ইস্পাত হাব হবে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে

0

অর্থ ও বাণিজ্য, সিটি নিউজ :: চট্টগ্রামের মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলকে ঘিরে ইস্পাতশিল্পে প্রায় ৬ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার বা ৫৩ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাবনা অনুমোদন করেছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা)। এই বিনিয়োগে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল থেকেই বছরে উৎপাদিত প্রায় ৫৫ লাখ টন ইস্পাত পণ্য, যা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হবে। তবে বেজার তথ্য মতে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে ইস্পাতশিল্পের বিনিয়োগ আরো বাড়বে।

বেজা সুত্রে জানা গেছে, মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘিরে এরই মধ্যে প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাবনা অনুমোদন পেয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি এসেছে ইস্পাত খাতে। আর সবচেয়ে বড় চুক্তিটি হয়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী পিএইচপি ফ্যামিলির সঙ্গে। গত ৫ আগস্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থা বেজার সঙ্গে ৪০০ কোটি ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৩ হাজার ৬০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ চুক্তি করেছে পিএইচপি গ্রুপ। এর মধ্যে ১২০ কোটি ডলার আসবে বিদেশি বিনিয়োগ হিসেবে। বাকি ২৮০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে পিএইচপি।

পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তাদের অনুকূলে ৫০০ একরের বেশি জমি দীর্ঘ মেয়াদে লিজ দেওয়া হয়েছে। ৫০০ একর জমির ৪৪০ একরজুড়ে হবে ইস্পাত কারখানা। প্রথম ধাপে ১০ লাখ টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও চতুর্থ বছরে ১৫ এবং পঞ্চম বছর থেকে ৩০ লাখ ইস্পাত উৎপাদন করা হবে এই কারখানা থেকে। বিনিয়োগ প্রস্তাবনায় দেড় হাজার কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বছরে ৫০ কোটি ডলার বা চার হাজার ২০০ কোটি টাকার ইস্পাত পণ্য রপ্তানির পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে পিএইচপি গ্রুপ।

পিএইচপি সূত্রে জানা গেছে, ইস্পাত কমপ্লেক্সের মধ্যে পাইপ তৈরি, টিউব তৈরি, মেটাল পণ্য, যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ, স্ট্রাকচারাল ফ্যাব্রিকেশন, গাড়ির ইস্পাত কাঠামো, রেলওয়ের বগি, ইস্পাত ফার্নিচার, অফিস ইকুইপমেন্ট, স্পাইরাল ওয়েল্ডেড পাইপসহ বিভিন্ন ধরনের ইস্পাতের পণ্য তৈরি করা হবে। আমদানি করা আয়রন ওর ও স্টিল স্ক্র্যাপসহ বিভিন্ন কাঁচামাল প্রক্রিয়া করে হট রোল কয়েল ও কোল্ড রোল কয়েল তৈরি করা হবে।

এ প্রসঙ্গে পিএইচপি ফ্যামিলির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহসিন বলেন, আমাদের জন্য বরাদ্দকৃত জমিটি পেতে আরো তিন-চার বছর লেগে যাবে। জমি পাওয়ার তিন বছরের মধ্যে আমরা কারখানা স্থাপন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে উৎপাদনে যাব। এখানে মূলত কম্পোজিট ইস্পাত কারখানা করা হবে। যেখানে সরাসরি আকরিক লৌহ এনে গলিয়ে ইস্পাত বানানো হবে।

তখন দেশীয় কারখানাগুলোও লং প্রডাক্ট, বিলেট পিএইচপি থেকেই কিনবে। তবে পিএইচপি ইস্পাত কারখানা স্থাপনের আরেকটি উদ্দেশ্য হচ্ছে রপ্তানি। এ ক্ষেত্রে ভারতের ‘সেভেন সিস্টার্স’ প্রথম লক্ষ্য। আমাদের প্রথম লক্ষ্যই হচ্ছে ভারতের সেভেন সিস্টার্সে ইস্পাত রপ্তানি। এ ছাড়া নেপাল, ভুটান, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার ও আফ্রিকা মহাদেশে ইস্পাতপণ্য রপ্তানির পরিকল্পনা আছে।

এদিকে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান কুনমিং আয়রন অ্যান্ড স্টিল কম্পানি লিমিটেড বাংলাদেশের ইস্পাতশিল্পে ২৩০ কোটি ইউএস ডলার বিনিয়োগ করবে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা। এ অর্থ ব্যয়ে তারা বছরে ২০ লাখ টন উৎপাদনক্ষমতার একটি স্টিল মিল প্রতিষ্ঠা করবে। এ জন্য বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) চট্টগ্রামের মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে কুনমিং স্টিলকে প্রায় এক হাজার একর জমি ইজারা দিয়েছে।

কুনমিং স্টিলের এ বিনিয়োগে বাংলাদেশি অংশীদার হিসেবে থাকছে ১৭টি কম্পানির জোট স্টার কনসোর্টিয়াম। এ কনসোর্টিয়ামের চেয়ারম্যান নিটল-নিলয় গ্রুপের আবদুল মাতলুব আহমাদ।

এ ছাড়া এ কনসোর্টিয়ামের পরিচালক হিসেবে রয়েছেন, বিএসআরএম গ্রুপ অব কম্পানিজের আলীহোসেন আকবরআলী, ইউনিক গ্রুপের মোহাম্মদ নূর আলী, মিডকোবিডির আশরাফুল হক চৌধুরী, পেডরোলো এন কে লিমিটেডের মোহাম্মদ নাদের খান, এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেডের নুরুল আকতার, ইমপ্রেস গ্রুপের জহিরুদ্দিন মাহমুদ, জিপিএইচ গ্রুপের জাহাঙ্গীর আলম, ইনোভেঞ্চার প্রাইভেট লিমিটেডের চৌধুরী নাফিজ সরাফত, এম আলম গ্রুপের মাহবুবুল আলম, দেশ এনার্জির নাভিদুল হক প্রমুখ।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.