মহেশখালীতে ক্ষতিপূরনের ২২ কোটি টাকা আত্মসাৎ
শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজারঃ কক্সবাজারের মহেশখালীর কালারমারছড়ায় পেট্রোবাংলার জন্য অধিগ্রহণকৃত জমি ও পানের বরজের ক্ষতিপূরণের ২২ কোটি টাকা লোপাটের বিষয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন।
আজ রবিবার (২৭ জানুয়ারি) ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তাদের এই নির্দেশ দেন। এর অংশ হিসেবে বিষয়টি সরেজমিন তদন্তের জন্য মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দেখভাল করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, আজ দুপুর ১২টায় লোপাটকারীদের বিচার দাবি ও টাকা ফেরত চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জমি মালিক ও পানচাষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এক মাববনন্ধন করেন। মানবন্ধন শেষে তারা জেলা প্রশাসকের সাথে দেখা করে স্মারকলিপি দেন। মাববন্ধনের নারী-পুরুষসহ প্রায় দুই শতাধিক ভুক্তভোগী অংশ নেন। পরে তারা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন।
স্মারকলিপি পেয়ে জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখেন। এসময় তিনি ভুক্তভোগীদের সাথে দীর্ঘক্ষণ কথা বলে বিস্তারিত জানতে চান। ভুক্তভোগীরা ২২ কোটি টাকা আত্মসাতের বিস্তারিত জেলা প্রশাসককে জানান। জেলা প্রশাসক তাৎক্ষণিক তার কক্ষে ডেকে পাঠান ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মতিউর রহমাকে। তিনি অধিগ্রহণ কর্মকর্তাকে বিষয়টি তদন্ত করে এক সপ্তাহের মধ্যে সমাধান দেয়ার নির্দেশ দেন। না হলে এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দেন জেলা প্রশাসক।
ভুক্তভোগীরা জানান, জেলা প্রশাসকের কক্ষ থেকে বের হয়ে ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলেন ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মতিউর রহমান। তিনি প্রায় আধা ঘন্টা ভুক্তভোগীদের অভিযোগ শুনেন। তিনি তদন্ত করে বিষয়টি সুরাহা করবেন বলে জানান।
এই বিষয়ে ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মতিউর রহমান বলেন, কাগজপত্র ছাড়া একটা টাকাও ছাড়া হয়নি। কিন্তু আমরা পরে জানতে পেরেছি, কিছু অসাধু লোকজন প্রতারণার মাধ্যমে সব টাকা তারা তুলে নিয়েছে। এতে অধিকাংশ প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন বঞ্চিত হয়েছেন। বিষয়টি স্থানীয় পর্যায়ে খোঁজ নেয়ার জন্য মোঃ জামিরুল ইসলামকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জামিরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি দেখভাল করার জন্য জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে আমাকে বলা হয়েছে। আমি ভুক্তভোগীদের ডেকেছি। তাদের সাথে কথা বলে এবং সরেজমিন পরিদর্শন করে সঠিক ঘটনা জানার চেষ্টা করবো।
উল্লেখ্য, কালারমারছড়া ইউনিয়নের চিকনী পাড়ার মৃত হোছন আলীর পুত্র নূরুল ইসলাম বাহাদুর, নোয়াপাড়ার মৃত ফলাতনের পুত্র আবদুল মান্না কানু, চিকনী পাড়ার ছৈয়দ আহমদের পুত্র আবদুস সালাম ও নূরুল ইসলাম, সোনার পাড়ার নূর আহামদের পুত্র পেরু, চিকনীপাড়ার ছৈয়দ আহমদের পুত্র আবু ছিদ্দিক, সোনারপাড়ার মৃত কবির আহমদের পুত্র মনজুর আলম এবং ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কানুনগো শাওনেয়াজ কুতুবী, সার্ভেয়ার ফরিদুল আলম ও সার্ভেয়ার ওয়াসিম মিলে সোনারপাড়ায় অধিগ্রহণকৃত জমি ও পানবরজের ক্ষতিপূরণের প্রায় ২২ কোটি টাকা লোপাট করেছে।
এই লোপাটের ঘটনার জন্য নাটের গুরু হিসেবে কালারমারছড়ার জামাল উদ্দীন ও জালাল উদ্দীন নামে ভূমি অধিগ্রহণ অফিসের দুই চিহ্নিত দালালকে দায়ী করেছেন ভুক্তভোগীরা।