জসনে জুলুস মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের প্রতীক

0

সিটি নিউজ,চট্টগ্রাম :  দরবারে সিরিকোটের শাহজাদা, হযরত সৈয়্যদ মুহাম্মদ হামেদ শাহ্ (মাজিআ)’র নেতৃত্বে, আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট’র ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিত চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জসনে জুলুসে গত বুধবার লাখো লাখো ধর্মপ্রাণ মুসলমানের ঢল নেমেছিল।

চট্টগ্রাম শহরটি যেন জনস্রোতে ভাসছিল। রাসুলে পাক (দ)’র এই ধরার বুকে শুভাগমন দিবস ১২ রবিউল আউয়াল-পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ) উপলক্ষে আয়োজিত, এবারের জসনে জুলুস ছিল আনজুমান ট্রাস্ট’র ৪৭তম আয়োজন। ১৯৭৪ সন মুতাবেক, ১৩৯৪ হিজরি’র ১২ রবিউল আউয়াল তারিখে, গাউসে জামান তৈয়্যব শাহ্ (র)’র নির্দেশ ও রূপরেখা অনুসরনে সর্বপ্রথম চট্টগ্রামে শুরু হয়েছিল এ জসনে জুলুস সংস্কৃতি।

সে থেকে এর জনপ্রিয়তা বছর বছর যেন জ্যামিতিক হারে বাড়তে বাড়তে তা আজ বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় ইসলামি কালচার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেশের এই প্রথম জুলুসটির অনুপ্রেরণায় আজ বাংলাদেশের ঢাকা সহ প্রায় সব নগর-বন্দর-গ্রামে হাজার হাজার জসনে জুলুসের জন্ম হয়েছে। বিশেষ করে, মাত্র কয়েক হাজার মানুষ দিয়ে শুরু করা জুলুসে এ বছর অন্তত ৪০-৫০ লাখ মানুষের সমাগম হয়েছে বলে সচেতন মহলের ধারনা। এই জুলুস এখন চট্টগ্রামের সেরা ধর্মীয় উৎসবে রূপ নিয়েছে। এর সাথে জড়িয়ে পড়েছে চট্টগ্রামের কোটি মানুষ।

জসনে জুলুসকে কেন্দ্র করে এখানকার মানুষের সহযোগিতা ও স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহন চোখে পড়ার মত। তাঁরা জুলুসে অংশগ্রহণকারীদের জন্য কেউ শুকনা খাবার, কেউ শরবত, কেউ চকলেট, কেউবা বিরানির প্যাকেট বিতরণ করে আনন্দ পাচ্ছে। বিশেষত, চট্টগ্রাম জামেয়া ময়দানের এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ঘরে ঘরে চলেছে মেহমানদারি, স্বতস্ফূর্ত আয়োজন হয়েছে হাজার হাজার মানুষের দুপুরের তবারুকের, এবং নিজ নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় তারা স্বউদ্যোগে করেছে জোহরের নামাজের ব্যবস্থা। চট্টগ্রাম এক উৎসবের নগরী হয়ে উঠেছিল ১২ রবিউল আউয়ালের জুলুসকে উপলক্ষ করে।

সবার মুখে এক কথা, ‘সকল ঈদের সেরা ঈদ-ঈদে মিলাদুন্নবী (দ)’। সকাল ৯ টায় চট্টগ্রাম ষোলশহরস্থ আলমগীর খানকাহ্ শরিফ থেকে জুলুসটি বের হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কসমূহ প্রদক্ষিণ করে জোহরের আগে আগে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসা ময়দানে ফিরে আসে। ঈদে মিলাদুন্নবী (দ)’র তাৎপর্য ও গুরুত্ব আলোচনা করতে গিয়ে বক্তাগণ বলেন, যাঁকে সৃষ্টি না করা হলে কিছুই সৃষ্টি হতোনা, আল্লাহর সেই সর্বশ্রেষ্ঠ অনুগ্রহ এবং নেয়ামত লাভের শোকরিয়া হিসেবে আজ আমরা যে শরিয়ত সম্মত খুশি উদ্যাপন করছি, তা সকল যুগে ছিল, এমনকি এখনো সমগ্র বিশ্বে চলছে। এমন কোন আরব দেশ বাকি নাই, যেখানে ১২ রবিউল আউয়াল স্বীকৃত নয়।

বরং আমাদের উচিত এ দিনটিকে কেন্দ্র করে নবীপ্রেমিক জনতার মধ্যে যে ঈমানি জজবা দেখা যায় একে কাজে লাগিয়ে দেশ, জাতি ও ইসলামের বৃহত্তর প্রয়োজনে এর সদ্ব্যবহার করা। আওলাদে রাসুল (দ.) শাহজাদা সৈয়দ মুহাম্মদ হামিদ শাহ (মা.জি.আ.) বলেন, এই জসনে জুলুস ঈমানদারদের ঈমানি জজবা এবং অকৃত্রিম নবীপ্রেমের নিদর্শন। বর্তমানে বিচ্ছিন্নতার কারণে দুর্বল হয়ে পড়া বিশ্ব মুসলিমের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে এ জুলুস ইসলামি ঐক্যের প্রতীক হতে পারে।” তিনি এ জসনে জুলুসকে আরো শক্তিশালী করবার আহবান জানান।

এর আগে বক্তাগণ বলেন, যাঁকে সৃষ্টি না করা হলে কিছুই সৃষ্টি হতোনা, আল্লাহর সেই সর্বশ্রেষ্ঠ অনুগ্রহ এবং নেয়ামত লাভের শোকরিয়া হিসেবে আজ আমরা যে শরিয়ত সম্মত খুশি উদ্যাপন করছি, তা সকল যুগে ছিল, এমনকি এখনো সমগ্র বিশ্বে চলছে। এমন কোন মুসলিম দেশ বাকি নাই, যেখানে ১২ রবিউল আউয়াল স্বীকৃত নয়। বরং আমাদের উচিত এ দিনটিকে কেন্দ্র করে নবীপ্রেমিক জনতার মধ্যে যে ঈমানি জজবা দেখা যায় একে কাজে লাগিয়ে দেশ, জাতি ও ইসলামের বৃহত্তর প্রয়োজনে এর সদ্ব্যবহার করা।

বক্তাগণ, এই মিলাদ দিবসের উদযাপনে রাষ্ট্রিয় উদ্যোগে জসনে জুলুস আয়োজনের এবং এ দিনে কয়েদী মুক্তির বিধান চালু করার দাবি জানান। শাহজাদা হযরত সৈয়্যদ মুহাম্মদ হামিদ শাহ্ (মাজিআ)’র সদারতে অনুষ্ঠিত মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পিএইচপি ফ্যামিলির মাননীয় চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সুফি মুহাম্মদ মিজানুর রহমান।

বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম-৮ নং আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মুহাম্মদ মঈনউদ্দীন খান বাদল, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মুহাম্মদ আব্দুস সালাম, স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মুহাম্মদ মোরশেদ ও মুহাম্মদ মোবারক আলী। গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের সহ-সভাপতি আলহাজ্ব আনোয়ারুল হক ও জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসার প্রভাষক হাফেজ আনিসুজ্জামান আল-কাদেরীর সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন আন্জুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট’র সিনিয়র সহ-সভাপতি আলহাজ্ব মুহাম্মদ মহসিন, সেক্রেটারি জেনারেল আলহাজ্ব মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব পেয়ার মুহাম্মদ, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসার শায়খুল হাদীস মুফতি মুহাম্মদ ওবাইদুল হক নঈমী, অধ্যক্ষ মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ অছিয়র রহমান আল-কাদেরী, মুফতি কাজী মুহাম্মদ আব্দুল ওয়াজেদ, মুহাদ্দিস হাফেজ আশরাফুজ্জামাল আল-কাদেরী, আন্জুমান রিসার্চ সেন্টারের মহাপরিচালক মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল মান্নান, জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদের খতিব সৈয়দ আবু তালেব মুহাম্মদ আলাউদ্দিন, ঢাকা মোহাম্মদপুর কাদেরিয়া তৈয়্যবীয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ কাজী মুহাম্মদ আব্দুল আলিম রেজভী, উপাধ্যক্ষ আবুল কাশেম মুহাম্মদ ফজলুল হক, হালিশহর তৈয়্যবীয়া অদুদিয়া সুন্নিয়া ফাযিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুহাম্মদ বদিউল আলম রেজভী, চন্দ্রঘোনা তৈয়্যবীয়া অদুদিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুহাম্মদ আবু তৈয়্যব চৌধুরী, বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক অধ্যাপক মাসুম চৌধুরী, মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এম.ফিলে অধ্যয়নরত সৈয়দ মুহাম্মদ হাসান আযহারী প্রমুখ। এতে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আন্জুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট’র এডিশনাল জেনারেল সেক্রেটারি আলহাজ্ব মুহাম্মদ সামশুদ্দিন, জয়েন্ট জেনারেল সেক্রেটারি আলহাজ্ব মুহাম্মদ সিরাজুল হক, এসিস্ট্যান্ট জেনারেল সেক্রেটারি আলহাজ্ব এস.এম. গিয়াস উদ্দিন সাকের, ফিন্যান্স সেক্রেটারি আলহাজ্ব মুহাম্মদ সিরাজুল হক, প্রেস এন্ড পাবলিকেশন্স সেক্রেটারি অধ্যাপক কাজী সামশুর রহমান, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসার পরিচালনা পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক দিদারুল ইসলাম, গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের মহাসচিব আলহাজ্ব শাহজাদ ইবনে দিদার, যুগ্ন-মহাসচিব আলহাজ্ব এড. মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবে এলাহী সিকদার, ঢাকা মোহাম্মদপুর কাদেরিয়া তৈয়্যবীয়া সুন্নিয়া আলিয়ার প্রভাষক হাফেজ মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান প্রমুখ। এতে একজন বিধর্মী লোক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে এবং তার নাম রাখা হয় মুহাম্মদ আব্দুর রহমান। আন্জুমান ট্রাস্ট’র সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট আলহাজ্ব মুহাম্মদ মহসিন জশনে জুলুছে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রণালয়, স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন, চউক, ওয়াসা সহ সকল দফতরের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। ট্রাস্ট’র সেক্রেটারি জেনারেল আলহাজ্ব মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন তাঁর শুভেচ্ছা বক্তব্যে জুলুছে আগত লাখো আশেকে রাসুলের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। পরিশেষে, মীলাদ-কেয়াম ও জোহরের নামাজ আদায়ের পর, বাংলাদেশের উন্নতি ও সমৃদ্ধি এবং বিশ্ব মুসলিমদের ঐক্য ও সংহতি, নিরাপত্তা ও কল্যাণ কামনা করে আল্লাহর দরবারে মুনাজাত করেন আওলাদে রাসুল, শাহজাদা সৈয়্যদ মুহাম্মদ হামিদ শাহ্ (মাজিআ)।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.