শতাধিক ব্লগার দেশ ছাড়ার অপেক্ষায়

0

একটি ইউরোপীয় লেখক অধিকার সংরক্ষণ সংগঠনে চারশ’রও বেশি আবেদন জমা হয়েছে শুধু বাংলাদেশ থেকে। কেউ স্বল্পকালীন, কেউ বা দীর্ঘমেয়াদী আশ্রয়ের আবেদন করেছেন। এদের অনেকেই ব্লগার। অনেকে আবার লেখালেখিই করেন না। কিন্তু ব্লগার হত্যায় কোনও না কোনওভাবে আতঙ্কিত বোধ করছেন বলেই আবেদন করেছেন তারা। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের মাধ্যমে বিদেশে নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে পেরেছেন এমন একজনের কাছ থেকে জানা গেল এ তথ্য।

ইতোমধ্যে ২০১৩ সালে আটক চার ব্লগারের দুজন দেশ ছেড়েছেন। তালিকায় আছেন সুব্রত শুভ, ক্যামেলিয়া, সন্ন্যাসি, মনির, সিদ্ধার্থ, শুভজিৎ ভৌমিক, অনন্য আজাদ, আসিফ মহিউদ্দিন, তারিক নামের ব্লগাররাও। দেশত্যাগের প্রক্রিয়ায় আছেন কমপক্ষে আরও ১৫ জন। সূত্র বলছে এরা সবাই জার্মানি, সুইডেন ও আমেরিকায় যাওয়ার চেষ্টা করছেন।

মৃত্যুর আগে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করতে গেলে পুলিশ তা গ্রহণ করেনি। সম্প্রতি খুন হওয়া ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয় ১৫ মে বেলা ১১টা ২৬ মিনিটে তার ফেসবুকে স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন এ কথা। নিলয়ের স্ট্যাটাস থেকে জানা যায়, জিডি করতে গেলে পুলিশ বলে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশ ছেড়ে চলে যান।

অনন্ত বিজয় নিহতের পর দেশত্যাগী ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিনের মাধ্যমে জানা যায়, সুইডেনের ভিসা চেয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন বিজয়। অনেক দিন ধরেই তিনি টের পাচ্ছিলেন কেউ না কেউ তাকে অনুসরণ করছে।

কয়েকবার আক্রমণের শিকার হওয়া ও হেফাজতের উত্থানের পর আটক চার ব্লগারের একজন আসিফ মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, যারা দেশে এখন আতঙ্ক বোধ করছেন তাদের কেউ কেউ পুলিশের কাছে যেতেও ভয় পাচ্ছেন। তারা মনে করছেন পুলিশের কাছে যাওয়া মানেই আরও বিপদ ডেকে আনা। ভয় পাচ্ছেন এই ভেবে যে, পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চাইতে গেলে উল্টো ৫৭ ধারায় মামলা দেয় কিনা।

২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত একে একে একই কায়দায় খুন হয় ১১ ব্লগার। ২০১৩ সালে ৭ জন, চলতি বছরের প্রথম ৮ মাসে ৪ জন। এ ছাড়া ২০১৩ সালে হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করা হয়েছে ৪ জনকে, ২০১৫ সালে ১ জনকে। ২০১৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি খুন হন অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তা এবং জঙ্গিবাদ ও ধর্মীয় উগ্রবাদবিরোধী অ্যাকটিভিস্ট জাফর মুন্সী। পরদিনই খুন হন ব্লগার ও গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী আহমেদ রাজীব হায়দার শোভন। সেই মাসেই ঢাকায় খুন করা হয় ব্লগার মামুন হোসেনকে। এরপর একে একে খুন হন সিলেটে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী জগজিৎ তালুকদার, বুয়েটের আরিফ রায়হান দ্বীপ, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম, বগুড়া জেলা সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক ও গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক জিয়াউদ্দিন জাকারিয়া।

চলতি বছরে খুন হন বিজ্ঞান লেখক ও মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান, বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার অনন্ত বিজয় দাস ও ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয়।

নিজেদের নিরাপত্তা কিভাবে নিশ্চিত করছেন জানতে চাইলে ব্লগারদের কেউই স্বনামে কথা বলতে রাজি হননি।

উল্লেখ্য ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করার অভিযোগে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী ব্লগারদের একাধিক তালিকা প্রকাশ করে। হেফাজতের পাশাপাশি আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত নামে একটি সংগঠন ৫৬ জনের একটি তালিকা করেছিল। তবে এর মধ্যে ৮৪ জনের হিট লিস্টই সবচেয়ে আলোচিত। তালিকার কয়েকজনকে খুন করেছে উগ্রপন্থীরা। প্রতিটি খুনের ঘটনার পর অনলাইনে বিভিন্ন সংগঠনের পরিচয়ে দায় স্বীকারও করা হয়েছে।

এ সব ঘটনার মধ্যে শুধু ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যায় অংশ নেওয়া দুজন আর অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে গ্রেফতার করা ছাড়া তদন্তে আর কোনও অগ্রগতি দেখাতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এমনকি তালিকায় যাদের নাম আছে তাদের নিরাপত্তার জন্যও তেমন কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। তদন্ত এগোয়নি কথাটা ঠিক নয়। ব্লগাররা ছদ্মনামে লেখালেখি করার কারণে তাদের চিহ্নিত করে নিরাপত্তা দিতে জটিলতা আছে। তারপরও খোঁজখবর রাখছি। উৎসঃ   বাংলা ট্রিবিউন 

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.