জাতীয় পার্টির সিদ্ধান্ত কাল

0

সিটি নিউজ ডেস্কঃ  জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেছেন, জাতীয় পার্টি বিরোধী দল হিসেবে থাকবে, নাকি মহাজোটের শরিক হিসেবে সরকারে যোগ দেবে তা আগামীকাল বুধবার জানাবে। দলের সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত শেষে তা কাল জানানো হবে বলে জানিয়েছেন দলটির। সভায় নব নির্বাচিত এমপিরাও উপস্থিত থাকবেন বলে জানান তিনি।

আজ মঙ্গলবার (১ জানুয়ারী) দুপুরে রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে দলের ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এ কথা বলেন মসিউর রহমান রাঙ্গা।

বর্তমান সংসদে বিরোধীদলে থাকলেও সরকারেও আছে জাতীয় পার্টি। রাঙ্গা নিজেই স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী।

সংসদে জাতীয় পার্টি বিরোধী দল হিসেবে থাকলেও গণতান্ত্রিকভাবে সংসদে দায়িত্ব পালন করবে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি সরকারের সঙ্গে ছায়া সরকার হিসেবেও থাকতে চায় বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে দলটি বিরোধীদল হিসেবে থাকবে, না মহাজোটের শরিক হিসেবে সরকারের মন্ত্রিসভায় থাকবে, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আগামীকাল জানানো হবে বলে জানিয়েছেন রাঙ্গা।

আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টির এই মহাসচিব বলেন, ‘আমরা গণতান্ত্রিকভাবে বিরোধিতা করব। লাঠিসোটা নিয়ে রাস্তায় নামব না, গাড়িঘোড়া ভাঙব না। সরকারের বিরোধিতা করব মানে এই নয় যে, মানুষের ওপর অত্যাচার করব, দোকানপাট লুটপাট করব। এটা আমরা করতে চাই না। আমরা চাই, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে একটা বিরোধীদল, যেভাবে অন্যান্য দেশে থাকে।’

রাঙ্গা বলেন, আমরা যেহেতু পরপর দুইবার সর্ববৃহৎ বিরোধীদল, সুতরাং আমরা আমাদের ঐতিহ্যকে ধরে রেখে কার্যক্রম চালাব। আমরা যেন একটা ছায়াসরকারে রূপান্তরিত হতে পারি।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের উন্মুক্ত আসনে অংশ নেয়া জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের ওপর হামলা ও লাঞ্ছিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে জাতীয় পার্টির ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় লাঞ্ছিত ওইসব প্রার্থীদের তোপের মুখে পড়েন পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙা।

তবে নির্বাচনের একদিন আগে পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ওইসব প্রার্থীদের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে সমর্থন দেয়ার ঘোষণা দেন। আবার তা প্রত্যাহারও করেন। এরপর অনেক প্রার্থী সরে দাঁড়ালেও কেউ কেউ লড়াই চালিয়ে যান। তাদের মধ্যে একজন মানিকগঞ্জ-৩ আসনে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী জহিরুল আলম রুবেল।

আলোচনা সভায় রুবেল অভিযোগ করেন, শত শত নেতাকর্মী বাড়ি ছাড়া। যারা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে ছিল তাদের বিএনপির পেন্ডিং মামলায় ঢুকানো হয়েছে। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মাঠে ছিলাম। নির্বাচনের আগের দিন সরে দাঁড়ালে ৫ কোটি টাকা পেতাম।

ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, কঠিন বাস্তবতা নেতাকর্মীরা বাড়ি ছাড়া। তারা ছেলে-মেয়ে ছাড়া, তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, এখন পর্যন্ত খুলতে পারে নাই। যদি আমরা মানুষ হই আগামী ৫ বছর এমনটা দেখতে হবে।

মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনের লাঙ্গলের প্রার্থী গোলাম মো. রাজু বলেন, ভেবেছিলাম গত পরশুদিন দল করতে পারবো কিনা। দলের সুনাম থাকবে কিনা। কিন্তু আল্লাহ মুখ তুলে তাকিয়েছেন।

তিনি পার্টির নেতাকর্মীদের দিকে নজর দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, তিন দিন আগের অনেক কথা বলার ছিল কিন্তু বললাম না, আপনাদের (যারা মন্ত্রী আছেন) সম্মানার্থে।

জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান আলমগীর সিকদার লোটন বলেন, জাতীয় পার্টির ইউনিয়ন ব্যাংক আছে শুনছি। কিন্তু একটা ছাত্র সমাজের ছেলেদের চাকরি হয় নাই সেখানে। কোনো নেতাকর্মী চাকরি পায়নি। এসএ টিভি নাকি আমাদের কারণে পেয়েছে, একটা চাকরি দূরের কথা টেলিভিশনের দরজায় যেতে পারি নাই।

রাঙাকে উদ্দেশ করে লোটন বলেন, আপনি মন্ত্রী ছিলেন, আপনার কাছে গিয়ে একটা চাকরি পায়নি। কি কারণে ছাত্র সমাজ করবে বলেন?

‘প্রতিবার নির্বাচনের সময় ঝামেলা হয়। হয় স্যার (এরশাদ) হাসপাতালে, নয় জেলে, নয় সিঙ্গাপুর। আমাদের সাবেক মহাসচিব নির্বাচন করতে পারে নাই এটা মানা যায়নি’, যোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, ২২টি আসন পাওয়া গেছে। এমন এমপি আসছেন যার পিএস জাতীয় পার্টির অফিস চেনে না। এর থেকে দুঃখের কিছু নেই। মন্ত্রীরা অফিসে আসে না, এমপিরা আসে না। কেউ আসে নাই। নতুন করে এমপি হবে আবার চলে যাবে এটা মেনে নেয়া যায় না।

নেতাদের এমন ক্ষোভের মুখে জাপা মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙা বলেন, ১২৯টি আসনে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীদের নির্যাতন করা হয়েছে শুনলাম। এর জন্য দুঃখিত।

তিনি বলেন, পার্টির চেয়ারম্যানের নির্বাচন আমাকে করতে হয়েছে। নিজের নির্বাচন করতে হয়েছে। আরো কয়েকজনের নির্বাচন আমাকে করতে হয়েছে। এসব কারণে সবার খোঁজ নিতে পারি নাই।

মহাজোটের উন্মুক্ত আসনে জাতীয় পার্টির নেতারা কেন লাঞ্ছিত হয়েছে তা জানার চেষ্টা করবে বলে আশ্বাস দেন জাপা মহাসচিব।

তিনি বলেন, আমরা আগামী দিনে সরকারের যেতে পারি, সে টার্গেট নিয়ে এখন থেকে কাজ করতে হবে।

উল্লেখ্য, সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে ১৪৬ আসনে মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টি উন্মুক্ত প্রার্থী দিয়েছিল।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.