রোহিঙ্গা নয় এবার আসছে বৌদ্ধ শরণার্থীরা
বান্দরবান প্রতিনিধিঃ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে মুসলিম রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটে আসলেও এবার রুমা উপজেলার প্রাংসা সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারের বৌদ্ধরা অনুপ্রবেশ করছে। এ পর্যন্ত দুশতাধিক বার্মিজ বৌদ্ধরা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
গত শনিবার মিয়ানমারের চীন রাজ্য থেকে ১৬৩ জন বৌদ্ধ শরণার্থী বান্দরবানের রুমা উপজেলার রেমাক্রী প্রাংসা ইউনিয়নের চাইক্ষাং সীমান্তের শূন্যরেখায় (নোম্যান্স ল্যান্ড) অবস্থান নেয়ার পর তারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। গত বুধবার আরও ৪০ পরিবার সেখানে অনুপ্রবেশ করে। এ নিয়ে অনুপ্রবেশের সংখ্যা দাঁড়ায় ২০৩ জনে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে আসা শরণার্থীরা পাহাড়ের তীব্র শীতের মধ্যে সীমান্তের অন্তত ৩টি পাড়ায় খোলা জায়গায় ত্রিপল টেনে তাবুর মতো করে বসবাস করছেন। আর প্রতিদিন তাদের খাদ্য সরবরাহ করছেন স্থানীয়রা।
আরও জানা গেছে, রুমা সীমান্তে শরণার্থীদের পরিস্থিতি পর্যক্ষেণ করতে সেনাবাহিনী ও বিজিবির সমন্বয়ে একটি পর্যক্ষেণ টিম এলাকাটি পরিদর্শন করেছে। সার্বিক পরিস্থিতির খবর নিতে রেমাক্রী প্রাংসা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড মেম্বার সাকিং বম ও ৩নং ওয়ার্ড মেম্বার ভান লং বমসহ কয়েকজন জন প্রতিনিধিকে এলাকাটিতে পাঠিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। তারা ফেরার পর সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে প্রশাসন।
এদিকে সীমান্তে অনুপ্রবেশ বাড়ার কারণে নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কয়েকটি টহল দল রুমা-মিয়ানমার সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করেছে। বুধবার হেলিকপ্টারে করে সদস্যদের মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আবার পাহাড়ি পথেও বিজিবি ও সেনা সদস্যদের সেখানে পাঠানো হচ্ছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়।
বিজিবির কক্সবাজার রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহেদুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, সীমান্ত এলাকায় শরণার্থীদের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সেখানে নিরাপত্তা বাহিনীর টিম পাঠানো হয়েছে।
রুমা উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমারের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের এ পর্যন্ত শিশুসহ ১৬৩ জন অনুপ্রবেশ করেছে এলাকাটিতে। তবে দেশের ২য় সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কেউক্রাডং থেকে ওই এলাকায় হেঁটে পৌঁছাতে অন্তত একদিন সময় লাগার কারণে এখনও পর্যন্ত সেখানে সরকারিভাবে কোনো খাদ্য বা ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। ফলে স্থানীয়দের সহায়তায় তারা কোনোভাবে সেখানে অবস্থান করছেন।
গত ডিসেম্বর থেকে মিয়ানমারের রাখাইন ও চিন রাজ্যে সেখানকার বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির সঙ্গে সেনাবাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষের পর আতঙ্কে খুমি, খেয়াং, বম ও রাখাইন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন সীমান্ত পথে বান্দরবান দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ শুরু করে।
রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাসসুল আলম বলেন, সেখানে বিজিবি ও সেনা সদস্যদের পাঠানো হয়েছে, তারা পর্যবেক্ষণ করে ফিরলেই আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারব।
প্রসঙ্গত, গত ৪ জানুয়ারি দেশটির স্বাধীনতা দিবসের দিন ভোরে বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া রাখাইনের চারটি পুলিশ পোস্টে হামলা চালায় সশস্ত্র আরাকান আর্মির সদস্যরা। তাদের হামলায় মিয়ানমারের সীমান্ত বাহিনী বিজিপির ১৩ সদস্য নিহত হন। আরাকান আর্মির দাবি, ওই হামলায় তাদেরও দুই সদস্য নিহত হন।
এদিকে দু’দফায় ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত উ লুইন ও কে জরুরি তলব করে প্রতিবাদ জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অনু বিভাগের মহাপরিচালক মো. দেলোয়ার হোসেন এ বিষয়ে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক করেন।
মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে বলা হয়, গত দেড় বছরে বাংলাদেশের শতচেষ্টা সত্ত্বেও একজন রোহিঙ্গাকে ফেরত না নিয়ে নতুন করে পরিকল্পিতভাবে রাখাইন অস্থিতিশীল করে দলে দলে বৌদ্ধ এবং উপজাতিদের বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। যা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।
রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে এমন পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে এখনই ব্যবস্থা নেয়ার জন্য মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানায় বাংলাদেশ।
রাষ্ট্রদূতকে বলা হয়, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরার অনুকূল পরিবশে নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বান মিয়ানমারকে পূরণ করতে হবে, অন্যথায় যেকোনো অস্থিতিশলি পরিস্থিতির জন্য মিয়ানমারকেই দায় নিতে হবে।