‘বন্দর মুজিব’ এর মোড়ক উন্মোচন

0

সিটি নিউজ ডেস্ক :: বন্দর মুজিব বাস্তবায়িত হলে খুলে যাবে মহাসম্ভাবনার মহাদিগন্ত। এটি হয়ে উঠবে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার মহাবন্দর। বাংলাদেশ হয়ে উঠবে আন্তর্জাতিক বানিজ্যের সিংহদ্বার ও গুরুত্বপূর্ন  নৌ জংশন। বিশাল সমুদ্রসীমা ও মহীসোপানের যে মালিকানা বাংলাদেশ পেয়েছে তাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতেও প্রয়োজন বন্দর মুজিবের মত মহাপরিকল্পনা।

আজ দুপুরে চট্টগ্রামে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার হলে ইন্জিনিয়ার মুনিরুল আলম এর গবেষনা গ্রন্থ “বন্দর মুজিব” এর মোড়ক উন্মোচন ও প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন আলোচকরা।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে বন্দর মুজিব গবেষনামূলক বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম। 

এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন বইটির প্রকাশক বিশিষ্ট সাংবাদিক জামাল উদ্দিন, জাতীয় নদী কর্ণফুলী পরিষদের আহবায়ক সরোয়ার আমিন বাবু,  হাতিয়া জনকল্যাণ সমিতি চট্টগ্রামের সাধারন সম্পাদক খলিলউল্লাহ চৌধুরী সাকিব, শিক্ষাবিদ আলতাফ হোসেন, সমাজসেবক আশরাফুল ইসলাম সহ অন্যান্যরা।

চেম্বার সভাপতি তার বক্তব্যে বলেন, বন্দর মুজিব বইটিতে অনেক কিছু শেখার ও জানার আছে।বন্দর ব্যবস্থাপনা, বন্দর প্রযুক্তি,  আমদানি রফতানী, বিশেষ করে নিরাপদ শিপিং ব্যবসার অনন্য পরিকল্পনা  এই বইটি। তিনি বইটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের   যথাযত পর্যায়ে উপস্থাপন করার আশ্বাস দেন, যেন বন্দর নীতি নির্ধারকগন  বন্দর মুজিব বাস্তবায়নে প্রচেষ্টা নিতে পারেন।

 অনুষ্ঠানে বইটির লেখক ইঞ্জিনিয়ার মনিরুল আলম বিস্তারিতভাবে একটি ভিডিও এনিমেশনের মাধ্যমে সম্ভাবনাময় মহাবন্দরটির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

এসময় তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের কর্ণফুলী নদীতে সমুদ্রগামী জাহাজ ভেড়ার জন্য ৩০টি জেটি রয়েছে, যা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। ইপিজেডের কাছে সমুদ্রতীরবর্তী এলাকার যে স্থানে বে-টার্মিনাল নির্মাণের কার্যক্রম চলছে এর পাশাপাশি  ৩০০ জাহাজ ভেড়ার সক্ষমতা সম্পন্ন ‘বন্দর মুজিব’ পরিকল্পনাটি দেশের জন্য অনেক বেশি লাভজনক হবে। পরিকল্পনা অনুসারে ইপিজেডের কাছে উত্তর পতেঙ্গা থেকে উত্তর হালিশহর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৮ কিলোমিটার পর্যন্ত অঞ্চলে এই বন্দর মুজিব প্রতিষ্ঠা করা যাবে৷

তিনি আরো জানান, এই পরিকল্পনাটি করার ব্যাপারে তার দীর্ঘদিনের গবেষণা রয়েছে। বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনে চাকরি জীবনে তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন বড় বড় সামুদ্রিক বন্দরে অবস্থান করেছেন। আর তখন থেকেই তিনি বাংলাদেশে যাতে বড় এবং অত্যাধুনিক আন্তর্জাতিক সমুদ্র বন্দর প্রতিষ্ঠা করা যায় তার স্বপ্ন দেখেছেন।

২০১০ সালে অবসরে যাওয়ার পর থেকে তিনি এ ব্যাপারে নিরবিচ্ছিন্ন গবেষণা করেছেন। আর সেই গবেষণার ফল হল এই ‘বন্দর মুজিব’ পরিকল্পনা। ৩টি পদ্ধতিতে ব্রেক ওয়াটার সিস্টেমে এই বন্দর নির্মাণের প্রস্তাব করেছেন। যেখানে ড্রেজিং এর মাধ্যমে ২০ থেকে ২৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানো যাবে।

প্রথম পদ্ধতিতে সমুদ্রতীরে সমান্তরালভাবে ৫টি জেটি এবং ৪টি হারবার নির্মাণের কথা বলেছেন। এখানে ২৫০ থেকে ৩০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে ৫৩টি এবং ১০০ থেকে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে ১৫৯টি জাহাজ ভিড়তে পারবে। এর আয়তন হবে প্রায় ৪.৫ বর্গকিলোমিটার।

দ্বিতীয় পদ্ধতিতে সমুদ্রতট থেকে আড়াআড়িভাবে ১৩টি জেটি, ১২টি হারবার এবং ৫টি কার্গো শেড নির্মাণের পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে। এই পদ্ধতিতে ৩০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে মোট ১২টি জাহাজ এবং ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে মোট ১৮০টি জাহাজ ভিড়তে পারবে। উত্তর-দক্ষিণে এর দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ৩.৬ কিলোমিটার এবং পূর্ব-পশ্চিমের প্রস্থ হবে ৮০০ থেকে ৯০০ মিটার।

তৃতীয় পদ্ধতিটিতে মূলত ১ এবং ২ নম্বর পদ্ধতির সমন্বয় করা হয়েছে। এতে মোট ১৮টি জেটি এবং ১৬টি হারবার তৈরির পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে। যাতে ৩০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে ৬৩টি এবং ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে ৩১৫টি জাহাজ ভিড়তে পারবে। এর উত্তর-দক্ষিণে দৈর্ঘ্য হবে সাড়ে ৪ কিলোমিটার এবং পূর্ব-পশ্চিমে সমুদ্রের দিকে প্রস্থে হবে ১.৬ কিলোমিটার।

তবে সমুদ্রগামী জাহাজের জন্য ডক ও শিপইয়ার্ডের জন্য আরো ২ কিলোমিটার এবং দক্ষিণে নৌবাহিনীর ড্রাইডক, শিপইয়ার্ড এবং স্লিপওয়েজের জন্য আরো ২ কিলোমিটার জায়গায় এই বন্দর সম্প্রসারণের কথা বলা হয়েছে। ফলে বন্দরের মোট দৈর্ঘ্য দাড়াবে প্রায় সাড়ে ৮ কিলোমিটার।

আর জেটি থেকে আরো ১ কিলোমিটার দূরে প্রায় নিমজ্জিত মহীসোপানের সীমানায় ২.৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রেক ওয়াটার নির্মাণের পরিরকল্পনা রয়েছে তার প্রস্তাবনায়।

তার মতে, এই তৃতীয় পদ্ধতিটিই সবচেয়ে বেশি লাভজনক হবে। এই পদ্ধতিটি গ্রহণ করলে তা হবে পৃথিবীর অন্যতম একটি বৃহৎ সমুদ্রবন্দর। যদিও এখানে বিনিয়োগ করতে হবে প্রথম দু’টি পদ্ধতির চেয়ে বেশি।

তিনি বলছেন, তার এই পরিকল্পনাটি দেশের স্বার্থে। এতে দেশ বেশী লাভবান হবে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.