পরিবেশটা ছিল অন্ধকারময়, চিৎকার করছিল সবাই…

0

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দুই শিশু সন্তান ও স্ত্রীকে হারিয়ে জীবনে বেঁচে থাকার আর কোনো সম্বল খুঁজে পাচ্ছেন না আব্দুল্লাহ কুর্দি। স্ত্রী-সন্তানদের কফিনের পাশে বসে কান্নারত আব্দুল্লাহ’র চাওয়া একটাই— বাকি জীবন তাদের কবরের পাশে বসে কাটিয়ে দেওয়া।

চিনেছেন এই আব্দুল্লাহ কুর্দিকে? হাজারও বিখ্যাত লোকদের ভিড়ে আব্দুল্লাহ কুর্দিকে অচেনা লাগারই কথা। এই আব্দুল্লাহ হলেন আইলান কুর্দির বাবা। ৩ বছর বয়সী আইলান, যার লাশ পাওয়া গেছে গ্রিসের একটি সৈকতে। সিরীয় ওই শিশু শরণার্থীর লাশের ছবি নাড়িয়ে দিয়েছে বিশ্ববিবেককে।
কোস সৈকতে গত বুধবার ভেসে আসা আইলান, তার ৫ বছর বয়সী ভাই গালিপ ও মা রেহানের (৩৫) লাশ সিরিয়ার কোবানির উদ্দেশে পাঠানো হয়েছে। লাশগুলো বৃহস্পতিবার তুরস্কের বদরামের কাছে মুগলা শহরের একটি মর্গে এসে পৌঁছায়। সেখানে লাশের পাশে বসে অবিরত কাঁদছিলেন ওই নির্মম ঘটনার সাক্ষী আব্দুল্লাহ।

রয়টার্স জানিয়েছে সাংবাদিকদের আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমি শুধু আমার সন্তান, স্ত্রী ও বাকিদের কবরের পাশে বসে থাকতে চাই।’ এ সময় তার সব স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গেছে বলেও উল্লেখ করেন আব্দুল্লাহ।

তিনি বলেন, ‘এখানে (সিরিয়া) আমাদের ক্ষেত্রে কী ঘটেছে, আমরা যুদ্ধ থেকে রেহাই পেতে শরণার্থীর জীবন বেছে নিয়েছি। আমরা চাই, বিশ্ববাসী এটা দেখুক।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই বিশ্ববাসী আমাদের দিকে নজর দিক। যেন তারা অন্যদের ক্ষেত্রে যা ঘটছে তা প্রতিরোধ করতে পারে। এটাই যেন শেষ হয়।’

তুরস্কের হারিয়েত পত্রিকাকে আব্দুল্লাহ জানান, তিনি পরিবারসহ গ্রিসে যাওয়ার জন্য দুইবার মানবপাচারকারীদের অর্থ দেন। কিন্তু সেই চেষ্টাগুলো ব্যর্থ হয়। অবশেষে তারা শেষ চেষ্টায় গ্রিসগামী নৌকায় উঠতে সক্ষম হন। কিন্তু নৌকাটি সমুদ্রের মাঝে ডুবে যায়।
তিনি বলেন, ‘আমি আমার স্ত্রীর হাত ধরে ছিলাম। আমার হাত থেকে শিশুরা পিছলে যায়। আমরা নৌকাটি আঁকড়ে ধরে থাকতে চেয়েছিলাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘পরিবেশটা ছিল অন্ধকারময় ,সবাই ভয়ে চিৎকার করছিল । স্ত্রী-সন্তানরা আমার ডাক শুনতে পায়নি।’

সিরিয়া থেকে গ্রিসে যাওয়ার পথে কোস দ্বীপে গত বুধবার দুটি নৌকাডুবির ঘটনায় ১২ জন মারা যায়। এ ঘটনার পরপরই লাল টি-শার্ট ও নীল ট্রাউজার পরিহিত আইলানের লাশের ছবি নিয়ে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় উঠে। বিশ্বের নামিদামি গণমাধ্যম থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইউরোপীয় শরণার্থী নীতির কঠোর সমালোচনা করে তা পরিবর্তনের আহ্বান জানানো হয়।
বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপে এরদোয়ান ফরাসী প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.