পারভেজ হত্যা মামলা: ৯ মাসেও গ্রেপ্তার হয়নি আসামীরা

0

নিজস্ব প্রতিনিধি::মিরসরাইয়ে প্রকাশ্যে দিবালোকে ঘুরছে বহুল আলোচিত পারভেজ হত্যা মামলার আসামীরা। প্রায় ৯ মাস পূর্বে দিনদুপুরে নিজ বাড়ির সামনে খুন হওয়া পারভেজ হত্যা মামলার আসামীরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী পারভেজের মা জাহেদা বেগম।

বর্তমানে হত্যা মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পেল পুলিশের তদন্ত কাজে বিশেষজ্ঞ ইউনিট ‘পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন’ (পিবিআই)। পিবিআই হেড় কোয়ার্টারের নির্দেশে মামলাটি জোরারগঞ্জ থানা থেকে হস্তান্তর করা হয়েছে।

২০১৭ সালের ১ আগষ্ট আব্দুর রহিম ড্রাইভারের পুত্র পারভেজকে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা করে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা। ঘটনার পরদিন ২ আগষ্ট নিহতের মা জাহেদা বেগম বাদী হয়ে জোরারগঞ্জ থানায় একটি মামলা (নং-৩/২২৮) দায়ের করেন। তিনিও সন্তানকে বাঁচাতে গিয়ে ডান হাতের কব্জিতে কিরিচের কোপে গুরুতর আহত হয়েছেন।

মামলার আসামীরা হলেন, ওই এলাকার আবুল কালামের পুত্র রুমন (২৫), বাংলা বাজারের মৃত মীর হোসেনের পুত্র রানা (২৮), নাহেরপুরের ইউছুফের পুত্র বেলাল (২৬), জসিমের উদ্দিনের পুত্র ফারুক (২৫), নুরুল হুদার পুত্র আরমান (২৬), বাংলাবাজারের শেখ জাহেদ (৩০), রাকিব (২৭), ডিপটির পুত্র আরিফ, নাহেরপুরের নুরুচ্ছফার পুত্র আরিফ (২৬), মৃত নাজিম উদ্দিনের পুত্র নাজমুল (২৭), বাংলাবাজারের রাসেল (২৪), নাহেরপুরের সেলিমের পুত্র নোমান (৩২), কেরানীর পুত্র মাসুক (২৬), মোবারকঘোনার আমিনুল হকের পুত্র সাইফুল (৩২), জোরারগঞ্জের জিন্নাহ’র পুত্র রাহাত (২৫) সহ অজ্ঞাতনামা আরো ১৫/২০ জন। মামলা সূত্রে জানা গেছে, নিহত পারভেজের সাথে আসামীদের দীর্ঘদিনের বিরোধ চলে আসছে। গত বছরের ৩১ জুলাই নিহতের ভাই রিয়াদকে স্থানীয় ৪ নং ধুম ইউনিয়ন অফিসে নিয়ে আসামীরা মারধর করে।

বিষয়টি স্থানীয় ৪ নং ধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের ভূঁইয়া জাহাঙ্গীরসহ ইউপি সদস্য দিদার জানত। ওই বছরের ১ আগষ্ট বিকেল ৪ টায় মরগাং গ্রামের হামিদ আলী মাঝি বাড়ির ঘাটার সামনে (নিজের বাড়ির) দিদার মেম্বারের ভাই রুমনের কাছে পারভেজ তার ভাইকে মারার বিষয়টি জানতে চায়। এর আধঘন্টা আগে মৌলভী বাজারেও আসামীদের সাথে ভাইকে পিটানোর বিষয়ে পারভেজের সাথে তর্ক বাঁধে আসামীদের। পারভেজ বিষয়টি জিজ্ঞাসা করিলে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা আসামীরা পারভেজকে লোহার রড, কিরিচ দিয়ে কোপাতে থাকে। পারভেজের আত্মচিৎতারে তার মা বাড়ি থেকে বের হয়ে ছেলেকে বাঁচাতে আসলে মায়ের ডান হাতের কব্জিতে কোপ লাগে।

মামলার বাদী নিহতের মা জাহেদা বেগম বলেন, আসামীরা এলাকায় প্রকাশ্য ঘোরাফেরা করছে। আমরা গরীব। আমার আরো একটি সন্তান আছে। ভয় লাগছে আমাদের। ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে আমার ডান হাতের কব্জিতে আসামীরা কুপিয়েছে। তাই মামলার কপিতে ডান হাতে স্বাক্ষর করতে না পারায় বাম হাত দিয়ে টিপ সই দিয়েছি। চিকিৎসক বলেছেন হাতটা অপারেশন করতে হবে। টাকার অভাবে তা করাতে পারছিনা। গ্রাম্য চিকিৎসক থেকে যে কয়দিন ওষুধ খাই ভালো থাকি। পরে হাতের ক্ষত আর ব্যাথা আবার বেড়ে যায়। আমি আমার ছেলের হত্যার বিচার চাই। আমার সামনে আমার ছেলেকে কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে ওরা। তিনি বলেন, আসামীরা প্রকাশ্য ঘুরছে। এদের গ্রেফতার না করে পুলিশ মাঝে মাঝে বাড়ি এসে আমাকে ওটা সেটা জিজ্ঞাসা করে সান্তনা দেন।

মামলার আগের তদন্তকারী কর্মকর্তা জোরারগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, চাঞ্চল্যকর মামলাটি আসামীদের ধরতে কখনো রাতে কখনো দিনে পুলিশ একের পর এক অভিযান চালাচ্ছে। আসামীদের ধরতে পুলিশ তৎপর।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর চট্টগ্রামের পরিদর্শক ওমর ফারুক বলেন, মামলাটি তদন্ত কাজ চলছে। মামলার আসামীদের ধরতে চট্টগ্রাম থেকে ৫ বার গিয়েছি। নিহতের বাড়িতেও ৩ বার গিয়েছি। আমাদের যেতে পথিমধ্যে ২ ঘন্টা দেরী হয়। যে ইনফরমেশন পেয়ে আসামীদের গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে যাই সেখানে গিয়ে আসামীদের পাওয়া যায়না। তাই জোরারগঞ্জ থানাকে লিখিত দিয়েছি আসামীদের গ্রেফতারে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.