পটিয়ার শ্রীমতি খালটি দখল করছে দুবৃত্তরা
সুজিত দত্ত, পটিয়া প্রতিনিধি : পটিয়ার শ্রীমতি খালটি ভরাট করে দখল করছে দুবৃত্তরা। পটিয়া পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের সুচক্রদন্ডী এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া শ্রীমতি মরা খালটি সংকুচিত ও ভরাট হয়ে যাওয়ায় পুরো এলাকা সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা ও চাঁনখালীর জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায়। এতে লক্ষাধিক মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে যুগ যুগ ধরে।
স্থানীয়রা এব্যাপারে অবিলম্বে খাল খনন কার্যক্রম হাতে নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি কামনা করেছে। অন্যথায় তারা খাল খনন সংগ্রাম কমিটি গঠন করে আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে ভুক্তভোগী শহিদুল ইসলাম জানান।
জানা যায়, পটিয়া পৌর সদরের ৯নং ওয়ার্ড গোবিন্দারখীল ও ৩নং ওয়ার্ড পশ্চিম গোবিন্দারখীল এবং ২নং ওয়ার্ড সুচক্রদন্ডী এলাকা দিয়ে শ্রীমতি মরা খালটি চাঁনখালী খালে সংযুক্ত হয়।
শত শত বছরের পুরোনো খরস্রোতা খালটি এখন সুচক্রদন্ডী গ্রামের মাঝ পথে এসে জমে থাকা পলিতে ভরাট হয়ে জমিতে পরিণত হয়েছে। এতে অনেকেই ঘর বাড়ি তৈরী করে বসবাস শুরু করায় খালটির অস্থিত্ব এখন এক প্রকার বিলীন হয়ে পড়েছে। অথচ এক সময় এ খাল দিয়ে জোয়ার-ভাটার পানি আসতো। এমনকি নৌকাও চলতো।
আর এর পানি দিয়ে খালের উভয় পাড়ের প্রায় কয়েক হাজার একর জমিতে বিভিন্ন মৌসুমে চাষাবাদ হতো। খালটি দিয়ে যুগ যুগ ধরে হাইদগাঁও ও কেলিশহর ইউনিয়নের বৃহত্তর পাহাড়ী এলাকার বৃষ্টির ঢলের পানি নিন্মাঞ্চলে প্রবাহিত হত। কিন্তু খালটি ৯নং ওয়ার্ড এলাকার সূর্যত খান বাড়ী, আমির ভান্ডারের উত্তরাংশ এবং সুচক্রদন্ডী ২নং ওয়ার্ডের মজলুম জননেতা জনাব আলী ফকিরের বাড়ীর দক্ষিণাংশে প্রায় পৌনে এক কিলোমিটার এলাকা খালের পানিতে বয়ে আসা পলিতে ভরাট হয়ে জমিতে পরিণত হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই পুরো এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যায়।
আবার অনেক স্থানে এ এলাকার বৃষ্টি পাতের পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্থ হয়ে পড়ায় মুন্সেফ বাজার, পটিয়া খলিলুর রহমান মহিলা ডিগ্রী কলেজ, আবদুর রহমান সরকারি বালিকা উচচ্ বিদ্যালয়, রামকৃষ্ণ মিশন, খাস্তগীর পাড়া, পটিয়া পিডিবি এবং সাংবাদিক জালাল উদ্দিন আহমদ সড়ক, পটিয়া আদালত সড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক এলাকায় সামান্য বৃষ্টি হলে ২/৩দিন পর্যন্ত জলাবদ্ধতা স্থায়ী হয়।
এছাড়াও শুষ্ক মৌসুমে পানি শূণ্যতার কারণে শত শত একর জমিতে পূর্বের ন্যায় চাষাবাদও হয়না। এলাকাবাসী অবিলম্বে এটি সংস্কারের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা সহজিকরণ ও শুষ্ক মৌসুমে অনাবাদি জমিগুলোকে চাষাবাদের আওতায় আনার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পৌর কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
স্থানীয় অধিবাসী পৌর আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি নুর আলম সিদ্দিকী বলেন, এ খালটিকে ঘিরে অনেক পরিবার যেমন জীবিকা নির্বাহ করে। তেমনি প্রতি বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতায় দুর্যোগ মোকাবেলায় বাধ্য হয়। এটি আমাদের এলাকার জন্য ক্ষেত্র বিশেষে সৌভগ্যের বার্তা বয়ে আনলেও মাত্র কিছু অংশ ভরাট করে দুবৃত্তদের দখল হয়ে যাওয়ায় এখন অভিশাপে পরিণত হয়েছে।
আমরা এ খালকে আবার বহমান খালে পরিণত করতে পটিয়ার মাননীয় সাংসদ আলহাজ্ব সামশুল হক চৌধুরীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। এব্যাপারে জানতে চাইলে পটিয়া পৌরসভার মেয়র অধ্যাপক হারুনুর রশিদ বলেন, আমরা এ খাল খননের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে পত্রের মাধ্যমে সামগ্রিক অবস্থা অবহিত করেছি। পটিয়ার সাংসদ আলহাজ্ব সামশুল হক চৌধুরীও আমাদেরকে খালটি খননের ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা আশাবাদী এ খাল খনন হলে পৌর এলাকার জলাবদ্ধতা চিরতরে নিরসন হবে।
এছাড়াও পটিয়া থানার মোড় থেকে তালতলাচৌকি এবং মুন্সেফ বাজার পর্যন্ত বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে যে দৃষ্টিনন্দন ড্রেনেজ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে তা আগামী বর্ষার আগেই সম্পন্ন হলে পৌর এলাকার উপরের অংশের জলাবদ্ধতা স্থায়ীভাবে নিরসন হবে বলে আমরা আশাবাদী। তিনি আরো বলেন, এ ড্রেনটি বর্তমানে ভরাট হওয়া খালের অংশ খননের মাধ্যমে এর সাথে যুক্ত হলে পৌর এলাকার বৃহত্তর অংশ জলাবদ্ধতামুক্ত হবে।