হালদার মাছ মারব না,দেশের ক্ষতি করব না

0

সিটি নিউজ,চট্টগ্রাম :   নদীকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে জনজীবন, মানবসভ্যতা ও সংস্কৃতি। দূরে-কাছে যাতায়াত, পারাপার, মাছধরা, ব্যবসা-বাণিজ্য, নাইতে যাওয়া, পানি সংগ্রহ করা কত বিচিত্র ব্যবহার তার! কিন্তু মানুষই এই নদীকে নষ্ট করেছে। নদীগুলো তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য হারিয়েছে। ফলে হালদা নদী স্বাভাবিকতা হারিয়ে অস্বাভাবিকভাবে বৈরী হয়ে উঠেছে।

পরিবেশবাদী সংগঠন হালদা নদীকে বাচাঁতে আজ শনিবার ২৩ জুন দুপুরে চট্টগ্রামের মদুনাঘাট এলাকায় হালদা নদীতে নির্মিত সেতু সংলগ্ন সড়কের দুই পাশে মানববন্ধনে জড়ো হয় হাটহাজারী রাউজান উপজেলার দক্ষিণ মাদার্শা, শিকারপুর,উত্তর মাদার্শা, উরকিচর ও বুড়িশ্চর ইউনিয়নের বাসিন্দারা।

তাদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে মানববন্ধনে যোগ দেয় পরিবেশবাদী সংগঠন হালদা রক্ষা কমিটি ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)।

সমাবেশে অংশ নেওয়াদের হাতে ব্যানারে লেখা ছিল- ‘বাংলাদেশের নদী, বাংলাদেশের প্রাণ/ দেশ বাঁচাতে নদী বাঁচান’, ‘নদী আমার, জমি আমার/ শিল্প তোমার, বর্জ্য তোমার’, ‘চাষের জমিতে বর্জ্য কেন?’, ‘হালদার মাছ মারব না, দেশের ক্ষতি করব না’।

অবিলম্বে হালদা, সংলগ্ন সাত খাল ও এলাকার জলাশয় দূষণ বন্ধের দাবি জানানো হয় ওই সমাবেশ থেকে।

পাশাপাশি হালদা নদী ও এলাকার পরিবেশ রক্ষার এ দাবি আদায়ে পরবর্তীতে আরও বৃহত্তর কর্মসূচি পালনেরও ঘোষণা আসে।

হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, হালদাকে বাঁচাতে চাইলে অবিলম্বে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করতে হবে। হালদার আশে পাশে শাখা খাল বর্জ্যমুক্ত করতে না পারলে হালদা নদীকে রক্ষা করা যাবেনা।

“বায়েজিদ থেকে কুলগাঁও নন্দীর হাট পর্যন্ত সব কারখানার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে খালে। নদীর সাথে যুক্ত খাল ও সংলগ্ন জনপদের জমি ও জলা পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। খাল বেয়ে সেসব বর্জ্য এসে পড়ছে হালদায়।

মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, সাম্প্রতিক সময় বন্যার জলে ভেসে আসা শীল্পবর্জ্য হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমিতে ছড়ি পড়ে হালদা সহ আশে পাশে জলসায় বিপুল পরিমান মাছ মারা যায়।কারন অনুসন্ধানে দেখা যায় শিল্পবর্জ্যের রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া ফলে এমন বিপর্যয় হয়।

চিডিএর বোর্ড সদস্য জসিম উদ্দিন শাহ্ বলেন, “হালদা কে বাঁচাতে হলে হাটাখী, খন্দকিয়া, মাদারী খালকে রক্ষা করতে হবে, আমরা শিল্প ট্রতিষ্ঠানে বিরুদ্ধে নই, কিন্তু শিল্পবর্জ্যে বিরুদ্ধে, তারা এই বর্জ্যকে লোকালেয়ে ছড়িয়ে দিয়ে আজ জীববৈচিত্র্যকে হুমকিতে ফেলছে। শিল্প কারখানার বর্জে্যর দূষণে এলাকার বেশিরভাগ পুকুর নষ্ট হয়ে গেছে।”

শিকারপুর চেয়ারম্যান আবু বক্কর বলেন, “হালদার মত অনন্য নদী বিশ্বে বিরল। কিন্তু আমাদের অবহেলায় নদীটি মরতে বসেছে। শুধু হালদা নয় আশে পাশে যে খাল গুলো আছে সেগুলোকেও রক্ষা করতে হবে তাহলে পরিবেশ রক্ষা হবে।”

‘দূষণ হটাও, পরিবেশ বাঁচাও, হালদা বাঁচাও’ এই স্লোগান নিয়ে সচেতন নাগরিক সমাজ এ কর্মসূচির আয়োজন করে।

সচেতন নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম মুন্না বলেন, সমাবেশ থেকে অবিলম্বে শিল্প ও আবাসিক বর্জে্যর দূষণ বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে।

“তা না হলে পরবর্তীতে আমরা জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দেব। এরপর ধারাবাহিকভাবে পরিবেশ অধিদপ্তর ও দূর্ষণকারী শিল্প প্রতিষ্ঠান ঘেরাও করব।”

বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, রাজনীতিবিদ রাসেদুল আলম,১১নং পশ্চিম গুজরা ইউনিয়ন পরিষদ শাহাবুদ্দীন আরিফ,
সমাজ সবেক এম.এ সবুর, সমাজ সেবক কামাল উদ্দিন, মদুনাঘাট বাজার কমিটির সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরী,রাশেদ খান মেনন, জাহাঙ্গীর সুমন,ফরিদুল আলম মিঠু,

পলাশ বড়ুয়া,লোকমান হোসেন,রুসাঙ্গীর আলম,আবুল কাশেম হিরু,মহিউদ্তিন মনি, জমির উদ্দিন, মহিউদ্দিন সুমন। ইঞ্জিনিয়ার মহিউদ্দন ও এস এম মজিবুল সঞ্চালনে সমাবেশে সংহতি জানায় আহমদিয়া জনকল্যাণ সংস্থা,রেসকোর্স সেচ্ছাসেবী সংগঠন,ব্রিগেড, হাটহাজারী ফেডারেশন, মদুনাঘাট বাজার সমিতি, উড়কিরচর জনতা সংঘ ।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.