শান্তির পথ ধরে আসবে প্রগতি: প্রধানমন্ত্রী

0

সিটি নিউজ ডেস্ক :  পার্বত্য চট্টগ্রামে আঞ্চলিক সম্প্রীতি অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এই অঞ্চলে আর কোনো সংঘাত নয়, যেন শান্তি বজায় থাকে। এই শান্তির পথ ধরে আসবে প্রগতি। প্রগতির পথ ধরে আসবে সমৃদ্ধি এবং সমৃদ্ধির মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে উঠবে।’ রাজধানীর বেইলি রোডে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্সের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে রোববার (২৮ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘দেশ স্বাধীনের পর মাত্র সাড়ে তিন বছর জাতির পিতা দেশ শাসনের সময় পেয়েছেন। এই সময়কালে তিনি তিনবার পার্বত্য চট্টগ্রামে এসেছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নে তিনি আলাদা বোর্ড গঠন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু জাতির পিতাকে হত্যার পর আর তা অগ্রগতির মুখ দেখেনি।’

‘জাতির পিতা হত্যাকাণ্ডের পরপরই ১৯৭৬ সালে এই এলাকা সংঘাতময় হয়ে ওঠে। বিশ বছর ধরে এই এলাকা ছিল অবহেলিত। আমি ভাবলাম এরা আমার দেশের নাগরিক। সুতরাং এদের অবহেলিত রাখা ঠিক হবে না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধানের জন্য তিন সদস্যের কমিটি করি। পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্ত পরিবেশ কেন সেটার কারণ খুঁজতে চেষ্টা করি। আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম এই সমস্যাটি রাজনৈতিক সমস্যা। সুতরাং রাজনৈতিক সমস্যাটিকে রাজনৈতিকভাবে মীমাংসা করতে হবে। মিলিটারি দিয়ে এটির সমস্যার সমাধান হবে না।’

তিনি বলেন, ‘আমার সৌভাগ্য হয়েছিল ১৯৭০ সালে চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘোরার। সব জায়গায় আমি ঘুরেছি। বাছালং যাওয়ার চেষ্টা করি, ছোট হরিণ্যা, বড় হরিণ্যা ঘুরেছি। আমি দেখেছি পার্বত্য চট্টগ্রামের নৈসর্গিক সৌন্দর্য। এখানকার মানুষগুলো সহজ-সরল। সে জায়গায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলতে পারে না।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা এসে কমিটি করি। তৃতীয় পক্ষের সমঝোতা ছাড়া শান্তিচুক্তি করি। শুধু শান্তিচুক্তি নয়, শান্তিচুক্তির পাশাপাশি ১৮ জন অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করে। আমরা তাদের চাকরি ও পুনর্বাসন করি। তারা যে দাবি করেছে সে দাবি অনুযায়ী ভারত থেকে আসা শরণার্থীদের পুনর্বাসন করি।’

‘আমরা অধিকাংশ শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন করেছি। কিছু চুক্তি চলমান আছে। রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ, আবাসিক স্কুল, হাসপাতাল মোবাইল ফোনের ব্যবস্থা করেছি। যে সব জায়গায় বিদ্যুত পৌঁছানো যায়নি আমরা সে সব জায়গায় সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখানকার জমি অধিগ্রহণের জন্য যে সমস্যা দেখা দেয় তা হলো তাদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি সেভাবে দেওয়া হয় না। কারণ ভূমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ আছে। ব্রিটিশ আইনে যাই থাকুক না কেন আমাদের আইনের বিষয়টি মাথায় নিয়ে যদি তাদের ভূমির মালিকানা নিশ্চিত করা যায় তাহলে এ সমস্যা হয় না। এখানকার অধিবাসীরা নিজ নিজ ভূমির অধিকার নিয়ে বসবাস করবেন সেটাই আমরা চাই।’

তিনি বলেন, ‘যদিও আমরা কোটা বাতিল করেছি। পিএসসিকে নির্দেশ দিয়েছি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী যারা আছে তারা যেন সবসময় অগ্রাধিকার পায়। ২০ বছরেও এলাকার উন্নয়ন হয়নি, আমরা বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে উন্নয়ন কার্যক্রম করেছি। আমরা আবাসিক স্কুল করে দিচ্ছি। যাতে পাহাড় বেয়ে স্কুলে যাওয়ার সময় ছেলেমেয়েদের কষ্ট করতে না হয়।’

‘পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্রিজ করতে গিয়ে সেনাবাহিনীর ছয় সদস্য মারা গেছেন। বর্ডারগুলোয় আমরা নিরাপত্তাবেষ্টনী তৈরি করেছি। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় না থাকলে উন্নয়ন করা যায় না। আমি নিজেও অনেক জায়গায় গিয়েছি। বাছালং যেতে চেয়েছিলাম পারি নাই। সেখানে রাস্তা করে গিয়েছি। যেখানে বিদ্যুৎ নাই সেখানে আমরা সোলার প্যানেল করে দিয়েছি।’

পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স ভবন বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ জায়গা আমি চিনি। ছোটবেলায় আমরা খেলাধূলা করেছি। অফিসার্স ক্লাব জায়গা কেড়ে নিতে চেয়েছিল এমনকি মামলা পর্যন্ত করেছিল। সেই মামলা ঠেকিয়ে এই জমি পেয়েছি। কাজেই আমি আশা করি েই ভবনকে সুন্দরভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে।’

‘এই কমপ্লেক্সের ডিজাইন এমনভাবে করা হয়েছে যে যাতে কেউ এখানে দাঁড়ালে মনে হয় পার্বত্য চট্টগ্রামে এসে দাঁড়িয়েছি।’

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.