মানব পাচার রোধে কঠোর হওয়া প্রয়োজন

0

আবছার উদ্দিন অলি

— সাংবাদিক ও গীতিকার


থাইল্যান্ডে গণকবরের সন্ধান পাওয়ার পর বাংলাদেশে হৈ চৈ পড়ে যায়। অনেক নিখোঁজ ব্যক্তি আত্মীয় স্বজন সরব হয়ে উঠে। গণকবরে বাংলাদেশের লোকজনের লাশ পাওয়ার খবর টিভি চ্যানেলে সচিত্র প্রতিবেদন দেখে আতঙ্কিত হয়ে উঠে বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষজন। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা মানবপাচার হঠাৎ করে বেশ আলোচনার ঝড় তুলে এবং বিশ্বব্যাপী বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বসহকারে পর্যালোচনা করছেন এবং এর সমাধানে কি করা যেতে পারে সে বিষয়ে মতামত দিচ্ছেন। বাংলাদেশে মধ্য আয়ের এবং নিম্ন আয়ের মানুষরা বিদেশ বললে একেবারেই অন্ধ হয়ে যায়। বৈধ কিংবা অবৈধ, পথে বিদেশ যাওয়ার কথা শুনলে আমরা পৃথিবীর সবকিছু ভুলে যায়। মনে হয় সোনার হরিণ এই বুঝি পেলাম। কিন্তু ইদানিং মানবপাচারে অমানবিক বিষয়গুলোর বাস্তবচিত্র গত কয়েকদিনের ঘটনায় ফুটে উঠেছে। সমুদ্র পথে মালেয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া যাওয়ার জন্য এক শ্রেণীর দালালের খপ্পরে পড়ে সাধারণ মানুষ নিঃস্ব হয়ে যায়।

rohingya-migrants-sit-in-a-boat-data

কেউ শূণ্য হাতে ফিরে এলেও কেউবা ফিরে আসে লাশ হয়ে। আবার কেউবা সাগরে ডুবে মরে। সহায় সম্বল হারিয়ে সাধারণ মানুষ একেবারেই বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। তারপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেকেই সাগর পথে পৌঁছে ছিল স্বপ্নের দেশ মালেয়েশিয়া। দালালদের প্রলোভনে গরীব মানুষজন প্রলুব্ধ হয়ে সাগর পথে বিদেশ যেতে যে কোন শর্তে রাজী হয়ে যায়। মাত্র দুই হাজার টাকায় মালেয়েশিয়া পৌঁছে দেয়ার প্রলোভনে, ফাঁদে পা দিচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ। এ যেন স্বপ্ন পূরেণে নরকযাত্রা। কক্সবাজার, টেকনাফ তারপর বার্মা এরপর থাইল্যান্ড সবশেষে মালেয়েশিয়া কখনো নৌকা, কখনো মাছ ধরা ট্রলার, কখনো জাহাজে, কখনো গহীন জঙ্গলে এভাবে অবৈধ পথে বিদেশ যাত্রা স¤প্রতিক সময়ে বেড়ে গেছে। দালালচক্র এ কাজে আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশীদের বেশি ব্যবহার করছে। এ ফাঁদে পা দিয়ে যারা একবার ঢুকে পড়েছে তাদের রেহাই নেই। পাচার হওয়া ব্যক্তিদের উপর বিদেশে গিয়েও চলে পাশবিক নির্যাতন। দেশে আত্মীয় স্বজনকে ফোন করে দালালদের চাহিদামত টাকা দিতে না পারলে নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে পাচার হওয়া মানুষটির সবদিকে ক্ষতি হলে পাচারকারী দালাল চক্রের লোকজন বহাল তবিয়তে বসবাস করছেন। তাদের শাস্তির আওতায় এনে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরী। এই চক্রটিকে আইনের আওতায় আনা না গেলে এই পাচারকাজ বন্ধ করা যাবে না।

গরীব মানুষজনকে কথা বলে সচেতন করা কঠিন কাজ। তাদের কাছে বিদেশ যাওয়া সবকিছুর উর্ধ্বে। ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও মালেয়েশিয়া অবৈধ অভিবাসীদের ভূ-খন্ডে প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করেছে। তবে মানবিক কারণে এদের সাগরে ফিরিয়ে দেওয়ায় বিরোধীতা করে আসছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন। থাইল্যান্ড গণকবর দেখে অবাক হয়েছি। এই ধরনের জঘন্য অপরাধমূলক হত্যাকান্ডের বিচার হওয়া উচিত। অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্ত ও সমুদ্র পথে নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। প্রয়োজনে যৌথ বাহিনী দিয়ে অভিযান চালাতে হবে। পাচারকারী চক্রগুলো প্রত্যেকেই এলাকায় স্থানীয় ভাবে পরিচিত। তাদের সবাইকে স্থানীয় লোকজন চিনেন।

তাই তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো কঠিন কাজ হবে না। আর এটি করতে পারলে এই ধরনের অপরাধ প্রবণতা হ্রাস পাবে। এখনও অনেকেই সাগরে ভাসছে এবং এক ধরনের খাদ্য ও পানির অভাবে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। মুষ্টিমেয় লোকের কারণে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। মানবপাচার রোধে কঠোর হওয়া প্রয়োজন। এভাবে বিদেশ পাড়ি দিতে গিয়ে একদিকে সহায় সম্বল হারাচ্ছেন অন্যদিকে পরিবারের জন্য দীর্ঘস্থায়ী অশান্তি ডেকে আনছেন। দ্রুত সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট চক্রটিকে ধরে শাস্তি দেওয়া না গেলে এর সমাধান মিলবে না। অবৈধ পথে বিদেশ যাওয়ার সাথে স্থানীয় প্রশাসন, চেয়ারম্যান, মেম্বার, রাজনীতিবিদ ও সন্ত্রাসী চক্র জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সবাইকে সচেতন হয়ে কাজ করতে হবে। সরকারকে বিষয়টি নিয়ে আরো জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.