রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘে বাংলাদেশের ৪ দফা

0

সিটি নিউজ ডেস্ক :: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পরিবেশ তৈরিতে চারটি পদক্ষেপ বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ। মঙ্গলবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে এসব পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন।

রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মঙ্গলবার এক উন্মুক্ত ব্রিফিং -এর আয়োজন করে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। এতে বক্তব্য রাখেন সংস্থাটির মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজ, ইউএনডিপি’র অ্যাসোসিয়েট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর তেগেগনিঅর্ক গেট্টু এবং ইউএনএইচসিআর-এর শুভেচ্ছা দূত ও একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী কেইট্ ব্লানশেট।

ওই ব্রিফিংয়ে রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন গত এক বছর ধরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা ইস্যুটি সামনে রেখে এর সমাধানে কাজ করে যাওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, ‌‘রোহিঙ্গাদের মানবিক সহযোগিতা প্রদানের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের পদক্ষেপসমূহের টেকসই বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও উদারভাবে এগিয়ে আসতে হবে। তা না হলে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা ও আশ্রয়দানকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য এটি মারাত্মক হুমকি হয়ে দেখা দেবে।’

মানবাধিকার কাউন্সিলের স্বাধীন ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের রিপোর্টের উদ্বৃতি দিয়ে রাষ্ট্রদূত মাসুদ বলেন, মিয়ানমারের ফেরত যাওয়ার ব্যাপারে রোহিঙ্গাদের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাস তৈরি করার জন্য মিয়ানমারকেই এগিয়ে আসতে হবে। রাখাইন প্রদেশে স্থায়ী প্রত্যাবাসনের পরিবেশ তৈরি হলেই কেবল বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা ফিরে যাওয়ার জন্য স্বপ্রণোদিত হয়ে এগিয়ে আসবে।

এ ক্ষেত্রে প্রত্যাবাসনের পরিবেশ তৈরিতে তিনি মিয়ানমার কর্তৃক চারটি আশু পদক্ষেপ বাস্তবায়নের সুপারিশ করেন। এগুলো হলো-

১. রাখাইন প্রদেশের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাম ও শহরগুলোতে প্রয়োজনীয় মানবিক ও উন্নয়নমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নে ইউএনডিপি ও ইউএনএইচসিআর-কে বাধাহীনভাবে প্রবেশাধিকার দিতে হবে, যা মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পাদিত তাদের সমঝোতা স্মারকে স্পস্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

২. বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্তে আটকে থাকা কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত নেওয়া এবং ফেরত না নেওয়া পর্যন্ত মিয়ানমারের পক্ষ থেকেই তাদের মানবিক সহায়তা প্রদান করতে হবে।

৩. রাখাইন স্টেটের আইডিপি ক্যাম্প উন্মুক্ত করে দিতে হবে এবং সেখানে আটক মানুষেরা যাতে নিজ বাসভূমিতে বা তাদের অন্য কোনো পছন্দনীয় স্থানে পূর্ণ অধিকার ও স্বাধীনতা নিয়ে টেকসইভাবে প্রত্যাবর্তন করতে পারে তার ব্যবস্থা নিতে হবে।

৪. রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বিশ্বাস ও পূর্বাবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে এবং হিংসা উদ্রেককারী বক্তব্য ছড়ানো যা সহিংসতা ও উত্তেজনা সৃষ্টি করে তা দমন করতে হবে।

মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আস্থা পুনরুদ্বারের মাধ্যমে তাদেরকে স্বেচ্ছায় নিজভূমিতে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে অনতিবিলম্বে পদক্ষেপ নেবে বলে আশা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রদূত।

ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাজ্যের কমনওয়েলথ ও জাতিসংঘ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী লর্ড তারিক মাহমুদ আহমদ। নিরাপত্তা পরিষদের ১৫টি সদস্য রাষ্ট্রের বাইরে এই সভায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার বক্তব্য প্রদান করে।

জাতিসংঘ মহাসচিব গত জুলাই মাসে তার কক্সবাজার সফরের সময় বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের যে সকল মর্মস্পর্শী বর্ণনা শুনেছেন তা এই সভায় উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে এক বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। এই সমস্যা অনির্দিষ্টকাল ধরে চলতে পারে না। নিরাপত্তা পরিষদ প্রেসিডেন্সিয়াল স্টেটমেন্ট গ্রহণে একতা দেখিয়েছিল, এই একতা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন যদি আমরা যথাযথ কাজের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের দাবি পূরণ করতে চাই।’

এ সময় কফি আনান কমিশনের সুপারিশমালার পূর্ণ বাস্তবায়নের কথা পুনরুল্লেখ করেন আন্তোনিও গুতেরেজ। জাতিসংঘ এবং এর বিভিন্ন সংস্থাসমূহকে রাখাইন প্রদেশে বাধাহীন প্রবেশাধিকার দেওয়ার জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.