বাগেরহাটের তিন যুদ্ধাপরাধীর মামলার রায় ১১ অাগস্ট

0

ট্রাইব্যুনাল1সিটিনিউজবিডি : বাগেরহাটে তিন ‘রাজাকারের’ বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা ও লুণ্ঠনসহ মোট সাতটি অভিযোগ রয়েছে। এদের বিরুদ্ধে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ মামলার রায় আগামী ১১ অাগস্ট জানা যাবে। সম্প্রতি এদের মধ্যে একজন বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।

অভিযুক্ত আসামিরা হলেন- বাগেরহাটের আব্দুল লতিফ তালুকদার, শেখ সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টার ও খান আকরাম হোসেন।

এদের মধ্যে ৭৫ বছর বয়সী লতিফ তালুকদার গত ২৭ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

দুই পক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গত ২৩ জুন এ মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) রেখেছিল। বুধবার আদালত রায় ঘোষণার জন্য ১১ অাগস্ট দিন ঠিক করে দেয়।

২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধের বহু প্রতীক্ষিত বিচার শুরুর পর এটি হবে একবিংশতম রায়।

লতিফ তালুকদারের মৃত্যু হওয়ায় তার বিরুদ্ধে এ মামলার কার্যক্রমও সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে এদিন।

২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধের বহু প্রতীক্ষিত বিচার শুরুর পর এটি হবে একবিংশতম রায়।

গত বছর ৫ নভেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এরই তিন আসামির যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু করে ট্রাইব্যুনাল। ২ ডিসেম্বর প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ।

২ ডিসেম্বর থেকে গত ২৪ মার্চ পর্যন্ত সিরাজ, লতিফ ও আকরামের বিরুদ্ধে এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনসহ মোট ৩২ জন সাক্ষ্য দেন।

এরপর গত ৬, ৭ ও ২১ এপ্রিল আসামিদের পক্ষে পাঁচজন সাফাই সাক্ষ্য দেন। এরা হলেন- মো. আমজাদ শেখ, সরদার আব্দুল মান্নান, আব্দুর রশিদ মল্লিক, ইউসুফ আলী দিহিদার ও মো. ফেরদৌস খান।
এরপর ১৫ জুন প্রসিকিউটর সৈয়দ সাইয়্যেদুল হক সুমন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন। আসামি লতিফ তালুকদার অসুস্থ হয়ে পড়লে যুক্তিতর্ক স্থগিত করে আদালত। পরে ১৭ জুন সুমন যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেন।

আসামি আব্দুল লতিফ তালুকদার ও আকরাম হোসেন খানের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম সারওয়ার হোসেন যুক্তি উপস্থাপন করেন ১৮ জুন।

২১ জুন যুক্তি উপস্থাপন করেন সিরাজ মাস্টারের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আবুল হাসান। এই আসামি আর্থিক অসঙ্গতির কথা বলায় আদালত তার মামলা লড়তে আইনজীবী নিয়োগ দেয়।

দুই পক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে বিচারিক কার্যক্রম শেষ হওয়ায় মামলাটি রায়ের পর্যায়ে আসে।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাগেরহাটের কচুয়ার শাঁখারীকাঠি বাজারে ৪২ জনকে গণহত্যা, ধর্ষণ ও বাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ ছয়টি অভিযোগে ২০০৯ সালে সিরাজ মাস্টারসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়।

ওই গণহত্যায় নিহত রঘুদত্তকাঠি গ্রামের শহীদ জিতেন্দ্র নাথ দাসের ছেলে নিমাই চন্দ্র দাস কচুয়া থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলাটি পরে ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়।

ট্রাইব্যুনাল গত ১০ জুন এই তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে কচুয়া থানা পুলিশ পরদিন লতিফ তালুকদারকে গ্রেপ্তার করে। এরপর ১৯ জুন আকরাম হোসেন খানকে গ্রেপ্তার করা হয় রাজশাহী থেকে। ২০ জুলাই গ্রেপ্তার হন সিরাজ মাস্টার।

প্রসিকিউশনের তদন্ত সংস্থা বলছে, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে আসামিরা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতা করতে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেয়।

খুলনার আনসার ক্যাম্পে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে অস্ত্র ও গুলি সংগ্রহ করে তারা অন্যান্য রাজাকার সদস্যদের সঙ্গে বাগেরহাট জেলার বিভিন্ন স্থানে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্মান্তরিতকরণসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধ চালায় বলে তদন্ত সংস্থার অভিযোগ।

সাত অভিযোগ

অভিযোগ ১: ১৯৭১ সালের ১৩ মে দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বাগেরহাট জেলার রঞ্জিতপুর গ্রামে হামলা চালিয়ে বাড়িঘর লুট এবং অগ্নিসংযোগ। এসময় হিন্দু সম্প্রদায়ের ৪০-৫০ জন নিরীহ নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করা হয়।

অভিযোগ ২: বাগেরহাট জেলার রামপাল থানার ডাকরার কালীমন্দিরে ভারতের শরণার্থী শিবিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে জড়ো হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের দুই-তিন হাজার লোক। ১৯৭১ সালের ২১ মে বেলা ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত তাদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়ে ৬০০-৭০০ জনকে হত্যা করা হয়।

অভিযোগ ৩: ১৯৭১ সালের ১৮ জুন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সদর থানার বেসরগাতী, কান্দাপাড়া এলাকায় ১৯ জন নিরীহ নিরস্ত্র লোককে আটক, নির্যাতন, অপহরণ ও হত্যা করা হয়।

অভিযোগ ৪: ১৯৭১ সালের ১৪ অক্টোবর সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সদর থানার চূলকাঠিতে হামলা চালিয়ে ৫০টি বাড়ি লুট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এসময় সাতজন নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করা হয়।

অভিযোগ ৫: ১৯৭১ সালের ৫ নভেম্বর দুপুর ৩টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কচুয়া থানার শাখারিকাঠি হাটে হামলা চালিয়ে ৪২ জনকে আটক, নির্যাতন ও হত্যা করা হয়। এসময় অনেক বাড়ির মালামাল লুট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

অভিযোগ ৬: ১৯৭১ সালের ২২ অক্টোবর সকাল ১০টা থেকে বিকাল আনুমানিক ৫টা পর্যন্ত কচুয়া থানা সদরের বিভিন্ন গ্রাম থেকে নিরস্ত্র পাঁচজনকে আটক, নির্যাতন, অপহরণ ও হত্যা করা হয়।

অভিযোগ ৭: ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টায় জেলার মোড়েলগঞ্জ থানার তেলিগাতীতে মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান শিকদারকে আটক, নির্যাতন ও হত্যা করা হয়।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.