প্যারোল নয় শপথও নয় লাগাতার আন্দোলনে যাচ্ছে ২০ দল

0

দিলীপ তালুকদারঃ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্যারোলে মুক্তি নেবেন না আর একাদশ জাতীয় সংসদে নির্বাচিত বিএনপির সংসদ সদস্যরাও শপথ নেবেন না। খালেদা জিয়ার মুক্তির এক দফা দাবী নিয়ে লাগাতার আন্দোলনে যাচ্ছেন ২০ দলীয় জোট।

এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ৬ জন বিজয়ী প্রার্থীর সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণের সাথে খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয় জড়িত বলে রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন থাকলেও তা সময়ই বলে দেবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। তবে সোমবার (৮ এপ্রিল) বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে যে নির্বাচনে বিএনপির বিজয়ীরা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করবেন না এবং খালেদা জিয়াও প্যারোলে মুক্তি নেবেন না।

সোমবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয় বলে সূত্রে জানা গেছে। প্রায় ২ ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২০ দলীয় জোটের এক নেতা জানান, বৈঠকে বলা হয়েছে যে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্যারোলে মুক্তি নেবেন না এবং একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির বিজয়ী ৬ জন প্রার্থী শপথ নেবেন না।

ঐ শীর্ষ নেতা বলেন, বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। কারণ খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হলে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নাই। তবে কি ধরণের আন্দোলন করা হবে সে বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত না নেওয়া হলেও বৈঠকে বলা হয় বাংলাদেশে যে ধরণের আন্দোলন হয় সেই রকমই আন্দোলন করতে হবে।

সূত্রটি জানায়, সামনের মাসে রমজান। এই কারণে এই দুই মাস জনসম্পৃক্ততা গড়ে তোলা হবে এবং ঈদের পরে লাগাতার আন্দোলনে যাওয়ার চিন্তা রয়েছে ২০ দলীয় জোটের।

এদিকে ২০ দলীয় জোটের এ সিদ্ধান্ত জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টও এক মত কিনা রাজনৈতিক মহল সন্দিহান। কারণ গতকালের ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে যোগ দেন জামায়াতে ইসলামীর কর্ম পরিষদ সদস্য মৌলানা আব্দুল হালিম। ঐক্য ফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গ ছাড়তে বলেছিলেন। তবে ২০ দলীয় জোট যেহেতু এখনো আছে জোট থেকে কোন দলকে বাদ দেয়া হয়নি সেহেতু ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে জামায়াত যোগ দিতেই পারেন। তাতে কোন জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টে

অসুবিধা হবে না। এমনটি মনে করেন বিএনপির এক শীর্ষ নেতা। ঐ নেতা মনে করেন, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হলে আন্দোলন ছাড়া বিকল্প নেই। রাজপথের আন্দোলন করতে আমাদের সবাইকে প্রয়োজন। জামায়াত থাকলে জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের অন্যান্যরা আন্দোলনে থাকবেন কিনা এমন প্রশ্নে এই নেতা বলেন, যে কারনে ঐক্য ফ্রন্ট গঠন করা হয়েছিল সেটা মাঠে মারা গেছে।

দলের অনেক নেতাই এখন ঐক্য ফ্রন্টের পক্ষে নেই। আর ঐক্য ফ্রন্টের সাথে সম্পৃক্ত দলগুলোর তেমন কোন জন সম্পৃক্ততা নেই। বক্তৃতা বিবৃতি দিয়েতো আর আন্দোলন হয়। আন্দোলন করতে হলে জন সম্পৃক্ততা লাগে। জনগনের সমর্থন লাগে। জামায়াতের সেটা রয়েছে।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি পাওয়ার আলোচনা প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সোমবার বলেছেন, প্যারোলে মুক্তি চাইতে হয়, না চাইলে সরকার কাউকে জোর করে প্যারোল দিতে পারে না।

সরকারের একাধিক মন্ত্রী সম্প্রতি বলেন, যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে আবেদন করা হলে খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হতে পারে। তবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির নেতারা বলে আসছেন, প্যারোলে নয়, জামিনে মুক্তি পাওয়া খালেদা জিয়ার অধিকার।

২০ দলীয় জোটের বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, জাতীয় পার্টির মোস্তফা জামাল হায়দার, জামায়াতে ইসলামীর আব্দুল হালিম, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির রেদোয়ান আহমেদ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, খেলাফত মজলিসের আহমদ আবদুল কাদের, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির খন্দকার লুৎফর রহমান, ডেমোক্রেটিক লীগের সাইফুদ্দিন মনি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে একই দিন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ সরাকারের কড়া সমালোচনা করে সোমবার এক বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার মানুষের ভোট এবং গণতান্ত্রিক অধিকারকে উপেক্ষা করে একদলীয় বাকশাল কায়েম করতে বিরোধী দল ও মত দমনে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

তিনি বলেন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম হিলালী এবং অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম সোমবার মামলার হাজিরা দিতে গেলে আদালত তাদের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দেশের মানুষ আজ অধিকারহারা। তাদের সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করেছে সরকার। দেশে ভয়ের রাজত্ব কায়েম হয়েছে।’

তিনি বলেন, চোখের সামনে অন্যায় দেখে মানুষ যাতে প্রতিবাদ না করে সেজন্য সরকার হামলা, মামলা ও গ্রেফতারের তৎপরতা সীমাহীন মাত্রায় বৃদ্ধি করেছে। সরকারের এমন ফ্যাসিবাদী আচরণ দেশকে ক্রমান্বয়ে ভয়াবহ নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.