আওয়ামী লীগের মন্ত্রী ও এমপিরা শোকজ লেটার পাচ্ছেন

0

সিটি নিউজ ডেস্ক :  চলমান উপজেলা নির্বাচানে নৌকা প্রতীকের বিরোধীতাকারী আওয়ামী লীগের মন্ত্রী ও সংসদরা শোকজ লেটার পেতে যাচ্ছেন। শুক্রবার বিকালে গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সভার এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সূত্র জানায়, চলমান উপজেলা নির্বাচনে যে সব উপজেলায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের স্থানীয় সংসদ সদস্যরা প্রকাশ্যে ও গোপনে বিরোধীতা করেছেন তাদের তালিকা করা হয়েছে। খুব শিকগির তাদের কাছে কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠানো হবে। একই সাথে যারা যারা নৌকার প্রার্থীকে সমর্থন না দিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে ও তাদের সহযোগিতা করেছেন তাদের কাউকে কখানোই নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন না দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এছাড়া সভায় জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে গঠিত ৮ বিভাগীয় টিমকে তৃণমূলে গিয়ে দ্রুত কাজ করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। সংগঠনকে গতিশীল করার লক্ষ্যে তৃণমূলের কমিটিগুলোর বিষয়ে খোজ-খবর নিয়ে যেখানে যেখানে পুনর্গঠন প্রয়োজন সেখানে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

শুক্রবার বিকালে গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সভার সূচনা বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ঝড়-ঝাপটা ও নানা দুর্যোগের মধ্য দিয়েও বাংলাদেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন হঠা করেই আমেরিকা একটা সিকিউরিটি এলার্ট দিয়েছে। তিনি বলেন, ঠিক কী কারণে এই সিকিউরিটি এলার্ট জারি করা হয়েছে সেটি আমাদের জানা নেই। তাই এলার্ট জারির আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা উচিৎ। তারপরও আমরা খোঁজ-খবর নিচ্ছি কেন এই সিকিউরিটি এলার্ট।

তিনি বলেন, কিন্তু হঠাৎ করে আগুন লাগার কারণেই কী এই এলার্ট? আমেরিকা-লন্ডনেও তো আগুন লেগে অনেক মানুষ মারা যায়। সেসব দেশে তো আমাদের মতো এত সময় দিয়ে উদ্ধার অভিযানও চালানো হয় না। তাহলে কেন এই এলার্ট সেটিও জানানো উচিত। কারণ সন্ত্রাসবাদের সমস্যা সারাবিশ্বেরই। একটি ঘটনা ঘটলে তার প্রভাবও সারাবিশ্বে পড়ে। তাই আমেরিকার কাছে কোনো তথ্য থাকলে তা অতি দ্রুত কর্তৃপক্ষকে জানানো উচিত।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইন্টেলিজেন্স ও প্রশাসন অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে তাদের সহায়তায় আমরা বাংলাদেশকে জঙ্গি মুক্ত ও সন্ত্রাস মুক্ত করেছি।

আগুনের সময় উৎসুক জনতার ভিড়ের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কিছু লোক অহেতুক ভিড় করে। এদের কারণে ফায়ার সার্ভিস ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। এরা দাঁড়িয়ে থেকে সেলফি তোলে। এখানে সেলফি তোলার কী আছে বুঝলাম না। সেলফি না তুলে তারা কয়েক বালতি পানি আনলেই পারে।

তিনি বলেন, কয়েকদিন দিন আগে বহুতল ভবনে আগুন লেগেছে। বেশ কিছু লোক হতাহত হয়েছেন। যারা মারা গেছেন তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। কিছুদিন পরপরই আগুন। যদিও ছোটবেলা থেকে আমরা জানি চৈত্র-বৈশাখ মাসে আগুন লাগার প্রবণতা বেশি। একটা কথা বলব, উত্তেজিত লোক ফায়ার সার্ভিসের একটা গাড়িও ভেঙে দিয়েছে। একটি গাড়ি কিনতে ৯-১০ কোটি টাকা খরচ পড়ে। দেরি হচ্ছে কেন সেই জন্য ফায়ার সার্ভিসের লোকদের মারছে। সেটা না করে এক বালতি পানি এনে নেভানোর চেষ্টা করত তাহলে ভালো কাজ করতে।’

শেখ হাসিনা বলেন, একটা অল্প বয়সী ছেলে তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হচ্ছে। অকারণে ভিড় করে। ফায়ার সার্ভিস যেতে পারে না। ছবি তোলে, সেলফি তোলে। আগুন নেভানোর চেষ্টা করুক, উদ্ধার কাজ করুক। তা না করে সেলফি তোলে। আমি অবাক হয়ে যাই। এই ধরনের ঘটনায় কীভাবে সহায়তা করা যায়, সেটা না। পরে আমি আইজিপিকে বললাম, সবাইকে যেন আহ্বান করা হয়। তারা রাস্তা থেকে লোকজনকে যেন সরিয়ে দেয়। পরে তারা সেটা করেছে। কিছু লোক অবশ্য স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে সহায়তা করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের ঘটনায় মিডিয়ারও ভূমিকা আছে। মিডিয়া যখন সরাসরি সম্প্রচার করে তখন মানুষের আগ্রহ বেড়ে যায়। ভিড় বাড়ে। এই কারণে মিডিয়াকেও দায়িত্বশীল হতে হবে। সরকারকে দোষারোপ না করে সাধারণ মানুষকে আরো দায়িত্বশীল হতে হবে, নিজের কাজটা অন্তত করতে হবে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আরেকটা সমস্যা হলো পানির সমস্যা। যদিও ওয়াসার পানি আছে, কোনো সমস্যা হলে ওয়াসার পানি পাওয়া যায়। এই যে গুলশান লেক। এটি এখন যেমন আছে, এক সময় দ্বিগুণ ছিল। একেকজন ক্ষমতায় আছে, জিয়া ক্ষমতায় এলো, এরশাদ ক্ষমতায় এলো গুলশান লেক খল করে বাড়ি করে ফেলল। এছাড়া ঢাকায় পুকুর ছিল সেগুলো নেই। অন্তত যারা বাড়ি করছেন তাকে খেয়াল রাখতে হবে প্রত্যেকটা জায়গায় অন্তত একটা করে জলাধার যেন থাকে। নিজের ইঞ্চি ইঞ্চি জায়গা কাজে না লাগিয়ে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য অন্তত জায়গা রাখুন। নিজের লোভের জন্য সবার বিপদ ডেকে আনবেন না।

বিএনপি আমলে আওয়ামী লীগের ওপর নির্যাতনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের নামে হাজার হাজার মামলা দেওয়া হয়েছিলো। ২০০১ সালে এমন একটা অবস্থা ছিল আমরা আওয়ামী লীগ অফিসে পর্যন্ত যেতে পারতাম না। ২০০৮ সালে নির্বাচন হলো। মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দিলো। তারপর আমরা সরকার গঠন করলে অবস্থার পরিবর্তন আছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৩-১৪ আন্দোলনের নামে অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা। যেভাবে তারা নির্যাতন করেছে। বিদ্যালয়, সরকারি অফিস, বাস-ট্রাক পুড়িয়ে দিয়েছে। মানুষ পুড়িয়ে পুড়িয়ে মেরেছে। এই হলো বিএনপির অপকর্ম। এসব অপকর্মে যারা জড়িত ছিল, বিশেষ করে অগ্নি সন্ত্রাসের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল তাদের বিরুদ্ধে তো মামলা হবেই। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে মামলা, সেটা তার পছন্দের লোকদের হাতেই হয়েছে।

বিএনপির বিরুদ্ধে একটা মিথ্যা মামলাও করা হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ২০১৩-১৪ সালে বিএনপি আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে হাজার হাজার গাড়ি পুড়িয়েছে, শত শত মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে। তারেকের অপকর্মের কারণেই মামলা হয়েছে, একটি মিথ্যা মামলাও দেয়া হয়নি। বিএনপির অপকর্মের কারণেই জনগণ তাদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অথচ ২০০১ সালে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছিল যে আমরা আওয়ামী লীগের অফিসেও যেতে পারতাম না। নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছিল। নেতাকর্মীরা কেউ বাসায় থাকতে পারতো না। আমাদের এমপিদের, নেতাকর্মীদের হত্যা করা হয়েছে, হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হাড় গুড়ো করে দেয়া হয়েছে, অপারেশন ক্লিন হার্টের নামে নেতাকর্মীদের হত্যা করা হয়েছে। সরকারের বাইরে হাওয়া ভবন ছিল বিএনপির সকল অপকর্মের মূল বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

রাজনীতি অর্থনীতি সবদিক থেকেই দেশে বিশৃঙ্খল অবস্থা ছিল সে অবস্থা থেকে দেশে শান্তি ফিরিয়েছি। পরিকল্পিত কাজ করে জনগণের আস্থা এবং বিশ্বাস অর্জন করেছি। সেই আস্থা আর বিশ্বাস থেকেই আওয়ামী লীগ এবারও সরকার গঠন করেছে বলে জানিয়েছেন দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, জনগণ উন্নয়ন চায়। শান্তি চায়। সুন্দরভাবে বাঁচতে চায়। আমরা দেশে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছি।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.