কাবিখা প্রকল্প আত্মসোৎলিপ্ত রয়েছে উপজেলার চেয়ারম্যানগণ

0

কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) হলেও জেলার পানছড়িতে সেই খাদ্যশস্য যাচ্ছে প্রকল্প চেয়ারম্যানদের পকেটে। এভাবেই ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে ত্রাণ ও দুর্যোগ পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ করা (প্রথম পর্যায়) ২৪০ টন খাদ্যশস্য হরিলুটের অভিযোগ পাওয়া গেছে।অভিযোগ রয়েছে, সাধারণ টিআর (টেস্ট রিলিফ) ও কাবিখা প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়ন ও সোলার প্যানেল স্থাপনে এসব বরাদ্দ দেয়া হলেও সরকার দলীয় প্রকল্প চেয়ারম্যান ও উপজেলা ত্রাণ শাখার কর্মকর্তাদের যোগসাজসে এসব বরাদ্দ আত্মসাৎ করা হয়েছে।
শুধু তাই নয়, স্থানীয় সংসদ সদস্যের (এমপি) সুপারিশ করা কাবিখার আওতায় জনগুরুত্বপূর্ণ চারটি প্রকল্পের কাজও হয়নি। এসব প্রকল্পের বিপরীতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা নিজেদের সুবিধাজনক স্থানে কাজ দেখিয়ে খাদ্যশস্য আত্মসাৎ করেছেন।

পানছড়ি ত্রাণ শাখার সূত্রমতে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রথম পর্যায়ে ২৩৯ দশমিক ৮৯ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেয়া হয়। এর মধ্যে সাধারণ টিআরের আওতায় ৭৮ দশমিক ৩০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয় ৩২টি প্রকল্পের বিভিন্ন মসজিদ, মন্দির, মাদরাসা, স্যানিটেশন ও সোলার প্যানেলের জন্য। কাবিখার আওতায় ৯৭ দশমিক ৫৯ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয় ৯টি প্রকল্পে গ্রামীণ সড়ক উন্নয়ন ও সোলার প্যানেল স্থাপনের জন্য। এমপির টিআর বরাদ্দের ২৯ মেট্রিক টন চালের বিপরীতে ১৫টি প্রকল্প ও কাবিখার ৩৫ মেট্রিক টন চালের বিপরীতে ৪টি প্রকল্প দেয়া হয়। কিন্তু এমপিরা জাতীয় সংসদের মনোগ্রামযুক্ত পত্রে জনগুরুত্বপূর্ণ যেসব প্রকল্পের জন্য সুপারিশ করেছিলেন তা প্রকল্পে আওতাভূক্ত না করে আরেকটি কাগজে অন্য ৪টি প্রকল্প অন্তর্ভূক্ত করেন।

পানছড়ি উপজেলার আলিনগর এলাকার, এমপির বরাত দিয়ে (দ্বিতীয় ডিও) বরাদ্দ করা প্রকল্পে হাসিম উদ্দিনের বাড়ির পাশের ইট সোলিং রাস্ত হতে ওমরপুর আব্দুল হামিদের বাড়ি হয়ে আব্দুল আউয়াল মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা (গ্রামীণ সড়ক) সংস্কারের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। ওই প্রকল্পে শুধুমাত্র উপজেলা পরিষদ মসজিদে সোলার প্যানেলের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এরকম অবস্থা প্রায় সবকটি প্রকল্পেরই। প্রকল্পগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র সোলার প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে তার বাইরে রাস্তার কোনো কাজই হয়নি। কাজ না করেই উপজেলা ত্রাণ শাখার কর্তাব্যক্তিদের ম্যানেজ করে খাদ্যশস্য নিয়ে গেছে প্রকল্প চেয়ারম্যানরা।

খাগড়াছড়ি জেলা সদরের এক চাল ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে জানান, সরকার যদি প্রকল্পগুলোর সঠিক সম্ভাব্যতা যাচাই করে নির্দিষ্ট পরিমাণ বরাদ্দ দিত তা হলে এমন হতো না। কারণ প্রকল্প চেয়ারম্যানরা যে পরিমাণ বরাদ্দ পায় তা দিয়ে অফিস ম্যানেজ ও দলীয় শীর্ষ নেতাদের মনোরঞ্জন করার পর কাজ করার মতো অবশিষ্ট থাকে না। যার ফলে এ রকম অনিয়ম হচ্ছে।

এবিষয়ে জানতে পানছড়ি উপজেলা ত্রাণ শাখায় গিয়ে কোনো কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। মাসুদ নামে এক কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে প্রকল্প চেয়ারম্যানদের মুঠোফোন নাম্বার চেয়েও পাওয়া যায়নি।

পানছড়ি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) দায়িত্ব পালন করছেন সদর উপজেলার পিআইও (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আশেকুর রহমান। এবিষয়ে তার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি মুঠোফোনে বলেন, সরকার দলীয় প্রকল্প চেয়ারম্যান হওয়ায় শতভাগ কাজ আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। আমাকে সদরের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয় তাই মাত্র সপ্তাহে একদিন পানছড়ি উপজেলার কাজ দেখতে পারি। আর স্থানীয় সংসদ সদস্যের জন্য বরাদ্দ করা কাবিখার জন্য তিনি দুটি ডিও লেটার (সুপারিশ) দিয়েছিলেন। প্রথম ডিওটি ছিল উনার স্বাক্ষরিত জাতীয় সংসদের প্যাডে এবং দ্বিতীয়টি ছিল নরমাল কাগজে।

খাগড়াছড়ির এমপি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার কাছে কাবিখার ডিও লেটার সম্পর্কে জানতে রোববার খাগড়াছড়ি সদরের সংসদ সদস্যের বাসভবনে গিয়ে তার সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে পানছড়ি উপজেলায় প্রথম পর্যায়ের ২৩৯ দশমিক ৮৯ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। এসব বরাদ্দের সঠিক কাজ না হয়ে ভাগভাটোয়া করেছে দলীয় ও ত্রাণ শাখার কর্তা ব্যক্তিরা। এর মধ্যে মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তায় দ্বিতীয় পর্যায়ের জন্য টিআর ও কাবিখার খাদ্যশস্য বরাদ্দ এসেছে। প্রকল্পের সম্ভাব্যতা ও বণ্টনের জন্য প্রস্তুতি চলছে বলেও জানিয়েছে দাপ্তরিক সূত্র।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.