জিম্বাবুয়েকে ২৮ রানে হারিয়ে বাংলাদেশের জয়

0

সিটি নিউজ ডেস্ক :  ইমরুল কায়েসের সেঞ্চুরি ও টাইগার বোলারদের আঁটসাঁট বোলিংয়ে জিম্বাবুয়েকে ২৮ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে তিনম্যাচের সিরিজে ১-০তে এগিয়ে আছে টিম টাইগার্স।

বাংলাদেশের জন্য জিম্বাবুয়ে চেনা ও সহজ প্রতিপক্ষ। কারণ একমাত্র জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই সবথেকে বেশি জয় বাংলাদেশের। সহজ প্রতিপক্ষ হলেও এই সিরিজে জিম্বাবুয়েকে সহজভাবে নেয়নি বাংলাদেশ। কারণ পচা শামুকেই পা কাটে টাইগারদের। তাই দলে খুব বেশি পরিবর্তন আনেনি নির্বাচকরা। মোটামুটি শক্তিশালী দল হিসেবেই নেমেছিল টাইগাররা।

শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। কারণ মিরপুরের পিচে পরে ব্যাট করা থেকে আগে ব্যাট করাই শ্রেয়। সেই মতেই টস জিতে আগে ব্যাট করতেই চাইলেন স্বাগতিক দলের অধিনায়ক। কিন্তু ব্যাটিংয়ে নেমে দলপতির আস্থার প্রতিদান দিতে পারেনি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। শুরু থেকে সাবধানী খেললেও জোড়ায় জোড়ায় সাজঘরে ফিরেছেন টাইগার ব্যাটসম্যানরা। ব্যতিক্রমী ছিলেন ইমরুল কায়েস। মাটি আঁকড়ে ক্রিজে থেকে একের পর এক রান বের করেছেন। দলের কেউই যখন তার সাথে থিতু হতে পারেননি তখন সপ্তম উইকেটে ইমরুলকে সঙ্গ দিলেন সাইফউদ্দিন।

সপ্তম উইকেটে ওপেনার ইমরুলকে সঙ্গ দেওয়ার পাশাপাশি ছন্দে ছিলেন সাইফউদ্দিনও। শুরুতে একটু লড়াই করলেও পরে স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাট করে দারুণ সব শটে তুলে নেন আন্তজার্তিক ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশত। ৫০ রান করে আউট হন তিনি। সাইফউদ্দিন শুধু হাফ সেঞ্চুরিই করেননি। সপ্তম উইকেট জুটিতে ইমরুল কায়েসের সঙ্গে ১২৭ রানের পাটর্নারশিপ গড়েন। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে ওয়ানডেতে সপ্তম উইকেট জুটিতে কায়েস-সাইফউদ্দিনের এই জুটিই এখন সেরা। মূলত তাদের জুটির উপর নির্ভর করেই ৮ উইকেট হারিয়ে দলীয় স্কোর ২৭১ করেছে বাংলাদেশ।

সাইফউদ্দিনের আগে ইমরুলকে সঙ্গ দিয়ে ভালো কিছুর আভাস দিয়েছেন মিঠুন। চতুর্থ উইকেটে মিঠুন-ইমরুলের জুটিতে উঠেছে ৭১ রান। কিন্তু বিলাসী শটে ব্যক্তিগত ৩৭ রানেই সাজঘরে ফিরেছেন তিনি।

এর আগে বাংলাদেশের ওপেনিং পজিশনে ইমরুলের সঙ্গে নেমেছে লিটন দাস। কিন্তু ইনিংসের তৃতীয় ওভারের শেষ বলে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ওপেনার লিটন দাস। তবে বল মাটিতে স্পর্শ করায় জীবন পান এই ওপেনার। সেটা কাজে লাগাতে পারেননি। মিস টাইমিংয়ে টেন্ডাই চাতারার করা ষষ্ঠ ওভারের প্রথম বলে দলীয় ১৬ রানে সেফাস ঝুয়াওর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন লিটন দাস (৪)। এরপর ব্যাটিংয়ে নামেন অভিষিক্ত ফজলে রাব্বি। ৩০ বছর বয়সে অভিষেক হওয়া ফজলে রাব্বী বাংলাদেশের ১২৯তম ওয়ানডে ক্রিকেটার। কিন্তু অভিষেকেই ব্যর্থ হয়েছেন রাব্বি। ক্যারিয়ারের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে তেন্ডাই চাতারার বলে ব্রেন্ডন টেইলরের তালুবন্দী হন তিনি। ৪ বল খেলে কোন রান না করেই সাজঘরে ফিরেন তিনি।

এরপর ইমরুল কায়েসের সঙ্গে ব্যাটিংয়ে যোগ দেন মুশফিকুর রহিম। তবে দলীয় ৬৬ রানে ব্র্যান্ডন মাভুতার বলে উইকেটরক্ষক ব্র্যান্ডন টেইলরের হাতে ক্যাচ দিয়ে ব্যক্তিগত ১৫ রানে ফেরেন মুশফিক। মুশফিকের বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন মোহাম্মদ মিঠুন। দুজনের ব্যাটে দুর্দান্ত গতিতেই এগুচ্ছিল টাইগাররা। তবে কাইল জার্ভিসের করা ২৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলে টেইলরের হাতে ক্যাচ দিয়ে ব্যক্তিগত ৩৭ রানে ফেরেন মিঠুন। এর আগে দু’জন মিলে ৭১ রানের জুটি গড়েন। একই ওভারের শেষ বলে টেলরের হাতেই ক্যাচ দিয়ে শূন্য হাতে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ।

এরপর জার্ভিসের করা ৩০তম ওভারের শেষ বলে টেইলরের হাতে ক্যাচ দিয়ে ব্যক্তিগত ১ রানেই ফেরেন মিরাজ। সপ্তম উইকেটে সাইফউদ্দিনকে সঙ্গে করে এগিয়ে যান ইমরুল। ৪২তম ওভারের প্রথম বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় শতক তুলে নেন ইমরুল। ৪৯তম ওভারে বিদায় নেন ইমরুল, তার আগে ১৪০ বলে ১৩টি চার আর ছয়টি ছক্কায় তিনি করেন ইনিংস সর্বোচ্চ ১৪৪ রান। এটি তার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসও। এরপর সাইফউদ্দিন নিজের প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন। ইনিংসের শেষ ওভারে বিদায় নেন তিনি। তার আগে সাইফের ব্যাট থেকে ৬৯ বলে তিনটি চার আর একটি ছক্কায় আসে ৫০ রান। বাংলাদেশ ৮ উইকেট হারিয়ে তুলে ২৭১ রান।

২৭২ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশকে হেসেখেলেই খেলছিল জিম্বাবুয়ের হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ও কেপাস জুয়াও। দুজনে মিলে গড়েন ৪৮ রানের জুটি। মাশরাফি-মিরাজ সুবিধা না হওয়াতে অধিনায়ক আনলেন মোস্তাফিজকে। এসেই দৃশ্যপট পাল্টে দেন মোস্তাফিজুর রহমান। ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা জুয়াওকে সরাসরি বোল্ড করেন। তিনি মাত্র ২৪ বলে ৪ বাউন্ডারি ২ ছয়ে করেন ৩৫ রান।

এরপর দলীয় ৫৯ রানে ৫ রান করা ব্র্যান্ডন টেইলরকে বোল্ড করেন স্পিনার নাজমুল ইসলাম অপু। দলীয় ৬৩ রানে ভুল বুঝাবুঝিতে রান আউট হন জিম্বাবুয়ের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ও নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান মাসাকাদজা। ব্যক্তিগত ঝুলিতে তিনি রান তুলেছিলেন ২১। ইমরুল কায়েসের দুর্দান্ত থ্রো ধরে উইকেট ভাঙতে একটুও বেগ পেতে হয়নি মুশফিকুর রহিমকে।

সেখান থেকে দলকে টেনে তুলছিলেন ক্রেস আরভিন ও সিকান্দার রাজা। তবে অপুর ঘূর্ণিতে ৭ রান করা সিকান্দার রাজা ফিরেন বোল্ড হয়ে। এরপর দ্বিতীয় স্পেলে এসে সাফল্য পেয়েছেন মিরাজ। প্রথম বলেই ক্রেগ আরভিনকে বোল্ড করেছেন, দলীয় ১০০ রানে। সাজঘরে ফেরার আগে আরভিন করেছেন ২৪ রান। ৩৬তম ওভারে পিটার মুরকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। দলের স্কোরকার্ডে ৩ রান যোগ হতেই নতুন ব্যাটসম্যান ডোনাল্ড ট্রিপানোকে সরাসরি থ্রো করে রান আউট করেন অভিষিক্ত ফজলে রাব্বি। এরপর দলীয় ১৬৯ রানে মাভুটাকে সাজঘরে পাঠিয়েছেন মিরাজ। শেষদিকে নবম উইকেটে হাত খুলে মেরেছেন দুই ব্যাটসম্যান জার্ভিস ও উইলিয়ামস। দুজনের মারকাটারি ব্যাটে উঠেছে ৬৭ রানের জুটি। অবশেষে ৪৮.৪ ওভারে দলীয় ২৩৬ রানে মাহমুদউল্লাহর বলে মুশফিকের ক্যাচ হয়ে ফেরেন জার্ভিস। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে জিম্বাবুয়ে থামে ২৪৩ রানে। ফলে বাংলাদেশ জিতে যায় ২৮ রানে।

এই নিয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৭০টি ওয়ানডেতে মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ। যেখানে ঘরের মাঠে বাংলাদেশ জিতেছে ২৮টি ও দেশের বাইরে জিতেছে ১৩টি ম্যাচ।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.