রাতের আঁধারে ঘোষণা দেয়া হয় চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের বিতর্কিত কমিটি

0

সিটি নিউজ,চট্টগ্রাম : শিক্ষা শান্তি প্রগতির ধারক বাহক বাংলাদেশ ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম মহানগর শাখার উদ্যোগে আজ বৃহস্পতিবার ২০ সেপ্টেম্বর দুপুর সাড়ে ১২ টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সংবাদ সম্মেলন কক্ষে সদ্য ঘোষিত মেয়াদ উত্তীর্ণ চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ কর্তৃক ঘোষিত চট্টগ্রাম কলেজের বিতর্কিত কমিটি বাতিলের দাবিতে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

উক্ত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এম কায়সার উদ্দিন। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মিথুন মল্লিক, রেজাউল আলম রনি, মহিউদ্দিন মাহি, মোঃ শাকিল, যুগ্ম সম্পাদক ওয়াহেদ রাসেল, সাংগঠনিক সম্পাদক মঈন শাহরিয়ার।

এতে উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন, ইয়াসির আরাফাত, ফয়সাল বাপ্পি, হেলাল উদ্দিন, পাবেল ইসলাম, সদস্য আরিফ মঈন উদ্দিন, সুজয় মান বড়ুয়া জিতু, আবু সায়েম, রায়হানুল কবির শামীম, মহানগর ছাত্রলীগের উপ-সম্পাদক মুনির চৌধুরী, রাশেদুল আলম, হুমায়ুন কবির, নাছির উদ্দিন কুতুবী, সহ-সম্পাদক ওসমান গনি, অরবিন সাকিব ইভান, সদস্য মোঃ শরীফ, রিদুয়ানুল কবির সজীব, সৈকত দাশ, বোরহান উদ্দিন গিফারী, ওমর ফারুক সুমন, ফাহাদ আনিস।

লিখিত বক্তব্যে এম কায়সার উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ এবং সর্বোচ্চ মেধাবীদের শিক্ষাকেন্দ্র চট্টগ্রাম কলেজ। অতীতের জামাত শিবিরের নিষ্পেষিত কালো অধ্যায় শেষ করে ১৬ই ডিসেম্বর ২০১৫ হতে মহানগর আওয়ামীলীগের মূল নেতৃত্বের দিক নির্দেশনা অনুযায়ী চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের ত্যাগী এবং পরিক্ষিত নেতাকর্মীদের দ্বারা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে এবং সৃজনশীল শিক্ষাবান্ধব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের রাজনীতি পরিচালিত হয়ে আসছিল। যেখানে কোন প্রকারের নেতৃত্বের দ্বন্ধ কিংবা অন্তকোন্দল বলে কোন কিছুই ছিলনা। একটি সুশৃঙ্খল ইউনিট হিসেবে নাম করে নিয়েছিল বাংলাদেশ ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম কলেজ।

ঠিক সেই মুহুর্তে সব ক্ষেত্রে যখন ঐক্যের সুর, সবাই যখন কাধে কাধ মিলিয়ে কাজ করার প্রত্যয় করেছে ঠিক তখনই কাপুরুষের মতো জাতীয় নির্বাচনের আগ মুহুর্তে গভীর ষড়যন্ত্রের পায়তারা করে র্দূভী সন্ধিমূলকভাবে জামাত শিবির ও বিএনপির এজেন্ডা বাস্তবায়নের নীল নকশার অংশ হিসেবে মেয়াদোত্তীর্ণ চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দ্বারা স্বাক্ষরিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম কলেজের রাতের আঁধারে কমিটি ঘোষণা দেয়া হয়। উল্লেখ্য এ কমিটি করার পূর্বে বিভিন্ন কলেজ হতে যারা মহানগর ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিচ্ছে তাদের সাথে আলোচনা ছাড়াই করা হয়েছে। যা কেবলই গণতন্ত্রের মানসকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিক্ষা ক্ষেত্রে অসাধারণ অগ্রগতির পথে বাধা প্রদান করার গভীর হীন তৎপরতা ও গভীর ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়। গত কয়দিন যাবৎ সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরাসহ বিবেকবান প্রতিটি মানুষই এই কমিটি নিয়ে চরম অস্বস্থিতে আছে।

এই কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুজনই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সোনালী অর্জনকে ধুলিসাৎ করতে যথেষ্ট। কমিটির সভাপতি যাকে করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে রয়েছে কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ। বাঙ্গালীর প্রাণের মেলা বাংলা নববর্ষ উৎযাপন অনুষ্ঠানে ইভটিজিং , নারী লাঞ্চনা ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে দুর্ব্যবহারের দায়ে নগরের সিআরবি এলাকা হতে গত ১৪ই এপ্রিল ২০১৭ তারিখে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে সংগঠিত অপরাধের সাথে তার সংশ্লিষ্টতার প্রমান আছে। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যাকে দেওয়া হয়েছে সে চিহ্নিত ভূমিদস্যু হিসেবে স্বীকৃত। প্রায় বছর খানেক আগে ভূমি দখল করতে গিয়ে তিনি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। তৎকালিন সময়ে পূর্বদেশ পত্রিকায়

প্রতিবেদন আকারে তা প্রকাশ পায়। আমাদের প্রশ্ন হলো যে ত্যাগের বিনিময়ে শিবির অধ্যুষিত এই চট্টগ্রাম কলেজ কে শিক্ষার্থীরা এবং চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দরা শিবির মুক্ত করেছে সেই প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের নেতৃত্ব মেনে নেওয়ার কোন প্রশ্নই উঠে না। নির্বাচনকালীন সময়ে আদৌ কোন কমিটির প্রয়োজন যদি থেকে থাকতো তাহলে তা দরকার ছিল সিটি কলেজ , এম.ই.এস. কলেজ ও ইসলামিয়া ডিগ্রি কলেজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে। কারন এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র সংসদ ও ছাত্রলীগের কমিটি হয়েছে বহু বছর আগে। সভাপতি, সাধারন সম্পাদক, ভিপি ও জিএস হিসাবে যারা দায়িত্ব পালন করছে তারা ছাত্রত্ব হারিয়েছে বহু বছর আগে। তারা নিজেদের ছাত্র পরিচয় দিতে কুন্ঠাবোধ করে।

এছাড়া কলেজগুলোতে রাজনৈতিক, সৃজনশীল চর্চা অনুপস্থিত এর চেয়েও বেশি দরকার ছিল বাংলাদেশ ছাত্রলীগের চট্টগ্রাম মহানগর কমিটি। কারণ এই কমিটিতে এখন মূল দায়িত্বে রয়েছে তারা তাদের ছাত্রত্ব নেই অধিকাংশই বিবাহিত। সেই দিকে কোন আলোকপাত না করে সুষ্ঠ রাজনীতির চর্চা যেখান চলছিল সেখানে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের দিয়ে ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার কারণে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম কলেজের মুজিব আদর্শের সৈনিকরাতা মেনে নিতে পারেনি বলে কমিটি ঘোষণার রাত থেকেই এখন পর্যন্ত তারা শান্তিপূর্ণ রাজপথে অবস্থান করে এর প্রতিবাদ করে যাচ্ছে।

এমনকি বিতর্কিত, ভুয়া এই পকেট কমিটি থেকে ইতিমধ্যে অধিকাংশ মুজিব আদর্শের সৈনিকরা পদত্যাগ করেছে। পদত্যাগকারীরা যথাক্রমে সহ-সভাপতি ওবাইদুল হক, মোস্তফা কামাল, শাহাজাহান সম্রাট, মোক্তার হোসেন রাজু, সাংগঠনিক সম্পাদক বেলাল, আনন্দ মজুমদার প্রমুখ। ঘৃণা ভরে তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাদের একটিই দাবি সৎ , আদর্শ ও নিয়মিত ছাত্রদ্বারা চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি করা হউক। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে একটি সুশৃঙ্খল মেধাবী ছাত্রদের নিয়ে গড়া সংগঠন। এই সংগঠনের নেতৃত্বে আসতে হলে একটি নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের অভিভাবক সংগঠন বাংলাদেশের আওয়ামীলীগের মূল নেতৃত্বের সাথে আলাপ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়।

সে ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের এই কমিটি ঘোষণার আগে সর্বপ্রথম যে বিষয়টি দরকার ছিল বলে আমরা মনে করি তাহলো এই বৃহৎশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উচ্চ মাধ্যমিক শাখা, ১৭টি বিষয় ভিত্তিক অনার্স কোর্স ও পাস কোর্স এর প্রতিনিধিদের সাথে নিয়ে এবং চট্টগ্রাম কলেজ থেকে যারা মহানগর ছাত্রলীগের প্রতিনিধিত্ব করছে তাদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে এবং চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামীলীগের মূল নেতৃবৃন্দদের সাথে আলোচনা করে কমিটি ঘোষণা দেওয়া। তাহলে হয়তো সাধারণ শিক্ষার্থীদের মনের মনি কোটায় স্থান পেত এই কমিটি। আরেকটি হাস্যকর এবং অবাক করা বিষয় হলো রাতের আঁধারে গঠিত এই ভুঁয়া বিতর্কিত কমিটিতে কোন ছাত্রী প্রতিনিধিদের স্থান নেই। এই ছাত্রী বোনরাই শিবিরঅধ্যুষিত এই চট্টগ্রাম কলেজকে শিবির মুক্ত করার সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এবং তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলন সংগ্রামের সম্মুখ ভাগে ছিল।

আমরা সুষ্পষ্ট্যভাবে ও দ্বাধ্যহীন কন্ঠে বলতে চাই রাতের আঁধারে জামাত শিবির ও ছাত্রদল ঘেষা কিছু হাইব্রিড সুবিধাবাধী চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের নিয়ে করা এই কমিটিকে চট্টগ্রাম কলেজের মতো মেধাবীদের এই প্রতিষ্ঠানটি কোনভাবেই মেনে নিবেনা। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম মহানগর পক্ষ থেকে জোর দাবি জানাচ্ছি অতিস্বত্বর এই বিতর্কিত কমিটি বাতিল করা হউক এবং যারা এই কমিটির অনুমোদন দিয়েছে সেই মেয়াদোত্তীর্ণ চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি ও অতিস্বত্বর বাতিল করে দেয়া হউক।

অতিসত্বর শিক্ষা , শান্তি ও ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক বাংলাদেশ ছাত্রলীগের শান্তির পতাকা সৎ আদর্শবান মেধাবী ও মুজিব আদর্শের প্রকৃত সৈনিকদের হাতে তুলে দেয়া হউক, যারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নত বাংলাদেশ গড়ার সহযোগী হিসেবে অন্যতম ভূমিকা পালন করে যাবে। যে ছাত্রলীগের মধ্যে থাকবে দেশপ্রেম, শ্রদ্ধাবোধ, দায়িত্ববোধ ও কর্তব্যবোধ। যারা ছাত্রলীগের অভিভাবক সংগঠন হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের ভাবমূর্তি রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। পরিশেষে ঘোষিত চট্টগ্রাম কলেজের বিতর্র্কিত কমিটির পেছনে যারা ইন্দন দাতা হিসেবে কাজ করেছে তাদের দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বিচার করা হউক।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.