রথযাত্রা উৎসবে সরকারি ছুটি ঘোষণাসহ ৬ দফা দাবি  

0

সিটি নিউজ ডেস্কঃ পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ মানুষের মিলনোৎসব হল রথযাত্রা উৎসব। রথযাত্রা উৎসবের উৎপত্তি ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের অন্তর্গত শ্রীজগন্নাথ পুরীধাম। পুরীধামে বিরাজিত আছেন জগতের অধীশ্বর, পরম দয়ালু, জীবের পরম আশ্রয়দাতা পরমেশ্বর ভগবান জগন্নাথ।

জগন্নাথদেবের বিভিন্ন বিস্ময়কর ও অদ্ভুতলীলা থেকে উপলদ্ধি করা যায় তিনি মন্দিরে স্বয়ং বিরাজিত। কলিযুগের অধঃপতিত ধর্মবিমুখ জীবদের যারা মন্দিরে যেতে সময় পায় না তাদের দর্শন দানের মাধ্যমে জগন্নাথদেব তার অহৈতুকী কৃপা বিতরণ করেন। রথযাত্রা হল পৃথিবীর একমাত্র উৎসব যেখানে ভগবান মন্দির থেকে বের হয়ে এসে রথে আরোহন করে নগর পরিক্রমা করেন। এই হল জগন্নাথদেবের মহিমা।

আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) এর প্রতিষ্ঠাতা আচার্য্য জগৎগুরু শ্রীল প্রভুপাদের কল্যাণে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান উৎসব জগতের নাথ জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উৎসব আজ সারা বিশ্বের পায় ১২৭টি দেশের সব বড় বড় শহরে সারা বৎসরব্যাপী হাজার হাজার বিদেশী ধর্মপ্রাণ নরনারীর অংশগ্রহণে মহাসমারোহে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

যার মাধ্যমে এই বাংলার কৃষ্টি, প্রথা, সংস্কৃতি, ভাষা, ঐতিহ্য সারা বিশ্বের প্রতি নগরাদি গ্রামে প্রচারিত ও সুপ্রতিষ্ঠিত। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার গর্ভভূমি এই দেশে ধর্মীয় উৎসবসমূহ যথাযোগ্য মর্যাদায় সবার অংশগ্রহণের উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হওয়ার ফলশ্রুতিতে জঙ্গীবাদ, মৌলবাদ ও সর্বপ্রকার অশুভশক্তি শতবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠার চেষ্টা করেও বার বার দমিত হয়েছে।

বর্তমান সরকার ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার এর স্থলে ধর্ম যার যার উৎসব সবার সংযোজন করেছেন। সংখ্যালঘুদের উপর বার বার পরিকল্পিত হামলা সরকার গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিচ্ছে না। তাই প্রতিনিয়ত মঠ-মন্দিরে হামলা, গুম হত্যা ও ধর্ষন বেড়েছে। এসব গুপ্ত হত্যা করে দেশ থেকে সংখ্যালঘুদের বিতাড়িত করার একটা অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। সরকার যদি এসব হত্যাকা ও মূল হোতাদের গ্রেপ্তারপূর্বক শাস্তি প্রদান না করেন তাহলে দেশ অনেক দূর পিছিয়ে যাবে।

আজ মঙ্গলবার ( ১০ জুলাই) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আন্তজার্তিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইস্কন) চট্টগ্রাম আয়োজিত শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের ২১তম রথযাত্রা‘১৮ উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচী তুলে ধরেন। সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় নন্দনকানন ইস্কন মন্দিরের সভাপতি পন্ডিত গদাধর দাস ব্রহ্মচারী উপরোক্ত মন্তব্য করেন। তিনি তার লিখিত বক্তব্যে আরো বলেন, বিশ্বব্যাপী সনাতন ধর্ম প্রচারে অগ্রগামী সংগঠন ইস্কনের বিভিন্ন মঠ, মন্দির ও ভক্তদের উপর হামলা বাংলাদেশের ধর্ম নিরপেক্ষ শান্তিপ্রিয় মানুষের হৃদয়কে বিদীর্ণ করেছে।

অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে সেই স্বাধীন বাংলাদেশে এইসব ঘটনা নিশ্চয়ই বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। যে বাংলাদেশে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে প্রার্থনাকালে ভক্তদের উপর হামলা করা হয় তা কোনো স্বাধীন বাংলাদেশের চিত্র হতে পারে না।

সাংবাদিক সম্মেলনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জাতীয় নেতৃবৃন্দ ও চট্টগ্রাম ইস্কন নেতৃবৃন্দ রথযাত্রা উৎসবের দিন রাষ্ট্রীয়ভাবে সরকারি ছুটি ঘোষণা, সনাতন ঐতিহ্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র সদৃশ বিলুপ্ত প্রায় মন্দির স্থাপনা, স্মৃতি স্থান ও তীর্থস্থান সমূহ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে সংরক্ষণ ও রক্ষণা-বেক্ষণ ও প্রসারের জন্য সরকারি বরাদ্দ নিশ্চিত করা, নন্দনকাননস্থ রাধামাধব মন্দির, লোকনাথ মন্দির ও বিদ্যালয়ের অর্পিত সম্পত্তি অবমুক্ত করা, হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টকে হিন্দু ফাউন্ডেশনে রূপদান করা, রথযাত্রায় অংশগ্রহণকারী জনগণের ভোগ্য খাদ্যবস্তু সমূহ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রদান করা, প্রত্যেক মঠ, মন্দির ও দেবোত্তর সম্পত্তি সমূহের নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা প্রদান করার দাবি জানান।

এতে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন চট্টগ্রাম ইস্কনের বিভাগীয় রিজিওন্যাল সেক্রেটারী চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী ,পুন্ডরিক বিদ্যানিধি স্মৃতি সংসদের সভাপতি প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহ, কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট চন্দন তালুকদার, চট্টগ্রাম মহানগর হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নিতাই প্রসাদ ঘোষ, কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমী পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট তপন কান্তি দাশ, বাংলাদেশ হিন্দু ফাউন্ডেশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান দিলীপ মজুমদার,  ইসকন নন্দনকানন সাধারণ সম্পাদক তারণ নিতানন্দ দাস ব্রহ্মচারী, কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমী পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক প্রকৌশলী আশুতোষ দাশ, মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অরবিন্দ পাল অরুণ, চট্টগ্রাম বিভাগীয় গৃহস্থ কাউন্সিল সদস্য বলরাম করুনা দাস, গৌর পূর্ণিমা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুমন চৌধুরী।

উক্ত সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ইস্কন ন্যাশনাল কমিটির সদস্য সর্বমঙ্গল গৌর দাস, যুগ্ম সম্পাদক মুকুন্দ ভক্তি দাস ব্রহ্মচারী, কোষাধ্যক্ষ সুবলসখা দাস ব্রহ্মচারী, শেষরূপ দাস ব্রহ্মচারী, অপূর্ব মনোহর দাস ব্রহ্মচারী, লীলেশ্বর গোবিন্দ দাস প্রমুখ।

ইসকন নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও শান্তিকামী ধর্মনিরপেক্ষ সাধারণ মানুষ এ দেশের সরকারের উপর আস্থাশীল। তাদের বিশ্বাস সরকার যেকোনো মুহূর্তে অপরাধীদের আইনি প্রক্রিয়ায় বিচার করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করবেন এবং বাংলাদেশের সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও বাংলাদেশে সকল ইস্কন মন্দিরে নিরাপত্তা বিধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

সাংবাদিক সম্মেলনে আগামী ১৪ জুলাই থেকে ২২ জুলাই‘১৮ পর্যন্ত নন্দনকানন শ্রীশ্রী রাধামাধব মন্দির এবং ডিসি হিল প্রাঙ্গন থেকে বিভাগীয় কেন্দ্রীয় ইস্কনের তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রাম ইসকন আয়োজিত ২১তম রথযাত্রা উৎসব আড়ম্বরভাবে উদযাপন করা হবে এবং ৯ দিনব্যাপী জে. এম সেন হলে ভাগবদ সপ্তাহ পালন হবে।

প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও আগামী ১৪ জুলাই হতে ২২ জুলাই পর্যন্ত ৯ দিন ব্যাপি বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার শুভ সুচনা করার জন্য মায়াপুর ভারত হতে আগত ইসকনের অন্যতম সন্যাসী শ্রীমৎ অমিয় বিলাস স্বামী মহারাজ, বাংলাদেশের সিনিয়র সহসভাপতি শ্রীমৎ ভক্তিপ্রিয়ম্ গদাধর গোস্বামী মহারাজ, ৭দিন ব্যাপী ভাগবতম সপ্তাহ প্রদান করবেন সংকীর্তন ও প্রচার বিভাগের পরিচালক শ্রীপাদ বেণুধারী দাস ব্রহ্মচারী, মায়াপুর চন্দ্রোদয় মন্দিরের জেনারেল ম্যানেজার জগৎগুরু জয়দেব দাস ব্রহ্মচারী চট্টগ্রামে শুভ আগমন করবেন।

অনুষ্ঠানমালায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী, মেয়র, সংসদ সদস্য, ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার, বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসকসহ সুশীল সমাজের বিভিন্ন ব্যাক্তিবর্গ উপস্থিত থাকবেন । মহাশোভাযাত্রা নন্দনকানস্থ শ্রী শ্রী রাধামাধব মন্দির সম্মুখে ডিসি হিল প্রাঙ্গন থেকে শুরু হয়ে চেরাগী পাহাড় – আন্দরকিল্লা – লালদিঘীর পাড় – কোতোয়ালী – নিউ মার্কেট – বোস ব্রাদার্স মোড় – নন্দনকানন গৌর নিতাই আশ্রম এসে শেষ হবে।

২২জুলাই উল্টো রথযাত্রা নন্দনকানন গৌর নিতাই আশ্রম হতে শুরু করে উল্টো পথে নন্দনকানন শ্রীশ্রী রাধামাধব মন্দিরে এসে শেষ হবে। সেখানে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার নরনারীসহ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীবৃন্দ ব্যানার, প্লাকার্ড, ফেস্টুন, পৌরাণিক সাজ ও বাদ্যযন্ত্র নিয়ে যোগদান করবেন। সর্বোপরি উক্ত রথযাত্রায় কঠোর নিরাপত্তা প্রদানের জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবী জানান।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.