ফের হামলার শিকার খালেদা জিয়ার

0

নির্বাচনী প্রচারে নেমে তৃতীয় দিনের মতো হামলার স্বীকার হল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়িবহর। বুধবার বিকালে বাংলামোটরে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা লাঠিসোটা, রড ও হকিস্টিক নিয়ে খালেদা জিয়ার গাড়ির ওপর চড়াও হয়। এতে গাড়িটির বামদিকের গ্লাসটি ভেঙে যায়। খালেদা জিয়া এ গ্লাসের সামনের সিটে বসে ছিলেন। গাড়ির বাম দিকে বাম্পারও ভেঙে রাস্তাতে পড়ে থাকতে দেখা যায়। হামলায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল কাইয়ুম, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট (অব.) শামিউল, আতিকুর রহমান, নিরাপত্তা বাহিনীর একটি গাড়ির চালক আবদুল মান্নানসহ কয়েকজন আহত হন। এদের মধ্যে শামিউলের অবস্থা আশংকাজনক। তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান রুবেলের নেতৃত্বে এ হামলা চালানো হয়। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রড, লাঠিসোটা নিয়ে অতর্কিতে হামলা চালায়। এ সময় কেউ কেউ গাড়ি লক্ষ্য করে ইটপাটকেলও নিক্ষেপ করে। হামলাকারীদের কয়েকজনের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র দেখা যায়। হামলার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে একদল যুবক দৌড়ে শাহবাগ হয়ে বাংলামোটরের দিকে যায়। এ সময় তাদের হাতে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ও লাঠিসোটা ছিল। হামলার পর তাদের বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার দিকে যেতে দেখা যায়।

খালেদা জিয়াকে হত্যার উদ্দেশ্যে এ হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। বুধবার সন্ধ্যায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় তাৎক্ষণিক এক প্রেস ব্রিফিংয়ে দলটির নেতারা বলেন, আইনশৃংখলা বাহিনীর সহায়তা ছাড়া এ হামলা হতে পারে না। তারা দাবি করেন পুলিশের সহায়তায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতার নেতৃত্বে এ হামলা চালানো হয়। অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার দাবি করা হয়। একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি জানানো হয়। অব্যাহত হামলার পরও খালেদা জিয়ার গণসংযোগ অব্যাহত থাকবে বলে প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা ১৯ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা অফিসে অবস্থান শেষে তিনি গুলশান বাসার উদ্দেশে রওয়ানা হন। বহরে বিএনপির কয়েক হাজার নেতাকর্মী খালেদা জিয়ার গাড়ি কর্ডন করে রাখে। খুব ধীরগতিতে বহরের গাড়ি চলে।

মঙ্গলবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাসের পক্ষে ফকিরাপুলে গণসংযোগ শেষে নয়াপল্টনের দিকে আসার পথে কাঁচাবাজারসংলগ্ন এলাকায় সরকার সমর্থকদের হামলার শিকার হয় খালেদা জিয়ার গাড়িবহর। এর আগে সোমবার প্রচারে নেমে কারওয়ান বাজারে খালেদা জিয়ার পথসভা ও গাড়িবহরে সরকার সমর্থক নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। এর আগে উত্তরায় গণসংযোগকালে খালেদা জিয়াকে কালো পতাকা প্রদর্শন করে সরকার সমর্থকরা।

বুধবার বিকাল ৪টা ৪৭ মিনিটে গুলশানের বাসা থেকে পঞ্চম দিনের মতো গণসংযোগে বের হন খালেদা জিয়া। বনানী-মহাখালী, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার হয়ে তার গাড়ি বিকাল ৫টা ২০ মিনিটে বাংলামোটরে ট্র্রাফিক সিগন্যালে আটকা পড়ে। সিগন্যাল উঠলে গাড়ি রওনা হওয়ার সময় বাংলামোটরের কনকর্ড টাওয়ারের সামনে ৩০-৪০ নেতাকর্মী ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, ছি ছি খালেদা ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে খালেদা জিয়ার গাড়ির দিকে এগিয়ে এসে লোহার রড, লাঠি ও ক্রিকেট স্টাম্প দিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। খালেদা জিয়ার পাশে সেলিমা রহমান বসা ছিলেন। লাঠির আঘাতে খালেদা জিয়ার গাড়ির বাম পাশের পেছনের দিকের গ্লাস ভেঙে যায়। এছাড়া বামপাশের চাকার ওপরে মার্কার ভেঙে যায়। এরই মধ্যে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর তার নিরাপত্তা কর্মীরা ঘিরে রেখে দৌড়াতে দৌড়াতে এগোতে থাকে। হামলাকারীরা এর পরপরই সিএসএফসহ গণমাধ্যমের গাড়ির ওপরও চড়াও হয়। এতে সিএসএফ ৪টি গাড়িসহ বেসরকারি টেলিভিশনের একটি গাড়ির গ্লাস ভেঙে যায়।

সিগন্যাল শেষে গাড়ি চলতে থাকলে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তা সামিউল ও আতিকুর রহমান গাড়িতে উঠতে পারেননি। এ সময় দৌড়ে গিয়ে হামলাকারীরা দু’জনকে এলোপাতাড়ি পেটাতে শুরু করে। প্রথম দফায় হামলাকারীদের হাত থেকে দৌড়ে পুলিশের গাড়িতে ওঠার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন তারা। দ্বিতীয় দফায় তাদের দু’জনকে আবারও বেদম পেটানো হয়। তৃতীয় দফায় অন্য আরেকটি গাড়িতে উঠতে ব্যর্থ হয়ে মাটিতে পড়ে যান তারা। এ সময় হামলাকারীরা আবারও তাদের পেটাতে থাকে। সেখানে উপস্থিত কয়েকজন পুলিশ সদস্য হামলাকারীদের বারবার ফেরানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। হামলাকারীদের নিবৃত্ত করতে না পেরে এক পুলিশ কর্মকর্তা আগ্নেয়াস্ত্র বের করার প্রস্তুতি নেন। পরে লোকজন এসে তাদের দু’জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। এদিকে খালেদা জিয়ার চলন্ত গাড়িবহর হামলার সময় ধাক্কায় ছাত্রলীগের দুই কর্মী পড়ে গিয়ে আহত হন।

পরে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর সরাসরি নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যায়। ৫টা ৩৫ মিনিটে কার্যালয়ের উল্টোপাশে এসে তার গাড়ি থামে। পরে ফকিরাপুল মোড় ঘুরে ৫টা ৫৪ মিনিটে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আসে চেয়ারপারসনকে বহনকারী গাড়ি। এ সময় গাড়ি থেকে নেমে খালেদা জিয়া হাত দিয়ে ভাঙা জায়গা দেখেন। পরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দোতলায় অবস্থিত তার কক্ষে যান । এ সময় চেয়ারপারসনের সঙ্গে ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস ও মাহবুব আলম ডিউ, মহিলা দলের সভাপতি নুরে আরা সাফা, শিরীন সুলতানা, সুলতানা আহমেদ, শামা ওবায়েদ, ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসান প্রমুখ।

 বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়িবহরে হামলার খবর পেয়ে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উপস্থিত হন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, লে. জে. (অব. ) মাহবুবুর রহসান, আ স ম হান্নান শাহ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল বারী বাবু, কেন্দ্রীয় নেতা হেলেন জেরিন খান, রেহানা আক্তার রানু, সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়া, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান, আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের আহ্বায়ক প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমেদ, সদস্যসচিব শওকত মাহমুদ, অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, সাংবাদিক শফিক রেহমান, মাহফুজউল্লাহসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের কয়েক হাজার নেতাকর্মী। ‘খালেদা জিয়ার ওপর হামলা কেন, শেখ হাসিনা জবাব চাই’, ‘খালেদা জিয়া এগিয়ে চল, আমরা আছি তোমার সাথে’ কার্যালয়ের বাইরে নেতাকর্মীরা নানা স্লোগান দেয়। পরে সিনিয়র নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন খালেদা জিয়া। বৈঠক শেষে দলের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করেন খন্দকার মাহবুব হোসেন।
 নির্বাচনী প্রচারের সময় খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে পরপর তিনদিন হামলার পরও তিনি প্রচার অব্যাহত রাখবেন কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, যতই ঝড়ঝঞ্ঝা আসুক না কেন সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে খালেদা জিয়া নির্বাচনী প্রচারণা অব্যাহত রাখবেন। দেখি সরকার কতটা হিংস্র হতে পারে। জনগণ বিএনপির সঙ্গে আছে। সিটি নির্বাচনে জনগণ ভোট দেয়ার সুযোগ পেলে আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত। সরকারকে হুশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় সরকারকে আরও সতর্ক হতে হবে। তা না হলে সরকারের যে পরিণতি হওয়ার তাই হবে।’
 নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেয়ায় সরকার উন্মাদ হয়ে গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বাকশাল কিংবা একদলীয় শাসন চাইলে স্পষ্ট করে বলুন আমরা আমাদের পথ বেছে নেব। জনগণ উত্তেজিত হলে কোনো স্বৈরাচার পার পায়নি। ছাত্রলীগের প্রতি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, ‘সোনার ছেলেরা পুলিশ ছাড়া আসুন।’ দলীয় নেতাকর্মীদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শামিল হওয়ার জন্য রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানান চেয়ারপারসনের এ উপদেষ্টা।
এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.