গণিতের কারনে পাশের হার কমেছে

0

সিটি নিউজঃ এবার এসএসসিতে গণিতের কঠিন প্রশ্নের কারনে পাশের হার কমেছে। এবার বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে ২০১৯ সালের পরিবর্তে ২০১৮ সালের সিলেবাস অনুযায়ী প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। এতে অনেক শিক্ষার্থী পড়েছে বিপাকে। সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্তরা এসব পরীক্ষার মূল্যায়ন করার আশ্বাস দেওয়া হলেও বাস্তবে প্রতিফলন হয়নি। এ নিয়ে ভূক্তভোগী পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এসএসসি ও সমমানের রেজাল্ট বেরিয়েছে গতকাল।

এতে পাসের হার বাড়লেও আশানুরূপ ফল পাননি বলে অনেক শিক্ষার্থীরই মন খারাপ হয়েছে। আর এজন্যে তারা দায়ি করেছে গণিতের কঠিন প্রশ্নকে। পরীক্ষার ফল যাচাই করে দেখা গেছে মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার ছাত্রছাত্রীদের ফলাফল সবচেয়ে বেশি খারাপ হয়েছে। অঙ্কের ফল না মেলাকেই দায়ী করেছে শিক্ষার্থীরা। আর এই খারাপের কারণেই পুরো পাসের হার ও জিপিএ গণনায়ও পিছিয়ে পড়েছেন অনেকে। এবার গণিতের প্রশ্নপত্র খুব কঠিন করা হয়েছে বলে অনেক পরীক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন।

ফলের দিক দিয়ে পিছিয়ে পরা সিলেট শিক্ষা বোর্ডের প্রায় ২৫ শতাংশ পরীক্ষার্থীই ফেল করেছে গণিতে। এই বিষয়েই বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের ১৯ ভাগ, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ১৫ ভাগ, চট্টগ্রাম বোর্ডের ১৪ ভাগ ও দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের ১৩ ভাগ ছাত্রছাত্রী ফেল করেছে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে সারাদেশেই গণিতে পড়ানোর মত ভাল ও দক্ষ শিক্ষকের অভাব রয়েছে।

এদিকে জিপিএ নির্ধারণে চতুর্থ বিষয়ের নম্বর যোগ না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের অনেকেই কাঙ্ক্ষিত ফল পেতে ব্যর্থ হয়েছে বলে জানা গেছে।

মাধ্যমিকের ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে গতবারের চেয়ে এবছর পাসের হার সাড়ে চার শতাংশ বাড়লেও সর্বোচ্চ ফল জিপিএ ৫ প্রাপ্তিতে ধস নেমেছে। সারাদেশের জিপিএ ৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী কমেছে পাঁচ হাজার ৩৫ জন। ছয় বছরের মধ্যে এবারই প্রথম আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের জিপিএ ৫ প্রাপ্তি লাখের নিচে নেমে এসেছে। কেবল ঢাকা শিক্ষা বোর্ডেই গত বছরের চেয়ে এ বছর জিপিএ ৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী কমেছে ১১ হাজার ৮৯৮ জন।

এসএসসি ও সমমানে সারাদেশে ফেল করেছে তিন লাখ ৭৮ হাজার ৬৫০ জন। বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ফেল করার মূল কারণ, গণিতের ফল খারাপ। এসব কিশোর-কিশোরীর মধ্যে প্রায় দুই লাখই মানবিক বিভাগের। প্রতিটি বোর্ডেই গণিতে ফল খারাপ করেছে মূলত মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষার ছাত্রছাত্রীরা যথাক্রমে ৯৪.৭২ ও ৮৩.০৩ ভাগ পাস করলেও মানবিকে তা মাত্র ৭৪.৩২ ভাগ। এর ফলে মানবিক বিভাগের ফল বিপর্যয় ঘটেছে। যার ধাক্কা লেগেছে সার্বিক পাসের হারে।

এ বছর মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্য ছাত্রছাত্রীরা কড়াকড়ির কারণে বোর্ড পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। এ রকম ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা সাড়ে পাঁচ লাখ। পর্যবেক্ষকদের মতে, এরা কোনোভাবে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারলে অকৃতকার্যের হার আরও বাড়ত।

ফল বিশ্নেষণে দেখা গেছে, এবার সাধারণ আটটি শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরিতে পাসের হার গতবারের চেয়ে চার দশমিক ৪৩ ভাগ বেড়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে গণিতের ফল ভালো হওয়ায় সেখানে এবার পাসের হার বেড়েছে ১২.১৪ শতাংশ।

শিক্ষকরা বলছেন, ইংরেজির প্রশ্ন ‘ভালো’ হওয়ায় সারাদেশেই এবার এ বিষয়ের ফল ইতিবাচক হয়েছে। তবে অংকে তুলনামূলক কঠিন প্রশ্ন হওয়ায় ফলে বিপর্যয় ঘটেছে।

তারা বলেন, গ্রামের স্কুলগুলোতে অভিভাবকদের অসচেতনতার কারনে শিক্ষার্থীরা মনোযোগ কম দিচ্ছে। স্কুলগুলোতে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। এক বিষয়ের শিক্ষক ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে ক্লাস নেন। শিক্ষক কম থাকায় একটা গ্যাপ থেকে যায়। ফলে আলটিমেট ফলে একটা বিপর্যয় বরাবরই দেখা যায়।

তবে শিক্ষা বোর্ডের কর্তারা বলছেন শহরের চেয়ে গ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেই ফেলের হার বেশি। শহরাঞ্চলে বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থী বেশি। তৃণমূল পর্যায়ে যোগ্য শিক্ষকের সংকট রয়েছে।

 

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.