দুধ দিয়ে গোসলঃ পবিত্র করে নিলেন জাহালমকে

দুদক হইল এক নম্বর জালিয়াত

0

সিটি নিউজ ডেস্কঃ বিনা দোষে ৩ বছর কারাভোগ করলেন। বলতে গেলে ৩ বছর তার সুস্থ জীবন থেকে কেড়ে নেওয়া হলো। কেন দুদক ৩ বছরেও মূল আসামী নির্ণয় করতে পারলেন না। গলদটা কোথায়? দুদকের মতো এমন একটি প্রতিষ্ঠানের এটা কোন মতেই বাঞ্চনীয় নয়। সামান্য একজন পাটকল শ্রমিকের নামে দেয়া হলো কোটি কোটি টাকা লোপাটের মামলা। অথচ মূল আসামীকেই এখনো ধরতে পারলেন না দুদক তথা পুলিশ। একটা না দইটা না  দুদকের করা ৩৩ মামলার ভুল আসামি হয়ে তিন বছর ধরে কারাবন্দি জীবন কাটানোর পর বাড়ি ফিরেছেন নিরপরাধ পাটকল শ্রমিক জাহালম।

আজ সোমবার (৪ ফেব্রুয়ারী) ভোর চারটার দিকে বড় ভাই শাহানুরকে সঙ্গে নিয়ে টাঙ্গাইলের নাগরপুরে গ্রামের বাড়িতে ফেরেন তিনি। এ সময় বাড়িতে অপেক্ষায় থাকা তার মা মনোয়ারা বেগম ছেলেকে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে দুধ দিয়ে গোসল করিয়ে তাকে ঘরে তোলা হয়।

সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগে আবু সালেক নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা করে দুদক। কিন্তু দুদকের ভুলে সালেকের বদলে তিন বছর কারাগারে কাটাতে হয়েছে টাঙ্গাইলের জাহালমকে।

জাহালম বাড়ী পৌঁছার পর তা মা বোনরা তাকে দুধ দিয়ে গোসর করিযে পবিত্র করে ঘরে নেন
জাহালম বাড়ী পৌঁছার পর তা মা বোনরা তাকে দুধ দিয়ে গোসর করিযে পবিত্র করে ঘরে নেন

গত ২৮ জানুয়ারি দেশের শীর্ষ স্থানীয় একটি দৈনিকে নিরপরাধ জাহালমের জেলখাটা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ‘৩৩ মামলায় ‘ভুল’ আসামি জেলে: ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদটির তথ্য অনুযায়ী, আবু সালেকের (মূল অপরাধী) বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংকের সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির ৩৩টি মামলা হয়েছে। কিন্তু আবু সালেকের বদলে জেল খাটছেন, আদালতে হাজিরা দিয়ে চলেছেন জাহালম। তিনি পেশায় পাটকল শ্রমিক।

দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাসগুপ্ত। এর পরিপ্রেক্ষিতে রবিবার দুদকের মহাপরিচালক (আইন) মইনুল ইসলাম, দুদকের মামলার বাদী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল জাহিদ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের একজন প্রতিনিধি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিবের মনোনীত প্রতিনিধিকে আদালত তলব করে। গতকাল সকালে ওই চারজন হাইকোর্টে হাজির হন।

এছাড়া গতকাল হাইকোর্টের বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ জাহালমকে সব অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আদেশ দেন। একই সঙ্গে আদালত বলেন, ‘কোনো নির্দোষ ব্যক্তিকে এক মিনিটও কারাগারে রাখার পক্ষে আমরা নই। এ ভুল তদন্তে কোনো সিন্ডিকেট জড়িত কিন না, তা চিহ্নিত করে আদালতকে জানাতে হবে। না হলে আদালত এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে। এরকম ভুলের দায় দুদক কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।’

আদালতের আদেশের পর রবিবার দিবাগত রাত একটার দিকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ছাড়া পান জাহালম। পরে ভাই সাহানুর মিয়ার সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে রওনা হন।

জাহালমের আসার খবর পেয়ে বাড়িতে অপেক্ষা করতে থাকেন স্বজনরা। ভোর চারটার দিকে বাড়িতে আসার সঙ্গে সঙ্গে তাকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা। মা ও বোনকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন জাহালমও। তাদের দেখে কান্না ধরতে পারেনি সেখানে উপস্থিত প্রতিবেশিরাও। পরে জাহালমকে দুধ নিয়ে গোসল করিয়ে পবিত্র করে ঘরে তোলেন তা মা। এ সময় জাহালমের মা মনোয়ারা বলেন, যারা তার ছেলের ক্ষতি করেছে আল্লাহ যেন তাদের বিচার করেন।

দুদক হইল এক নম্বর জালিয়াত

তার আগে মুক্তি পাওয়ার পর কারাফটকে সাংবাদিকদের জাহালম বলেন, দুদক হইল এক নম্বর জালিয়াত। আমি কোনো অপরাধ করি নাই। তিন বছর দুদক আমারে আটকা রাখছে মামলা দিয়া- মিথ্যা মামলা দিয়া। আমি দুদকের কঠিন বিচার চাই।

ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে জাহালম বলেন, আমি অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হইছি। আমি ক্ষতিপূরণ চাই রাষ্ট্রের কাছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে।

জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর কারা ফটকে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন জাহালম
জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর কারা ফটকে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন জাহালম

বন্দিজীবনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জজ স্যাররে বলছিলাম যে, আমি এই মামলার আসামি না। আমি আবু সালেক (প্রকৃত আসামি) না, আমি জাহালম। কিন্তু তিনি আমার কথা বিশ্বাস যায়নি।

জজ সাহেব দেখছে যে, এই ছবি আর এই ছবি মিলছে, কয় আমি বলে সেই লোক। আর সাক্ষীরা তারাও বলে আমি সেই (আবু সালেক) লোক। কিন্তু আমি তো সেই সময় কোনো কিছুই জানি না।

বিনা দোষে শাস্তি পাওয়ার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সবার বিচার দাবি করে জাহালম বলেন, তাদের বিরুদ্ধে বিচার চাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে।

দুদক প্রসঙ্গে বলেন, দুদক যেভাবে মিথ্যা মামলা দিয়া মানুষরে হয়রানি করতাছে, দুদক হইলো এক নম্বর জালিয়াত। সঠিক তদন্ত না কইরা যানি (যেন) লোক ধরে না তারা। সঠিক তদন্ত নিয়া তারপর লোকদের মামলার আসামি করুক।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.