ছত্রভঙ্গ দলের ভিত্তি মজবুত করতে চান খালেদা

তিন সিটি নির্বাচনের ইস্যু হাতে থাকলেও এই মুহূর্তে আন্দোলনের চেয়ে ‘ছত্রভঙ্গ দল’ গোছানো এবং বিভিন্ন মামলায় কারাগারে আটক নেতাদের ছাড়িয়ে আনাকে প্রাধান্য দিচ্ছে বিএনপির হাইকমান্ড। ফলে নেতাদের মুক্তি, গত তিন মাসে ঘর-বাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে যাওয়া নেতা-কর্মীদের ঘরে ফেরা না পর্যন্ত নয়া কর্মসূচি আসছে না। দলের স্থায়ী কমিটির একাধিক সিনিয়র নেতার মতে, দলের বর্তমান কাঠামো আন্দোলনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি। দলের ভেতর বাইরের অনেকেই তাদের মূল্যায়নে বলেছেন, সিটি নির্বাচনে মহানগরী কমিটির সাংগঠনিক দুর্বলতা ছিল চোখে পড়ার মতো। ৫ জানুয়ারির ভোট ঠেকানোর আন্দোলনে সাদেক হোসেন খোকার নেতৃত্বাধীন আহ্বায়ক কমিটি ব্যর্থ হয়েছে। আর এবার ব্যর্থ হয়েছে মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বাধীন আহ্বায়ক কমিটি। এখন দলকে ঢেলে সাজানোর প্রয়োজনীয়তা বোধ করছেন চেয়ারপারসন।

 

দলের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা বলছেন, সামনে মাহে রমজান-ঈদ, ভরা বর্ষা মৌসুম। এর মধ্যবর্তী সময়ে আন্দোলন চাঙ্গা করা কঠিন। তাই আন্দোলনে যাওয়ার আগে দল গোছানোর পরামর্শ দিচ্ছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। তারা জানান, এই মুহূর্তে আন্দোলনে না নামলেও কূটনৈতিক তত্পরতা অব্যাহত রাখবে বিএনপি। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে নির্বাচন কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট, সংঘর্ষ ও নানা অনিয়মের ভিডিও ফুটেজ ও স্টিল ছবি সংগ্রহ করেছে দলটি। নির্বাচনে সরকারি দলের হস্তক্ষেপ এবং নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাসহ সার্বিক বিষয়ে প্রামাণ্য ব্রিফিং তৈরি করছে বিএনপি।  এগুলো বিদেশি রাষ্ট্র ও দূতাবাসগুলোকে সরবরাহ করা হবে।

 

একজন দায়িত্বশীল নেতা জানান, দলের প্রাথমিক মূল্যায়ন হলো—সরকারের ‘মারমুখী’ আচরণের কারণে আন্দোলনে মাঠে থাকতে পারেনি নেতা-কর্মীরা। তবে দল যে অগোছালো তাও একটি বড় কারণ। বিশেষ করে ঢাকার নেতৃত্ব নিয়ে নানাদিক থেকে অব্যাহত সমালোচনা চেয়ারপারসনের কানে আসছে। আহ্বায়ক কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি না করেই আন্দোলনে নামতে হয়েছে। অধিকাংশ থানা-ওয়ার্ড কমিটিও করা হয়নি। আত্মগোপনে থাকা নেতারা যোগাযোগ ছিন্ন করেছেন মাঠ নেতাদের সঙ্গে। কে দায়িত্ব নিয়ে আন্দোলন করবে সেই পরিস্থিতি ছিল না। জেলাগুলোতে সাবেক এমপি-মন্ত্রীরা সভাপতির পদগুলো ‘দখল’ করে আছেন। আন্দোলনের তিন মাস তাদের অস্তিত্ব খুঁজে পাননি কর্মীরা।

 

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, দলের সক্রিয় নেতা-কর্মীরা গ্রেফতার আতঙ্কে বাসা-বাড়িতে ফিরছেন না। তাদের নামে একাধিক মামলা। আবারো মামলার আতঙ্ক। আত্মগোপনে থাকা নেতাদের ঘরে ফেরাতে তাদের জন্য আইনি লড়াই চালানোর বিষয়টিও দলের কাছে মুখ্য বিষয় হিসেবে দেখা দিয়েছে।  এদিকে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ অনেক নেতাই এখন কারাগারে। তাদের কারামুক্ত করতে জোরদার আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে বেগম খালেদা জিয়া দলের সিনিয়র আইনজীবীদের নির্দেশ দিয়েছেন।

 

মাহবুবুর রহমান বলেন, দল কী করবে তা চূড়ান্ত করতে শিগগিরই বিএনপি ও জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে খালেদা জিয়া বৈঠক করবেন। তিনি বলেন, আন্দোলনে সাংগঠনিক সক্ষমতা বা দুর্বলতার প্রভাব থাকেই। তবে গণতান্ত্রিক আচরণ করা হচ্ছে না। মাঠে নামলেই গুলি, আটক করে গুম-খুন করা হচ্ছে। গণতন্ত্রের ইতিহাসে এটা বিরল। মূলত সরকারের অগণতান্ত্রিক আচরণে বিএনপি খারাপ অবস্থায় পড়েছে। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই চেয়ারপারসন সব দিক দেখে নিয়ে ভেবেচিন্তে অগ্রসর হবেন।

 

স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ বলেন, দলকে আরো সুসংগঠিত করা হবে। দল গোছানোর সঙ্গে আন্দোলনও চলবে। পরিস্থিতি মূল্যায়ন চলছে। পরবর্তী পদক্ষেপ শিগগিরই জানানো হবে। তবে কীভাবে দল অগ্রসর হবে তা দলীয় ফোরামে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি বলেন, সিটি নির্বাচনে যাওয়ায় বিএনপির লাভ হয়েছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে না যাওয়া ভুল ছিল এ কথা যারা বলেন তারা জবাব পেয়েছেন।  হান্নান শাহ বলেন, আমরা হাতেনাতে প্রমাণ করেছি যে, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সম্ভব না।

 

এ বিভাগের আরও খবর

Comments are closed.