বিমান ছিনতাইকারী মাদকাসক্ত নায়িকা সিমলার স্বামী!

0

সিটি নিউজ ডেস্কঃ চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে দুবাইগামী একটি উড়োজাহাজ ছিনতাইচেষ্টার পর কমান্ডো অভিযানে নিহত কথিত ছিনতাইকারীর নাম-পরিচয় প্রকাশ করেছে র‌্যাব। নিহতের নাম পলাশ আহমেদ। পলাশ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে পিরিজপুরের দুদঘাটা গ্রামের পিয়ার জাহান সরদারের ছেলে । তিনি তালিকাভুক্ত অপরাধী বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। ছোট বেলা থেকেই সে অবাধ্য ছিল বলে জানা গেছে।

একাধিক সূত্র জানায়, ছিনতাইয়ের চেষ্টাকারী এই পলাশএক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী এবং জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত চিত্রনায়িকা সিমলার স্বামী।

এদিকে সোমবার সকাল থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছিনতাইকারী পলাশের সঙ্গে নায়িকা সিমলার বেশকিছু ছবি ভাইরাল হয়েছে। আর এরপর থেকেই নতুন করে জন মনে নানা প্রশ্নের ডানা বাঁধতে শুরু করেছে।

নায়িকা সিমলা দেশের বাইরে থাকায় এ ব্যাপারে তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। কিন্তু বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টাকারী মাহমুদ পলাশের বাবা পিয়ার জাহান বলেছেন,  ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারির দিকে শিমলা নামে এক মেয়েকে রাতের বেলা বাড়িতে নিয়ে আসে পলাশ। মেয়েটিকে চিত্রনায়িকা ও তার প্রেমিকা বলে আমাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয় সে। এর দুই মাস পর আবার শিমলাকে বাড়িতে নিয়ে এসে বিবাহিত স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দেয় পলাশ। বিয়ের কথা শিমলাও আমাদের কাছে স্বীকার করে। ওই রাতেই তারা আবার ঢাকায় চলে যায়।

তিনি আরো জানান, পলাশ তার একমাত্র ছেলে। তিন মেয়ের মধ্যে দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। বাড়িতে জান্নাত নামে চার বছরের এক মেয়ে আছে।

ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের সাথে পলাশ ও সিমলা
               ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের সাথে পলাশ ও সিমলা

পিয়ার মরদার বলেন, ১৯৯০ সালে কাজের উদ্দেশে তিনি ইরাক চলে যান। সেখানে চার বছর থাকার পর দেশে ফিরে আসেন। পরে তিনি আবার সৌদিআরব চলে যান। ২০১২ সালে তিনি আবার দেশে ফেরেন। এর মধ্যে ছেলে পলাশ মাহমুদ তাহেরপুর ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা থেকে ২০১২ সালে দাখিল পরীক্ষা দিয়ে পাস করে। দাখিল পাস করে সে সোনাগাঁও ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হয়। সেখানে পড়া অবস্থায় সে ঢাকায় চলে যায়। তারপর থেকে তার আচরণে পরিবর্তন দেখা দেয়।

তিনি বলেন, আমরা জানতে পারি, পলাশ নাকি ঢাকায় চলচ্চিত্রে কাজ করার চেষ্টা করছে। তখন বাড়ির সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল না। মাঝে মাঝে বাড়িতে আসলেও এলাকার মানুষের সঙ্গে মিশতো না, কথাও বলতো না।

তিনি জানান, সর্বশেষ ২৫ দিন আগে পলাশ বাড়িতে আসে। বাড়িতে আসার পর তার আচরণে বিরাট পরিবর্তন দেখা যায়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া শুরু করে, মসজিদে গিয়ে আজানও দিয়েছে। সর্বশেষ শুক্রবার বাড়ি থেকে যাওয়ার আগে বলেছে, সে কাজের সন্ধানে দুবাই যাবে।

এদিকে সোনারগাঁও থানার এসআই আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিমান ছিনতাই চেষ্টার ঘটনায় নিহতের ছবি রবিবার রাত ১টার দিকে দুধঘাটা গ্রামের ফিয়ার জাহানের বাড়িতে নিয়ে দেখালে তারা ছবি পলাশের বলে নিশ্চিত করে।

প্রসঙ্গত, রবিবার বিকেলে বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের দুবাইগামী ওই উড়োজাহাজ ছিনতাইয়ের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। সেনা কমান্ডোদের সঙ্গে গোলাগুলিতে নিহত হন বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টাকারী মাহমুদ পলাশ।

পলাশের হাতে ছিল খেলনা পিস্তল !

বিমান ছিনতাইচেষ্টাকারী পলাশের হাতে থাকা অস্ত্রটি খেলনা পিস্তল বলে জানিয়েছে পুলিশ। চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুবাইগামী ফ্লাইট ময়ূরপঙ্খী ছিনতাইয়ের চেষ্টাকারী পলাশ কমান্ডো অভিযানে নিহত হয়েছেন।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ মাহবুবার রহমান বলেন, তার কাছে যে অস্ত্রটি পাওয়া গেছে এটা ফেইক, খেলনা পিস্তল। তাছাড়া শরীরে কোন এক্সপ্লোসিভ ছিল না। পরে বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীও রাতে এক টেলিভিশন অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে বলেন, ওই পিস্তলটি ছিল ফেইক, খেলনা।

পুলিশ কর্মকর্তা মাহবুবার বলেন, পুলিশের এখন তদন্ত শুরু হল। তার পরিচয় এখনও নিশ্চিত করে কিছু পাওয়া যায়নি। তবে এ নিয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়ে গেছে। আশা করা হচ্ছে, খুব শিগগিরই পাওয়া যাবে।

শেষবার ঢাকা থেকে বাড়ীতে এসে বদলে যান পলাশ !

ছোটবেলা থেকেই পরিবারের অবাধ্য সন্তান ছিলেন চট্টগ্রামে বাংলাদেশ বিমানের দুবাইগামী একটি ফ্লাইট ছিনতাইয়ের ঘটনায় নিহত পলাশ মাহমুদ (২৪) ওরফে কথিত মাহাদী।

গত ১ লা ফেব্রুয়ারী ঢাকা থেকে বাড়িতে ফিরে একেবারেই পাল্টে যান তিনি। পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়া শুরু করেন। জামাতের সময় হলে সবার আগে মসজিদে গিয়ে আযান দিতেন। এমনটি জানালেন তার মা বাবা। অবাধ্য ছেলের এমন পাল্টে যাওয়ার কথা সোমবার নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও পিরিজপুরের দুধঘাটা গ্রামের নিজ বাড়িতে বসে বলছিলেন বাবা পিয়ার জাহান সর্দার।

তিনি জানান, পলাশ তাহেরপুর ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা থেকে ২০১২ সালে দাখিল পাস করেন। পরে সোনারগাঁও ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হন। এরপর আর পড়ালেখা এগোয়নি।

এরপরই মধ্যে ২০১৪ সালে পলাশ বগুড়া সদর উপজেলার সাতমাথা ভাইপাগলা মাজার সংলগ্ন স্থানীয় এক আইনজীবীর মেয়েকে বিয়ে করেন। পলাশ-মেঘলা দম্পতির আড়াই বছর বয়সী আয়ান নামে এক ছেলেও রয়েছে। পরে স্ত্রীর সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। এরপর ঢাকায় সিনেমার জাতীয় পুরস্কার পাওয়া চিত্রনায়িকা সিমলাকে বিয়ে করেন।

পলাশের বাবা পিয়ার জাহানের ভাষ্যে, ছোটবেলা থেকেই তার ছেলে উচ্ছৃঙ্খল স্বভাবের ছিল। কোনো কিছুতে স্থির ছিল না। বিভিন্ন সময় নাটক-সিনেমায় কাজ করারও চেষ্টা করে। এরই মধ্যে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাতে হঠাৎ একটি মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে হাজির হয় পলাশ। সবার সঙ্গে তাকে ঢাকায় সিনেমার নায়িকা সিমলা এবং তার প্রেমিকা পরিচয় করিয়ে দেয়। দুই মাস পর আবার সিমলাকে বাড়িতে এনে এবার স্ত্রী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়। তাদের মধ্যে বিয়ের কথা সিমলাও স্বীকার করে। পরে ওই রাতেই তারা ঢাকায় চলে যায়।

তিনি বলেন, স্ত্রী পরিচয় দেয়ার পর আমরাও তাদের বিয়ে মেনে নেই। আমরা সিমলাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি, তোমার বয়স আমার ছেলের দ্বিগুণ। কেন তাকে বিয়ে করলে? সে জানায় তারা পরস্পরকে ভালবাসে। সে সম্পর্ক থেকেই বিয়ে করেছে। এরপর আমার তাকে অনুরোধ করি— পলাশ ছোটবেলা থেকে অবাধ্য। তুমি তাকে ভালো পথে ফিরিয়ে এনো।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে পিয়ার জাহান বলেন, আমার তিন মেয়ে ও একমাত্র ছেলে পলাশ। দুই মেয়ে বিয়ে দিয়েছি। আরেক মেয়ে ছোট (৪)। রোববার রাতে সোনারগাঁও থানা বাড়িতে এসে ছবি দেখালে আমরা জানতে পারি, পলাশ বিমান ছিনতাই করতে গিয়ে নিহত হয়েছে।’

পিয়ার জাহান ১৯৯০ সালে কাজের উদ্দেশে ইরাকে যান। সেখানে চার বছর কাটানোর পর দেশে ফিরে আবার সৌদি আরব যান। সেখান থেকে ২০১২ সালে দেশে এসে এলাকায় মুদির ব্যবসা শুরু করেন।

ছেলের বিষয়ে পিয়ার জাহান বলেন, কলেজে ভর্তি হলেও পড়া বাদ দিয়ে হঠাৎ করেই ঢাকা চলে যায় পলাশ। এরপর থেকে তার আচরণে আমূল পরিবর্তন দেখা দেয়। শুনেছি, ঢাকায় সে চলচ্চিত্রে কাজ করার চেষ্টা করছিল। বাড়ির সঙ্গে তার যোগাযোগ কম ছিল। মাঝে মাঝে এলেও এলাকার মানুষের সঙ্গে মিশত না, কথা বলত না।

তিনি বলেন, সর্বশেষ ২৫ দিন আগে পলাশ বাড়িতে আসে। এবার আসার পর তার আচরণে বিরাট পরিবর্তন দেখা দেয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়া শুরু করে, মসজিদে গিয়ে আযানও দেয়। গত শুক্রবার বাড়ি থেকে যাওয়ার আগে মাকে বলে যায়, কাজের সন্ধানে সে দুবাই যাবে।’

সোনারগাঁ থানার এসআই আবুল কালাম আজাদ জানান, বিমান ছিনতাই চেষ্টার ঘটনায় নিহতের ছবি রবিবার রাত ১টার দিকে দুধঘাটা গ্রামের পিয়ার জাহানের বাড়িতে নিয়ে দেখালে পলাশের বলে নিশ্চিত করে।

তিনি বলেন, আমরা যতটুকু খবর নিয়েছি, পলাশ নেশাগ্রস্ত ছিল। আর নেশার কারণেই বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টার মতো অপরাধ করেছেন তিনি।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.