কুমিরা-গুপ্তছড়া সন্দ্বীপের নৌ-পথ কখন নিরাপদ হবে?

0

কেফায়েতুল্লাহ কায়সার : বাংলাদেশের ৪৯২টি উপজেলার মধ্যে তিনহাজার বছরের ইতিহাস ঐতিহ্যে ভরা অন্যতম উপজেলা সন্দ্বীপ। এটি চট্টগ্রামের একটি দ্বীপ উপজেলা হলেও বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্যে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। হাজার বছরের পুরোনো মূল ভূ-খন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপের রয়েছে বিস্তৃত ইতিহাস।

শিক্ষা, শিল্প-বানিজ্য, বৈদেশিক মুদ্রা ও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রেও দ্বীপ সন্তানদের রয়েছে নানা অবদান। ঐতিহ্যে ভরা সন্দ্বীপে জন্মেছেন সপ্তদশ শতকের বাংলা সাহিত্যের মহাকবি কবি আবদুল হাকিম, সর্ব ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা কমরেড মোজাফ্ফর আহমদ, বিপ্লবী লাল মোহন সেন সহ আরো অনেক সুর্য সন্তান।

মিডলইস্ট সহ ইউরোপ-আমেরিকাতে বাংলাদেশের পক্ষে শ্রমবাজারের নেতৃত্বে এই দ্বীপকেই বলা চলে। একটি পরিসখ্যানে জানা জানা যায়, শুধু আমেরিকাতে গ্রীনকার্ড নিয়ে বসবাস করছেন লক্ষাধিক সন্দ্বীপবাসী।

বাংলাদেশর ৪৯২ টি উপজেলার মধ্যে শুধু সন্দ্বীপ উপজেলার মানুষদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের শতকরা ১১ ভাগ। অর্থাৎ দেশের মোট দশ ভাগের এক ভাগেরও বেশি রেমিট্যান্স আসে সন্দ্বীপীদের মাধ্যমে। যা বাংলাদেশের উন্নয়নে দারুন ভূমিকা রাখছে। অথচ সেখানে সন্দ্বীপ আজও অনুন্নত। তিনহাজার বছরের এই দ্বীপে এখনো কোন সরকার নিরাপদ নৌ-রুটের ব্যবস্থা করেনি।

স্বাধীনতার ৪৭ বছর পার করেছে বাংলাদেশ। সমৃদ্ধ হচ্ছে দেশ। বিশ্বের দরবারে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশ। ইতিমধ্যে অর্জন করেছে উন্নয়নশীল দেশের সনদ।

অথচ উন্নত হয়নি সন্দ্বীপের নৌ-যাতায়াত। নিরাপদ নৌ-রুট আর নৌ-যানের অভাবে সাগরে ডুবে শলীল সমাধি হচ্ছে দ্বীপের মানুষের। দায়সারাভাবে পরিচালিত হচ্ছে এই নৌ-রুট। লক্কর-ঝক্কর, ঝুঁকিপূর্ণ, আনফিট ও মরণফাঁদ জাহাজ দিয়ে পরিচালিত হয়েছে এই নৌ রুট দীর্ঘদিন। তাও আবার গত সাত মাস নেই কোন জাহাজ। এতদিন জুনের আগে নতুন জাহাজ আসার কথা শুনা গেলেও বিআইডব্লিউটিসির ডিজিএম গোপাল চন্দ্র মজুমদার জানালেন ভিন্ন কথা। নতুন জাহাজ তো নয় বরং আনফিট, ঝুঁকিপূর্ণ এল সিটি কাজল আসবে বর্ষার আগে।
এদিকে নিরাপদ নৌ-যানের অভাবে ও ঝুকিপূর্ণ ওঠা-নামার কারণে সাগরে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটছে বারবার।

১৯৫৬ সালের ২রা জুনের বাদুরা জাহাজ থেকে শুরু করে ২রা এপ্রিল ২০১৭ মোট ৫৯ বছরে দফায় দফায় নৌ-দুর্ঘটনা হয়েছে।
কিন্তু আজও সরকারী সংস্লিষ্ট কোন সংস্থা নিরাপদ নৌ-রুটের কোন প্রকার কোন উদ্যোগ নেয়নি। সরকারী তিন সংস্থা, বিআইডব্লিউটিসি, বিআইডব্লিউটিএ ও জেলা পরিষদ শুধু এই নৌ-পথ থেকে সন্দ্বীপবাসীর নিকট থেকে টোল আদায় নিয়ে ব্যস্ত। সেবা বৃদ্ধি, নিরাপদ নৌ-পথ, নিরাপদ নৌ-যান ও নিরাপদ ওঠা-নামা নিয়ে আদৌ সংস্থাগুলোর কোন কার্যক্রম পরিলক্ষিত হচ্ছেনা।

২রা ২০১৭ এর পর ভাসমান জেটি ও নতুন জাহাজের দাবী উঠেছিল বার বার। ১৮ টি তাজা প্রাণের মত দুর্ঘটনা ঘটলেও আজ পর্যন্ত সরকার তথা সংস্থাগুলো এই নৌ পথ নিয়ে কোন কাজ বা কোন উদ্যোগ নেয়নি।

ভাসমান জেটি নিয়ে জেলা পরিষদ এর সচিব বললেন পুপ্তছড়ায় ভাসমান জেটি টিকবেনা তাই তারা স্থায়ী জেটির চিন্তা করছেন। তবে তা কখন কিভাবে হবে তা নিয়ে তিনি স্পষ্ট বলেননি।

আসছে বর্ষা। নতুন জাহাজ আসেনি। আসবে আনফিট কাজল। এভাবে আর কতদিন ঝুঁকিপূর্ণ থাকবে সন্দ্বীপ নৌ-পথ। কখন নিরাপদ হবে এই নৌ-রুট। সন্দ্বীপবাসীর এসব দুঃখ কষ্ট আর মেনে নেয়া য়ায়না।

টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে প্রতিদিন ৮টি জাহাজ চলা চল করে। অথচ সন্দ্বীপরে ৪ লক্ষ মানুষের জন্য একটি জাহাজও নেই।
সন্দ্বীপবাসী ফুঁসে উঠছে। বর্ষার আগে সরকারকে বিদেশ থেকে কিনে হলেও যে কোন মূলে নতুন জাহাজ কুমিরা-গুপ্তছড়ায় দিতে হবে। নৌ-পথে নতুন আধুনিক নিরপাদ জাহাজ দিয়ে সন্দ্বীপবাসীর যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে হবে।

সরকারের তিন সংস্থাকে একটু সন্দ্বীপবাসীর কষ্টটা বুঝতে হবে। সন্দ্বীপবাসীর হৃদয়ের আকুতিটা অনুধাবন করার চেষ্টা করতে হবে। সন্দ্বীপবাসীর দাবী ও মনের ভাষাটা এখনই আমলে নিতে হবে।

অনিরাপদ নৌ-পথ আর কতদিন মেনে নিবে এই দ্বীপের মানুষ। আর কত দ্বীপের সন্তান মর্মান্তিকভাবে ডুবে মরবে সাগরে।

গত ২৩ এপ্রিল সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাটে দেখা যায় একজন মা তার নবজাতক অসুস্থ শিশুর গায়ে স্যালাইন লাগানো সন্তানকে কুলে নিয়ে কাদা মাড়িয়ে নিজের ও সন্তানের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্পীডবোটে ওঠার চেষ্টা করছেন। এভাবে এসব দুঃখ কষ্ট আর কতদিন।  ভাসমান জেটি ও নতুন জাহাজ বর্ষার আগে সন্দ্বীপবাসীর প্রাণের দাবী।

এ দিকে ঘাটকে একজন ইজারা প্রথা থেকে সরে আসতে হবে জেলা পরিষদকে। ঘাট ইজারা উন্মুক্ত করে একাধিক ব্যক্তিকে নিরাপদ নৌ-যান পরিচালনার অনুমতি দিতে হবে। এর ফলে বেশ কিছু আধুনিক নিরাপদ নৌ-যান পরিচালনার সুযোগ পাবে অনেকে। সাথে সাথে এই রুটে একাধিক ব্যক্তির মালিকানায় একাধিক নৌ-যান পরিচালনার সুযযোগ হয়ে যাবে। এতে যাত্রীরাও উন্নত সেবা পাবে। আর নৌ যাতায়াতও হতে পারে নিরাপদ।

লেখক- কেফায়েতুল্লাহ কায়সার
নির্বাহী সম্পাদক, সাপ্তাহিক উপনগর
প্রিন্সিপাল, ন্যাশনাল গ্রামার স্কুল
এ-ব্লক, হালিশহর, চট্টগ্রাম।
০১৭১৬ ১০০৩৮৬
তারিখ: ২৯.০৪.২০১৮

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.