অপরাধ ও ইসলাম

0

জাফরুল হাসান তারেক, ধর্ম ডেস্ক :: ইসলাম শান্তির ধর্ম হিসেবে বিশ্বে পরিচিত। তাই মানবজীবনকে আবদ্ধ করেছে সুষ্ঠু শৃঙ্খলায়। পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক সব সমস্যার সমাধান ইসলামে বিস্তারিত আলোচিত হয়েছে। সকল জ্ঞানী গুণী এক বাক্যে স্বীকার করেন ‘ইসলাম ইজ আ কম্পলিট কোড অফ লাইফ’ তথা ইসলাম একমাত্র পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। পৃথিবীর বুকে প্রথম অপরাধের সূচনা হয় আদম আঃ এর যুগে। কাবিল ও হাবিল তাঁর সন্তান। এক রমণীকে ঘিরে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত ঘটে। দ্বন্দ্বের একপর্যায়ে কাবিল হাবিলকে হত্যা করে। এ হত্যাকাণ্ডই ছিল পৃথিবীর ইতিহাসের প্রথম হত্যাকাণ্ড বা অপরাধ।

ইতিহাসবিদরা ইসলাম পূর্বযুগকে জাহেলিয়া তথা অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগ হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন।সত্যের ন্যূনতম আলোও অবশিষ্ট ছিল না। কুসংস্কারের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে হাজারো অপরাধকে নির্দ্বিধায় মেনে নিত। ন্যায়বিচার তথা মানবতা যেন অমাবস্যার চাঁদ। সদ্যোজাত কন্যা হত্যা তাদের কঠোর হৃদয়ে একটুও আঘাত হানত না। সামাজিক অবজ্ঞা আর জোরপূর্বক যৌনাচার যেন তাদের নিত্যবিনোদনের সুপেয় পানীয় । এ যৌন নিপীড়ন থেকে রক্ষা পেতো না, সুদর্শন বালক কিংবা গবাদিপশু। পাপাচার মিছিলের নির্লজ্জ ধ্বনিতে আকাশ পাতাল ভারী হয়ে উঠত। এমন এক করুণ সময়ে ইসলাম মানবমনে মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করে, আলোকিত করে সত্যের আলোয়, সমস্ত কলুষতার অবসান ঘটিয়ে উপহার দেয় নতুন এক জীবনের। হিজরতের পর প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (দ.) মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র গঠন করেন।

অপরাধ দমনে প্রণয়ন করেন ইসলামী নীতিমালা এবং সেই সাথে অপরাধীর শাস্তি বাস্তবায়নে বিচারবিভাগ চালু করেন যেটা পুরোপুরি ইনসাফের ওপর ভিত্তি করে গঠিত হয়। প্রথম প্রথম বিধর্মীরা অজ্ঞতাবশত অবজ্ঞা করলেও পরবর্তীতে ইসলামের সুন্দর ও ন্যায়সংগত নীতিমালা তাদের আকর্ষণ করে। মদীনার মুশরিক-কাফের যারা ছিল তারা তাদের বিচার নিয়ে নবীজীর কাছে চলে আসতো আর প্রিয় নবী (দ.) বিচারে কোনো পক্ষপাতিত্ব না করে সত্য ও ন্যায়ের ভিত্তিতে তাদের মামলার ফয়সালা দিতেন এবং অপরাধীকে শাস্তি দিতেন অপরাধের মাত্রা অনুয়ায়ী।

বিশ্ব মানবতার দূত ও সফল রাষ্ট্রনায়ক হজরত মোহাম্মদ (দ.) সুন্দর ও সাবলীল প্রচেষ্টায় মদীনাতে অল্প সময়ের মধ্যে অপরাধের মাত্রা কমিয়ে আনেন। পরবর্তীতে খোলাফায়ে রাশেদীনরাও আল্লাহর প্রেরিত মহাপুরুষের দেখানো পথে চলে অপরাধ দমন করতে সক্ষম হয়েছেন। ইসলাম অপরাধকে প্রশ্রয় দেয় নি। ছোটবড় সবধরণের অপরাধের জন্য রয়েছে শাস্তির বিধান।

ইসলামী শরীয়তের শাস্তির লক্ষ্য হলো জনস্বার্থ রক্ষা এবং পাঁচটি অতীব জরুরি বিষয়ের সংরক্ষণ। সে অতীব জরুরি পাঁচটি বিষয় হলো, ১. জীবন রক্ষা ২. দীন রক্ষা ৩. বিবেক-বুদ্ধির সংরক্ষণ ৪. বংশ রক্ষা ৫. সম্পদ রক্ষা উপরোক্ত পাঁচটির যে কোন একটিকে আঘাত করলে এমন কঠিন শাস্তির বিধান থাকা আবশ্যক যা অপরাধীকে তার প্রবণতা থেকে সতর্ক করবে। অথবা অপরাধের শাস্তি দেখে অন্য অপরাধীরা এ ধরনের অপরাধ সংঘটিত করার সাহস পাবে না।

এ জন্যেই ইসলামী শরীয়ত এ ধরনের দৃষ্টান্তমূলক কঠিন ও কঠোর শাস্তির বিধান দিয়েছে। তাই ইসলামী শরীয়তের শাস্তির বিধান মানুষের সার্বিক কল্যাণ প্রতিষ্ঠা ও মানুষের মাঝে ইনসাফ ও ন্যায় বিচার কায়েম করাই লক্ষ্য।

লেখক: জাফরুল হাসান তারেক

শিক্ষার্থী: অপরাধতত্ত্ব ও পুলিশ বিজ্ঞান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.