সোনার বাংলা বিনির্মাণে তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে- মহসীন কাজী

0

গোলাম সরওয়ার,সিটি নিউজ : বিএফইউজে- বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী বলেছেন, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখে কাঙ্খিত উন্নত দেশের লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে জাতীয় চার নীতির ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তি ভূমিতে দাঁড়িয়েই বিনির্মাণ করতে হবে ভবিষ্যতের সোনার বাংলা। এজন্য তরুণ প্রজন্মকে হতে হবে ইতিহাস সচেতন এবং শিক্ষিত। আর দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদদের নেতৃত্বে অব্যাহত রাখতে হবে দেশের অগ্রযাত্রা। এসব শর্ত পূরণ সম্ভব জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্য জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।

সম্প্রতি সিটি নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে মহসীন কাজী বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা, সামাজিক ন্যায় বিচার এবং গণমাধ্যম ও গণমাধ্যমকর্মীদের অধিকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করেন। ৭৫’র এর পর জাতীয় রাজনীতির পথ হারানো থেকে শুরু করে গত ১০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানো সবই উঠে আসে সেই আলোচনায়।

সোনার বাংলা বিনির্মাণে তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে- মহসীন কাজী

তিনি বলেন, দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে উপমহাদেশে প্রতিষ্ঠিত দুটি রাষ্ট্রের কাঠামোর মধ্যে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ভৌগলিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে ছিল পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন। ভাষার প্রশ্নে পশ্চিম পাকিস্তানিদের শোষক মনভাবের প্রথম বহি:প্রকাশ ঘটে। সদ্য প্রতিষ্ঠিত একটি রাষ্ট্রের এক বিশাল জনগোষ্ঠীকে বাদ রেখেই চলতে থাকে শুধুমাত্র পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়ন। অর্থনৈতিক বঞ্চনা বাংলার মানুষকে কোনঠাসা করে ফেলে। জীবনের প্রয়োজনে তারা প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। আধুনিক বিশ্বে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সব উপকরণ উপস্থিত থাকার পরও শুধু নেতৃত্বের বিচক্ষণতার অভাবে স্বাধীনতা অর্জন করতে না পারার অনেক উদাহরণ আছে। বিপরীতে বাংলাদেশ পেয়েছিল তার হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তানকে। পেয়েছিল বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তাঁর উজ্জ্বল, দূরদর্শী এবং সাহসী নেতৃত্ব মাত্র নয় মাসের সশস্ত্র সংগ্রামে এনে দিয়েছিল একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। তারও আগে ২৩ বছর ধরে ধাপে ধাপে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখা ও বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধু নেতৃত্বের যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন তা বিশ্বে বিরল।

মহসীন কাজী বলেন, একটি স্বাধীন রাষ্ট্র বির্নিমানে অর্থনৈতিক মজবুত ভিত্তি গড়ে তোলার অপরিহার্যতা জাতির জনক অনুভব করেছিলেন। তিনি জাতির মেধাবী সন্তানদের দিয়ে পরিকল্পনা কমিশন গঠন করেছিলেন। দিয়েছিলেন পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা। শূন্য হাতে যে দুর্গম যাত্রা তিনি শুরু করেন সে পথে ছিল অজ¯্র বাধা। মুক্তিযুদ্ধের পরাজয় পাকিস্তান ও তাদের বৈশ্বিক মিত্ররা কখনোই মেনে নিতে পারেনি। তাদের ষড়যন্ত্র ছিল অব্যাহত। দেশের ভেতরে-বাইরে সে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তৃত হচ্ছিল। রাষ্ট্রবিরোধী নানা শক্তি একটি সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রকে বিকাশের সুযোগ না দিয়ে পেছন থেকে ছুরি মারার সব প্রস্তুতি নিয়ে ছিল। ৭৫’র ১৫ আগস্ট কালো রাতে জাতির জনককে স্বপরিবারে হত্যা করা হয় নির্মমভাবে। পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক রাষ্ট্র নায়ককে হত্যার দৃষ্টান্ত আছে। কিন্তু কোনো রাষ্ট্রনায়ককে এভাবে পরিবারের সদস্যসহ হত্যার দৃষ্টান্ত নেই। একটি সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রকে ব্যর্থ প্রমাণ করে পাকিস্তানি ভাবধারায় পুন:পরিচালিত করার জন্য অন্ধকারের বাসিন্দা সকল ষড়যন্ত্রকারী জোটবদ্ধ হয়েছিল।

মহসীন কাজী বলেন, মানব জাতির ইতিহাসে ষড়যন্ত্রকারী ও রাষ্ট্রবিরোধী বেঈমানের কোনো স্থান নেই। সময়ের পরিক্রমায় বঙ্গবন্ধুর সেইসব খুনিরা ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। সকল অবগুণ্ঠন পেরিয়ে জাতীয় মানসে দীপ্ত উজ্জ্বল সূর্যের নাম শেখ মুজিবুর রহমান। প্রায় দুই দশক পেরিয়ে জাতির জনকের কন্যা গণতন্ত্রের জয় পতাকা উড়িয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসেন। দেশ পরিচালনায় তিনি পিতার আদর্শকে শিরোধার্য করে পথ চলেছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ করতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল। জননেত্রী শেখ হাসিনা কোনো বিশেষ ব্যবস্থায় নয় বরং আদালতের মাধ্যমে সেই হত্যাকারীদের বিচারের মুখোমুখি করার উদ্যোগ নেন। দেশকে এগিয়ে নিতে কৃষি ও অর্থনীতিতে জোর দেন। কিন্তু আওয়ামী বিরোধীরা আবারো একজোট হয়ে ছলে-বলে-কৌশলে জাতির জনকের কন্যাকে পরের নির্বাচনে বিজয়ী হতে দেয়নি। তাই ব্যাহত হয় দেশের অগ্রযাত্রা। কমে যায় বিদ্যুৎ উৎপাদন, পিছিয়ে পড়ে কৃষি খাত। এরপর রাজনীতিতে নানা চড়াই-উৎরাই গেছে। আবারো নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় এনেছে বাংলাদেশের মানুষ।

প্রতিশ্রুতি পূরণে শেখ হাসিনার মত সফল রাষ্ট্রনায়ক বাংলাদেশের ইতিহাসে আর নেই উল্লেখ করে মহসীন কাজী বলেন, তিনি যে নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছিলেন তা পূরণের অবিচল লক্ষ্যে কাজ করেছেন। সফল হয়েছেন। এখন নিজের সীমানা ছাড়িয়ে এগিয়ে চলেছেন অনন্য উচ্চতায়। বিশ্বব্যাংকের মত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে পদ্মাসেতুর মত মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়নের ঝুঁকি ও দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছেন। বিশ্ব আজ অবাক তাকিয়ে রয়। প্রমত্তা পদ্মার বুকে পদ্মা সেতু আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শুরু করেছে। পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধে সক্রিয় ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য আজ দিবালোকের মত পরিস্কার। তারা চায় বাংলাদেশকে একটি পশ্চাৎপদ, বৈদেশিক সাহায্য নির্ভর ও পাকিস্তানপন্থী রাষ্ট্রে পরিণত করতে। সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে শেখ হাসিনার এগিয়ে যাওয়া শুধুমাত্র জনগণের শক্তিতে ভর করে।

তিনি আরো বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ও পরে দেশব্যাপী আগুন সন্ত্রাস এবং জ্বালাও পোড়াও করে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে দেশবিরোধী শক্তি। দেশের মানুষের জন্য রাজনীতি করা কোনো দল নিরাপরাধ মানুষকে পুড়িয়ে মারতে পারে না। দগ্ধ মানুষের কান্না রাজনৈতিক হায়েনাদের কানে পৌঁছে না। শুধু তাই নয়, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের ফলে জঙ্গিবাদ বারবার মাথা চাড়া দিতে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের যোগ্য ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব তা সফল হতে দেয়নি। দেশের মানুষ জানে ও চেনে কারা রাষ্ট্রবিরোধী ও জঙ্গিবাদী শক্তির মদদদাতা।

ছাত্র জীবন থেকে আজকের সূর্যোদয়ের মাধ্যমে সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি মহসীন কাজীর। দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা জীবনে অনেক বাধা বিপত্তি ডিঙ্গিয়ে এগিয়ে যেতে হয়েছে। তবে আদর্শ বিচ্যুত হননি কখনো। পেশা জীবনে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব ব্যবস্থাপনা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন সফলতার সাথে। শুধু তাই নয় মহসীন কাজীর দায়িত্ব পালনকালেই চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব প্রাঙ্গনে স্থাপন করা হয় জাতির জনকের ম্যুরাল। যা দেশে কোনো প্রেসক্লাবের মধ্যে সর্বপ্রথম। শিল্পী আবদুল্লাহ খালিদ ছিলেন সেই ম্যুরালটির নির্মাতা। ম্যুরাল নির্মাণ কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে মহসীন কাজী তখন সাহসী ভূমিকা পালন করেন। বর্তমানে মহসীন কাজী চট্টগ্রাম সাংবাদিক হাউজিং কো-অপারেটিভ সোসাইটির নির্বাচিত পরিচালক। সারাদেশে সাংবাদিকদের সর্ববৃহৎ একক সংগঠন বিএফইউজের নির্বাচনে যুগ্ম মহাসচিব পদে নির্বাচিত হয়েছেন বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর মহসীন কাজী। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের নাম ‘সময়ের কাটাছেঁড়া’। গ্রন্থে তিনি সাংবাদিকতা জীবনে দেখা নানা ঘটনার বিশ্লেষণ করেছেন নির্মোহ দৃষ্টিতে।

মহসীন কাজী বলেন, উন্নয়নের স্রোতধারায় বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হলে গণমাধ্যমকে দাঁড়াতে হবে স্বকীয় মর্যাদায়। সেটা তখনই সম্ভব যখন গণমাধ্যমে কর্মরত সংবাদকর্মীরা তাদের ন্যায্য অধিকার পাবেন। রাষ্ট্রের চার স্তম্ভের একটিকে পশ্চাৎপদ ও বঞ্চিত রেখে সোনার বাংলার স্বপ্ন অর্জন সম্ভবপর হবে না। তাই সর্বাগ্রে বলতে চাই সাংবাদিকদের অধিকারের কথা। গত ৪৭ বছরে স্বাধীন বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার রক্ষা এবং বাস্তবায়নে সাংবাদিকরা লেখনীর পাশাপাশি আন্দোলনেও ছিলেন সামনের কাতারের সৈনিক। বিরুদ্ধ সময় অতিবাহিত হয়েছে, সুদিনের আশা বারবার উঁকি দিয়েছে। কিন্তু সাংবাদিকদের লক্ষ্য অর্জিত হয়নি এখনো। অমানবিক জীবন যাপন করে রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে জনগণের অধিকার বঞ্চনার কথা যারা বলে যান অবিরত তারা সংবাদকর্মী। দিন শেষে তাদের প্রাপ্তি কী? কর্মজীবন শেষে তাদের অর্জন কী? সংবাদপত্র মালিকদের দায়বদ্ধতা কোথায়?

তিনি বলেন, পাকিস্তানের শোষন নির্যাতনের বেড়াজাল ছিন্ন করতে স্বাধীকার আন্দোলনে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সহযোগিতা করেছিল সেসময়ের গণমাধ্যম। সেই গণমাধ্যম গণ মানুষের কথা বলত। রাজনৈতিক দাবিকে জনগণের কাছে পৌঁছে দিয়েছিল। গড়ে তুলেছিল জনমত।

এ প্রসঙ্গে মহসীন কাজী বলেন, নানা বাধা আর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সেই নিদারুণ দু:সময়ে নিরবে লড়াই চালিয়ে গেছে সাংবাদিকরা। কেমন ছিল সেসময়? স্বৈরশাসকের পাঠানো প্রেস নোট ছাপানোর বাধ্যবাধকতার লৌহ কপাট ডিঙ্গিয়ে কাজ করতে হয়েছে সংবাদকর্মীদের। গ্রেপ্তার, নির্যাতন সহ্য করেছেন নিরবে। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে রাজপথে নামতে হয়েছে মিছিলে-সংগ্রামে। শত দমন-পীড়ন সয়ে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এগিয়ে গেছেন তাঁরা।

তিনি বলেন, ক্ষমতার পালা বদল হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে গণমাধ্যম কর্মীদের বঞ্চনার ইতিহাস পাল্টায়নি। পত্রিকার কলেবর বেড়েছে, এসেছে বেসরকারি টেলিভিশন। চকমকি পাথর দেখিয়ে যেমন শিশুকে ভোলানো হয় তেমনি ভোলানো হয়েছে বারবার।

মহসীন কাজী বলেন, জাতির জনকের কন্যা ক্ষমতা গ্রহণের পর নানা উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু পাঁচ বছরের মাথায় সেসব থমকে যায় ক্ষমতার পালা বদলের সাথেই। ২০০৮ সালে আবারও ক্ষমতায় এসে তিনি সাংবাদিকদের পরিস্থিতির উন্নয়নের নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। জননেত্রেী শেখ হাসিনার সরকারই সাংবাদিকদের কল্যাণে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করেছেন। সম্প্রতি তিনি এ ফান্ডে ২০ কোটি টাকা দিয়েছেন।

তিনি বলেন, প্রায় দেড় দশক পেরিয়ে গেছে অথচ বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সংবাদকর্মীদের জন্য আজও নিয়োগ নীতিমালা এবং ওয়েজ বোর্ড প্রণয়ন হয়নি। সংবাদপত্রের জন্য নবম ওয়েজ বোর্ড ঘোষণার নির্ধারিত সময়ের দুই বছর পেরিয়ে গেল। তারপর ঘোষণা করা হলো সেই বহুল প্রত্যাশিত ওয়েজ বোর্ড। অথচ বাস্তবতা হলো অধিকাংশ সংবাদপত্রেই অষ্টম ওয়েজ বোর্ড আজো বাস্তবায়ন হয়নি।

সংবাদপত্রের বর্তমান প্রেক্ষাপট তুলে ধরে মহসীন কাজী বলেন, নবম ওয়েজ বোর্ড ঘোষণার পর শুরু হয়েছে নতুন টালবাহানা। মালিক পক্ষ তাদের চিরাচরিত স্বভাবে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সাংবাদিকদের অধিকারের পথে। সভায় সরকারের দেওয়া প্রস্তাব মেনে নিয়েও সভার পরই অবস্থান পাল্টেছে তারা। সাংবাদিকদের রুটি-রুজি নিয়ে আবারো ছিনিমিনি খেলতে চায়।

তিনি বলেন, সংবাদপত্র মালিকরা এই ব্যবসা থেকে আরো একাধিক ব্যবসার মালিক হয়েছে। কিন্তু সংবাদকর্মীদের ভাগ্যের বদল হয়নি। যাদের লেখনিতে ভর করে টিকে থাকে সংবাদপত্র, এগিয়ে যায় অর্থনীতির চাকা সেই সাংবাদিকরা পড়ে থাকেন অন্ধকার তিমিরেই। ২০১৮ সালে এসে একজন সাংবাদিক কেন আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হবেন না? কেন একজন সাংবাদিককে জীবিকা নির্বাহের জন্য অসহায় হয়ে পড়তে হবে? একজন অসুস্থ সংবাদকর্মী কেন শেষ বয়সে চিকিৎসার অর্থ যোগাড় করতে পারবেন না? এসব প্রশ্নের উত্তর মালিকপক্ষকেই দিতে হবে। যে কোনো ব্যবসায় ব্যাবসায়ী যেমন বিনিয়োগ করেন তেমনই লাভ করেন। এই একই মালিক দেশের শিল্পখাতে বিনিয়োগ করে ঠিকই শত শত কোটি টাকার লাভ তুলে দেন। সেসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোটি কোটি টাকা বেতনও দেন। সেসব ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে ব্যবহার করেন স্বল্প পুঁজিতে প্রতিষ্ঠা করা গণমাধ্যমটিকে। এ যেন ব্যবসায়ীর সম্পদ রক্ষার অতন্দ্র প্রহরী।

মহসীন কাজী মনে করেন, এই বাস্তবতায় সাংবাদিকতা গুণগত মান হারাচ্ছে এ সত্য স্বীকার করে নিতে দ্বিধা নেই। এমনকি গণমাধ্যম এখন আর কতটা গণমানুষের কথা বলছে, সেই প্রশ্নও ইতিমধ্যে উঠতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ যখন উন্নয়নের মহাসড়কে তখন গণমাধ্যমই হতে পারে সেই অগ্রযাত্রায় সাহসী সহযোগী।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের সব গুলো জেলায় এখন পত্রিকা ও টেলিভিশন মিলিয়ে শতাধিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি নিয়োগ করা হয়। তাদের কত জন মাসিক বেতন পান? শতাংশের হিসেবে তা হবে ১০-১৫ শতাংশ। আর সেই বেতনের পরিমাণ শুনবেন? সেটা হলো ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। একটি জেলা শহরে একজন প্রতিনিধি কতটা প্রতিকূলতা পেরিয়ে সাংবাদিকতা করেন। তার মোবাইল ও ইন্টারনেট খরচ মাসে কত? তারা ঘটনাস্থলে কিভাবে যান? মধ্যরাতে তারা কিভাবে সংবাদ পাঠান? এই প্রশ্ন রাজধানীর বাসিন্দা প্রধান কার্যালয়ের কর্তারা জানেন? মালিক জানেন?

মহসীন কাজী বলেন, গণমাধ্যমকে বলা হয় একটি রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। এত সীমাবদ্ধতা আর অপ্রাপ্তির মধ্যেও বাংলাদেশের গণমাধ্যমে বারবার সেই ভূমিকায় উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখেছে। তার প্রতিদান কী শেষ বয়সে হাত পেতে সাহায্য নিয়ে চিকিৎসা করানো? এসব প্রশ্নের উত্তর যাদের দেয়ার কথা তারা নিরব।

একটি দেশের সংবাদমাধ্যম যদি মুনাফালোভী আর মুখোশধারীদের ষড়যন্ত্রে চোরবালিতে আটকে পড়ে তাহলে দেশটি কিভাবে এগুবে? এই প্রশ্ন রেখে মহসীন কাজী বলেন, উন্নয়ন কোনো একক বিচ্ছিন্ন সত্তা নয়। উন্নয়ন অবকাঠামো এবং অর্থনীতির যেমন তেমনি হতে হবে জনজীবনেরও। উন্নয়নকে টেকসই করতে হলে চলমান উন্নয়ন কাজগুলো হতে হবে সময়োপযোগী, ভবিষ্যতমুখী এবং যথাযথ। সেটা নিশ্চিত করার পথে ভ্যানগার্ড সাংবাদিকরা। তারাই তুলে ধরতে পারেন পরিকল্পনার ত্রুটি-বিচ্যুতি, অনিয়ম, দুর্নীতি ও রোধ করতে পারেন সম্পদের অপচয়। যা জাতিকে পৌঁছে দেবে সোনার বাংলার কাঙ্খিত বন্দরে।

তিনি বলেন, মালিকপক্ষকে বাধ্য করতে হবে সংবাদকর্মীদের অধিকার নিশ্চিত করতে। কারণ অধিকার কেউ কাউকে দেয় না, অধিকার আদায় করে নিতে হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেকে একজন সাংবাদিক পরিবারের সদস্য বলে পরিচয় দেন। তাঁর আন্তরিকতা ও সদিচ্ছা শতভাগ। তিনি সাংবাদিকদের কল্যাণে বারবার এগিয়ে এসেছেন বিশাল হৃদয় ও মুক্ত হস্ত নিয়ে। আমাদের প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব হবে প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সেই সদিচ্ছার বাস্তব রূপায়ন। তাই সাংবাদিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে থাকব সোচ্চার।

সাংবাদিক ভাইদের সাথে নিয়ে লড়ে যাব অধিকারের পূর্ণ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত। কারণ এ সংগ্রাম শুধু সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম নয়, এটা জাতির জনকের সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নেরই অংশ। এ লড়াই আমাদের জীবন ও জীবিকার লড়াই পাশাপাশি এ সংগ্রাম একটি উন্নত দেশ গঠনের সংগ্রাম। এ সংগ্রামে ব্যর্থ হলে ব্যর্থ হবে আমাদের গণমাধ্যম। স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার পথে তা আমরা কোনোভাবেই হতে দিতে পারি না।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.