নুরুল ইসলাম একজন দরিদ্র কৃষক। মা হালিমা আক্তার চার ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি থাকেন। চার ভাইয়ের মধ্যে সোহেল সবার বড়। পরিবারের হাল ধরতে ২০১৫ সালে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সে ফায়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন সোহেল রানা।

এদিকে পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ব্যক্তিকে হারিয়ে বিপদের মুখে পড়েছে পরিবারটি। মৃত্যু খবর পেয়ে সোহেলের বাড়িতে ভিড় করছেন স্বজনরা। চারদিকে যেন কান্নার রোল। কে কাকে সান্ত্বনা দেবে? এমন করুণ মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না কেউ।

কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার সোহেলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, কিছুতেই কান্না থামছে না সোহেল রানার মা হালিমা খাতুনের। চারদিকে কান্নার রোল।

কেরুয়ালা গ্রামের দরিদ্র কৃষক নূরুল ইসলাম ও মোসা হালিমা খাতুনের চার ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে সোহেল রানা ছিলেন সবার বড়। মাত্র তিন বছর আগে ফায়ার সার্ভিসে ফায়ারম্যান হিসেবে চাকরি নেন। সবশেষ গত ২৩ মার্চ বাড়ি এসেছিলেন সোহেল রানা। সেদিন ঢাকায় যাওয়ার সময় মাকে বলেছিলেন, ১৫ দিনের ছুটি নিয়ে শিগগিরই বাড়ি আসবেন। তবে এবার তিনি জীবন থেকেই নিলেন লম্বা ছুটি। প্রিয় সন্তানের মৃত্যু খবরে বুক চাপড়ে মাতম করছেন মা-বাবাসহ স্বজনরা।

এফ আর টাওয়ারে আগুনের ঘটনায় সোহেলসহ ২৭ জনের মৃত্যু হলো। এ ঘটনায় আহত হন অর্ধশতাধিক ব্যক্তি।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফায়ার সার্ভিস কর্মী সোহেল রানার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। সোমবার সকালে এক শোকবার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, ‘অন্যের জীবন রক্ষার্থে, নিজের জীবন উৎসর্গ করার ক্ষেত্রে সোহেল রানা এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.