টাইব্রেকারে স্বপ্নভঙ্গ স্বাগতিক রাশিয়ার

0

স্পোর্টস ডেস্ক:: কোয়ার্টার ফাইনাল পর্বেই শেষ হলো স্বাগতিক রাশিয়ার বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন। বিশ্বকাপে শনিবার কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে টাইব্রেকারে রাশিয়াকে ৪-৩ ব্যবধানে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠে গেল ক্রোয়েশিয়া। ম্যাচটিতে নির্ধারিত ৯০ মিনিটে ১-১ সমতা থাকায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে খেলা গড়ায়। এরপর অতিরিক্ত সময়ের খেলা শেষে ম্যাচে ২-২ সমতা তৈরি হয়। তারপর ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। আর টাইব্রেকারে জয় তুলে নেয় ক্রোয়েশিয়া।

এর আগে দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচেও ডেনমার্ককে টাইব্রেকারে পরাজিত করেছিল ক্রোয়েশিয়া। ১৯৯৮ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলেছিল ক্রোয়েশিয়া। এবার তারা দ্বিতীয়বারের মতো সেমিফাইনালে উঠল। অন্যদিকে, দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচে স্পেনকে পরাজিত করেছিল রাশিয়া। কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালে এসে তারা জয় তুলে নিতে ব্যর্থ হলো।

সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড। আগামী ১১ জুলাই মস্কোর লুঝিনিকি স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত বারোটায় দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ড ও ক্রোয়েশিয়া। এর আগে ১০ জুলাই সেইন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত বারোটায় প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে ফ্রান্স ও বেলজিয়াম।

টাইব্রেকারে প্রথম কিকটি নেয় রাশিয়া। কিন্তু গোল করতে ব্যর্থ হন স্মোলোভ। তবে, ক্রোয়েশিয়া এই ভুল করেনি। ব্রোজোভিচ কিকটি নিতে এসে ক্রোয়েশিয়াকে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে দেন। রাশিয়া প্রথম কিকে গোল করতে না পারলেও দ্বিতীয় কিকে মিস করেনি। জাগোয়েভ কিকটি নিতে এসে গোল করতে সক্ষম হন। ক্রোয়েশিয়ার দ্বিতীয় কিকটি নিতে আসেন কোভাচিচ। কিন্তু তিনি হতাশ করেন। গোল করতে ব্যর্থ হন। দুই দলই দুইটি করে শট নেয়ার পর স্কোর ছিল ১-১।

তৃতীয় কিকে রাশিয়ার ফার্নান্দেজ গোল করতে পারেননি। কিন্তু ক্রোয়েশিয়ার অধিনায়ক লুকা মদ্রিচ দলকে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে দেন। চতুর্থ কিকে রাশিয়ার ইগনাশেভিচ গোল করেন। ক্রোয়েশিয়ার ভিদাও গোল করতে ভুল করেননি। চতুর্থ কিক শেষে ৩-২ ব্যবধানে এগিয়ে ছিল ক্রোয়েশিয়া।

রাশিয়ার ভক্তরা তখনও হয়তো জয়ের স্বপ্ন দেখছিলেন। শেষ কিকে নাটকীয় কিছু ঘটে কি না সেই অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু কোনো নাটক হয়নি। পঞ্চম কিকে উভয় দলই গোল করতে সক্ষম হয়। যার ফলে ৪-৩ ব্যবধানে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ক্রোয়েশিয়া।

ফিস্ট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচটিতে বল দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে ছিল ক্রোয়েশিয়া। পুরো ম্যাচে তারা ৬৫ শতাংশ সময় ধরে বল নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল। আর রাশিয়া বল নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল ৩৫ শতাংশ সময় ধরে। রাশিয়া টার্গেটে শট নিয়েছে পাঁচটি। আর ক্রোয়েশিয়া টার্গেটে শট নিয়েছে তিনটি।

ম্যাচের ৩১তম মিনিটে ১-০ গোলে এগিয়ে যায় রাশিয়া। গোলটি করেন ডেনিশ চেরিশেভ। ৩১তম মিনিটে গোলপোস্টের প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে জোরালো শটে বল জালে পাঠান তিনি। এবারের বিশ্বকাপে চেরিশেভের এটি চতুর্থ গোল।

এরপর ৩৯তম মিনিটে ম্যাচে ১-১ সমতা আনে ক্রোয়েশিয়া। গোলটি করেন ক্রামারিচ। ডি-বক্সের মধ্যে থেকে ক্রামারিচকে লক্ষ্য করে ক্রস দেন মানজুকিচ। আর ক্রামারিচ হেড করে বল পাঠিয়ে দেন জালে। ১-১ গোলে সমতায় থেকে বিরতিতে যায় ক্রোয়েশিয়া ও রাশিয়া।

বিরতির পর ৫৯তম মিনিটে এগিয়ে যেতে পারতো ক্রোয়েশিয়া। হয়তো ভাগ্য তাদের সহায় ছিল না। পেরিসিচের শটটি সাইডবারে লেগে গোললাইন ছুঁই ছুঁই অবস্থায় ফিরে আসে। ৭২তম মিনিটে রাশিয়ার সামনে দারুণ সুযোগ এসেছিল। কিন্তু তারা গোলের দেখা পায়নি। ফার্নান্দেজের ক্রস থেকে হেড করেন ইরোখিন। কিন্তু বল চলে যায় ক্রসবারের উপর দিয়ে।

নির্ধারিত ৯০ মিনিটে ১-১ সমতা থাকায় খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। অতিরিক্ত সময়ে প্রথমে এগিয়ে যায় ক্রোয়েশিয়া। ১০০তম মিনিটে ক্রোয়েশিয়াকে ২-১ গোলে এগিয়ে দেন ডোমাগোজ ভিদা। কর্নার কিক থেকে উড়ে আসা বল হেড করে গোলটি করেন তিনি।

ক্রোয়েশিয়ার এই গোলের পর স্টেডিয়ামে রাশিয়ার দর্শকদের চোখে মুখে তখন হতাশা। এই গোলের কারণেই বুঝি তাদের দল হেরে গেল। কিন্তু ১১৫তম মিনিটে ম্যাচে ২-২ সমতা আনে রাশিয়া। আবারও জেগে ওঠেন দর্শকরা। নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে রাশিয়া। হেড থেকে গোলটি করেন ফার্নান্দেজ। বক্সের কোনায় ফ্রি-কিক পায় রাশিয়া। ফ্রি-কিকটি নেন জাগোয়েভ। ডি-বক্সের মধ্যে ক্রস দেন জাগোয়েভ। সুযোগ পেয়ে গোলটি করেন ফার্নান্দেজ। এই ম্যাচে ম্যাচ সেরা হয়েছেন ক্রোয়েশিয়ার অধিনায়ক লুকা মদ্রিচ।

‘ডি’ গ্রুপ থেকে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছিল ক্রোয়েশিয়া। এরপর দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচে তারা ডেনমার্ককে টাইব্রেকারে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে। অন্যদিকে, ‘এ’ গ্রুপ থেকে গ্রুপ রানার আপ হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছিল রাশিয়া। দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচে তারা স্পেনকে টাইব্রেকারে পরাজিত করে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.