শুভ জন্মাষ্টমী আজ

0

সিটিনিউজবিডি : আজ শুভ জন্মাষ্টমী। সনাতন হিন্দু ধর্মের প্রবর্তক ও মহাবতার পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন। হিন্দু শাস্ত্র মতে, প্রায় সাড়ে ৫ হাজার বছর আগে দ্বাপর যুগে ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে গভীর রজনীতে শ্রীকৃষ্ণ ধরাধামে আবির্ভূত হন।

দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন এবং দুর্জনের বিরুদ্ধে শান্তিপ্রিয় সাধুজনের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কংসের কারাগারে জন্ম নেন তিনি।

উৎসবটি গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে প্রতিবছর মধ্য-আগস্ট থেকে মধ্য-সেপ্টেম্বরের মধ্যে কোনো এক সময়ে পড়ে। জন্মাষ্টমী উপলক্ষে সরকার শনিবার ছুটি ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনসহ বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলে এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হবে।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ উপলক্ষে শনিবার পৃথক বাণীতে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এছাড়া রাষ্ট্রপতি বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত বঙ্গভবনে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিবস শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি সমাজে বিদ্যমান ভ্রাতৃত্ব ও বন্ধুত্বের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে তা জাতীয় অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি অর্জনে কাজে লাগানোর জন্য দেশের সকল ধর্মাবলম্বীদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি ‘জন্মাষ্টমী’ উৎসবের সাফল্য কামনা করেন।

মো. আবদুল হামিদ বলেন, শুভ জন্মাষ্টমীতে আমি দেশ ও দেশের বাইরের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। তিনি বলেন, মানবপ্রেমের প্রতীক শ্রীকৃষ্ণের ভাবধারা ও আদর্শ ছিল সমাজ থেকে হানাহানি দূর করে মানুষে-মানুষে অকৃত্রিম ভালবাসা ও সম্প্রীতির বন্ধন গড়ে তোলা। তিনি (শ্রীকৃষ্ণ) সর্বদা মানবতার মুক্তির পথ খুঁজেছেন। সৃষ্টিকর্তার বন্দনা ও আরাধনার মাধ্যমে মানুষে মানুষে সম্প্রীতির আবহ সৃজনে তাঁর আদর্শ সমভাবে প্রযোজ্য।

জন্মাষ্টমী উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান সরকার দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এখানে সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষ যুগ যুগ ধরে মিলেমিশে বসবাস করে আসছে। তিনি শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মদিন জন্মাষ্টমী উপলক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বী সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।

শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে কেন্দ্রীয়ভাবে দুই দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শনিবার সকাল ৯টায় দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় শ্রী শ্রী গীতাযজ্ঞ এবং মন্দিরের পুকুরে পোনা অবমুক্তকরণ। এ ছাড়া বিকেল ৪টায় ঐতিহাসিক কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমী মিছিলে অংশগ্রহণ।

ঐতিহাসিক জন্মাষ্টমী মিছিলের উদ্বোধন করেন ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তরের মেয়র সাঈদ খোকন এবং আনিসুল হক। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।

মিছিলটি ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির হয়ে পলাশী বাজার-জগন্নাথ হল-কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার-দোয়েল চত্বর-হাইকোর্ট জাতীয় প্রেসক্লাব-পল্টন-শহীদ নূর হোসেন স্কয়ার-গোলাপ শাহ্ মাজার-গুলিস্তান মোড়-নবাবপুর রোড-রায়সাহেব বাজার-বাহাদুর শাহ্ পার্কে গিয়ে শেষ হয়।

এই উপলক্ষে চট্রগ্রাম জম্মাষ্টমী উৎযাপন পরিষদ ও বিভিন্ন সংগঠন নানা অনুষ্টানের আয়োজন করেছেন। শনিবার সকালে চট্রগ্রাম মহানগরের জে এম সেন হল খেকে একটি র‌্যালি বের করে শহরের বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ করে।

শাস্ত্রীয় বিবরণ ও জ্যোতিষ গণনার ভিত্তিতে লোকবিশ্বাস অনুযায়ী কৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল খ্রীষ্টপূর্ব ৩২২৮ সালে ১৮ অথবা ২১ জুলাই। মথুরা নগরীতে অত্যাচারী রাজা কংসের কারাগারে। তিনি বসুদেব ও দেবকীর অষ্টম পুত্র। তাঁর পিতামাতা উভয়ের যাদববংশীয়। দেবকীর দাদা কংস, তাঁদের পিতা উগ্রসেনকে বন্দী করে সিংহাসনে আরোহণ করেন।

একটি দৈববাণীর মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন যে দেবকীর অষ্টম গর্ভের সন্তানের হাতে তাঁর মৃত্যু হবে। এই কথা শুনে তিনি দেবকী ও বসুদেবকে কারারুদ্ধ করেন এবং তাঁদের প্রথম ছয় পুত্রকে হত্যা করেন। দেবকী তাঁর সপ্তম গর্ভ রোহিণীকে প্রদান করলে, বলরামের জন্ম হয়। এরপরই কৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেন। কৃষ্ণের জীবন বিপন্ন জেনে জন্মরাত্রেই দৈবসহায়তায় কারাগার থেকে নিষ্ক্রান্ত হয়ে বসুদেব তাঁকে গোকুলে তাঁর পালক মাতাপিতা যশোদা ও নন্দের কাছে রেখে আসেন। কৃষ্ণ ছাড়া বসুদেবের আরও দুই সন্তানের প্রাণরক্ষা হয়েছিল। প্রথমজন বলরাম (যিনি বসুদেবের প্রথমা স্ত্রী রোহিণীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন) এবং সুভদ্রা (বসুদেব ও রোহিণীর কন্যা, যিনি বলরাম ও কৃষ্ণের অনেক পরে জন্মগ্রহণ করেন)।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.