বোস্টনে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ফাল্গুনী পূর্ণিমা উৎযাপন

2

প্রবাস ডেস্কঃ আমেরিকার বোস্টনে আন্তর্জাতিক ধর্মচক্র বৌদ্ধবিহার ও ভাবনা কেন্দ্রের উদ্যোগে ফাল্গুনী পূর্ণিমা উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

আজ বুধবার সকালে বুদ্ধ পূজা, পিন্ডদান ও সমবেত প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। বিহার অধ্যক্ষ প্রফেসর মহা নিরোধা এর পরিচালনায় উক্ত অনুষ্ঠানে ফাল্গুনী পূর্ণিমার তাৎপর্য সম্পর্কে প্রফেসর মহা নিরোধা বলেন, তথাগতের শাক্যরাজ্যে গমন ও জ্ঞাতি সম্মেলনঃ মহাকারুণিক তথাগত ভগবান বুদ্ধ রাজা বিম্বিসার নির্মিত বেণুবন বিহারে অবস্থান করছেন।

বহুজনের হিতের জন্য বহুজনের মঙ্গলের জন্য ধর্মসুধা বিতরণ করে চলেছেন। রাজা শুদ্ধোধন ৭ বছর ধরে পুত্রকে দেখেননি সুতরাং তিনি পুত্রকে দর্শনের জন্য অত্যন্ত ব্যাকুল হয়ে উঠলেন। রাহুলের বয়স এখন সাত বৎসর। সংসার ত্যাগ করে যাওয়ার পর থেকে পিতাকে দেখার সৌভাগ্য তার হয়নি। রাজা তার একজন মন্ত্রীকে ১০০০ লোকসহ বুদ্ধকে নিয়ে আসার জন্য রাজগৃহের বেণুবন বিহারে পাঠালেন। মোট ৬০ যোজন পথ অতিক্রম করে তিনি যখন বেণুবনে পৌঁছলেন, দেখতে পেলেন বুদ্ধ তখন দিব্যজ্যোতি বিকিরণ করে ভক্তদের মধ্যে দেশনা প্রদান করছেন।

এই শান্ত সৌম্য পরিবেশ ও বুদ্ধের অপূর্ব জ্যোতি দেখে রাজা শুদ্ধোধনের কথা ভুলে গেলেন। তিনি একপ্রান্তে বসে ধর্মদেশনা শ্রবণে মনোযোগী হয়ে পড়লেন এবং দেশনা শেষে অরহত্ত্ব ফল প্রাপ্ত হলেন। তখন তিনি বুদ্ধের নিকট প্রব্রজ্যা হবার অনুমতি প্রার্থনা করলেন, বুদ্ধ এস ভিক্ষু বলে দীক্ষা প্রদান করলেন। এদিকে রাজা শুদ্ধোধন অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে দ্বিতীয় একজন মন্ত্রীকে সমপরিমাণ লোকসহ বেণুবনে পাঠালেন। তিনিও তথায় বুদ্ধের অমৃতময় দেশনা শুনে পূর্বের মত সঙ্গীসহ বুদ্ধের শিষ্যত্ব বরণ করলেন। রাজার সংবাদ আর উত্থাপন করলেন না।

এভাবে রাজা শুদ্ধোধন ১০০১ জন করে সর্বমোট ৯০০৯ জন লোক বেণুবনে প্রেরণ করেছিলেন পুত্র দর্শনের আশায়। কিন্তু কেহই ফিরে এলেন না। সবাই অরহত্ত্ব ফল প্রাপ্ত হয়ে নির্বাণ সুখ উপলব্ধি করছেন। অবশেষ রাজা খুবই ব্যথিত ও হতাশ হয়ে বুদ্ধের জন্মসঙ্গী কালুদায়ীকে অনুরোধ করে বললেন, “হে প্রিয় কালুদায়ী, তুমি বেণুবনে গিয়ে যে কোন উপায়ে আমার ছেলে বুদ্ধকে কপিলাবস্তু নিয়ে আসবে। পূর্বে পাঠানো সবাই প্রব্রজিত হয়ে বুদ্ধের শিষ্য হয়ে গেছে। তোমার যদি প্রব্যজ্যা গ্রহণের ইচ্ছা হয় আমার কোন আপত্তি থাকবে না। তবে আমার প্রিয় পুত্র বুদ্ধকে ফাং করে তুমি কপিলাবস্তু আনার ব্যবস্থা করবে এবং এক হাজার সঙ্গী দিয়ে রাজগৃহের বেণুবনে প্রেরণ করলেন।

মন্ত্রী কালুদায়ী বেণুবনে পৌঁছে ষড়রশ্মি বিচ্ছুরিত অপূর্ব প্রজ্ঞাশ্বর বর্ণে আলোকিত জগতজ্যোতি বুদ্ধকে দর্শন করে এক অনাস্বাদিত আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে বুদ্ধের চরণ বন্দনা করলেন। বুদ্ধ তাঁকেও দেশনা করলেন। কিন্তু তিনি রাজা শুদ্ধোধনের কথা ভুলে যাননি। সুযোগ বুঝে তিনি ৬৪টি গাথার মাধ্যমে অত্যন্ত সুনির্দিষ্ট ও ছন্দময় ভাষায় রাজা শুদ্ধোধনের প্রার্থনা বুদ্ধের নিকট ব্যক্ত করলেন। বুদ্ধকে তিনি আরও বললেন, ”প্রভু বুদ্ধ! আপনার বৃদ্ধ পিতা রাজা শুদ্ধোধন আপনাকে দর্শন করার জন্য বড়ই আগ্রহী।

তদুপরি আপনার জ্ঞাতিবর্গের মধ্যে ধর্মসুধা বিতরণ করে তাদেরকে উদ্ধার করা উচিত। কালুদায়ীর ফাং বুদ্ধ গ্রহণ করে বিশ হাজার শিষ্যকে নিয়ে কপিলাবস্তু যাবার প্রস্তুতি নিতে আদেশ দিলেন। দিনে এক যোজন পথ অতিক্রম করে ৬০ দিনে কপিলাবস্তু পৌঁছেন।

পিতা শুদ্ধোধনকে ধর্মদানঃ বুদ্ধের আগমন সংবাদ পেয়ে রাজা শুদ্ধোধন শাক্যবংশীয় রাজাদের সাথে আলোচনা করে বুদ্ধকে যথোচিত সংবর্ধনা প্রদানের জন্য নিগ্রোধ উদ্যানকে বুদ্ধ ও সংঘের বসবাসের উপযোগী করে সাজিয়ে রাখলেন।

অতঃপর স্ব-পরিষদ বুদ্ধকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য বিচিত্র বসন-ভূষণে অলংকৃত শিশু-কিশোরদেরকে পুরোভাগে রাখলেন। তরুণ-তরুণী, রাজকুমার-রাজকুমারী ও বয়ষ্করা নানাবিধ পূজা উপকরণ সহ ন্যাগ্রোধ আরামে এসে উপস্থিত হলেন। ২০ হাজার শিষ্যসহ মহাকারুণিক বুদ্ধ ন্যাগ্রোধ আরামে এসে উপস্থিত হলেন এবং বুদ্ধাসনে উপবেশন করলেন। শাক্যজাতি স্বভাবতই অত্যন্ত অভিমানী ও বংশকূলের গৌরব করে থাকে। বুদ্ধের চাইতে যারা বয়সে অগ্র যেমন কাকা, মামা, জেঠা তারা একপাশে দাঁড়িয়ে রইলেন।

তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতীদের যারা বুদ্ধের কনিষ্ঠজন তাদেরকে সামনে গিয়ে বুদ্ধকে অভিবাদন জানাবার নির্দেশ দিলেন। তারা বুদ্ধের বুদ্ধত্বকে বয়সের মাপকাঠি দিয়ে বিচার করবার চেষ্টা করলেন। ভগবান বুদ্ধ দিব্যচক্ষু দ্বারা শাক্যদের মনোভাব বুঝতে পেরে চিন্তা করলেন, আমার জ্ঞাতিগণ দেখছি স্বেচ্ছায় আমাকে শ্রদ্ধা ও বন্দনা জানাবেন না কারণ আমাকে জানবার জ্ঞান তাদের নেই। তাই তিনি ঋদ্ধি উৎপাদনকারী চতুর্থ ধ্যানে মগ্ন হলেন। অনুষ্ঠানে আরও আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন । তপন চৌধুরী সুমিত বড়ুয়া, কল্লোল বড়ুয়া, উজ্জ্বল বড়ুয়া, জুয়েল বড়ুয়া, সহ আরো অনেকে। পরিশেষে জগতের সকল প্রাণীর মঙ্গল কামনায় বিশেষ প্রার্থনা করা হয়।

এ বিভাগের আরও খবর
2 Comments
  1. Monalisa Barua says

    কে কিংবা কারা! বোষ্টনের মত বিশ্বের উন্নত একটি শহরে এসে তাও আবার বৌদ্ধ ধর্ম নিয়ে এ ধরনের মিথ্যাচার, অসত্য এবং উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে যা হয় নাই এবং যা করেন নাই তা হয়েছে এবং করেছেন বলে দাবি করছেন ? কার জন্য এই মিথ্যাচার, বোষ্টনে বসবাসরত বৌদ্ধরা কি অন্ধ নাকি বোবা? কেন তাঁদের সাথে এভাবে প্রতারণা মূলক খবর পরিবেশন করছেন? মিথ্যাচারের পরিণতি জানেন কি? আমেরিকায় মিথ্যাচার করলে তার পরিনাম আপনার/আপনাদের কি জানা নেই? বোষ্টনে অন্যায় এবং বেআইনি ভাবে তপন চৌধুরী যে বৌদ্ধ বিহার করতে চেয়েছেন তা সিটি অফ চেলসি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে এবং তাঁর এই ধরনের অপকর্ম বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে। গত সপ্তাহের বাংলাপ্রেস নামক বোষ্টনের অনলাইন পত্রিকায় তার উপর সংবাদ এসেছে। আপনারা পূর্বে ঘোষণা দিয়েছেন আজকে ২০শে মার্চ ফাল্গুনী পূর্ণিমা করবেন কিন্তু দেখা গেল গত ৯ই মার্চের একটা ছবি দিয়ে পূর্ণিমার পূর্ব ঘোষিত দিন ২০শে মার্চ শুরু হওয়ার আগেই নিউজ প্রকাশ করলেন ফাল্গুনী পূর্ণিমা সম্পন্ন হয়ে গেছে ! এ টা কোন ধরনের বাটপারী? কেন তপন চৌধুরীকে নিয়ে আত্মীয়বর্গ সবাই ডুবতে বসলেন। কেন একজন পূজনীয় ভিক্ষু নিয়ে এসে তাঁকেও মিথ্যাচারে ডুবাচ্ছেন। সংবাদ পরিবেশককে এই ধরনের সংবাদ পরিবেশনের আগে সঠিক খবর যাচাই করতে অনুরোধ করছি , নতুবা অপরকে খুশি করতে গিয়ে নিজেরাও মানহানির শিকার হবেন। চেলসি সিটির আদেশ রয়েছে , ১৬৫ গার্ফিল্ড এভেন্যুতে কেহ কোন ধরনের ধর্মীয়, সামাজিক বা কোন ধরনের জনসমাগম করলেই তা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। অতএব, একটি আবাসিক এলাকায় কেহ এই ধরনের প্ৰতিষ্ঠান দাবী করা মানে নিজে এবং অন্যকেও আইনের হাতে বন্দি হওয়ার পথে ঠেলে দেয়া। আর একবার কেহ আইন ভঙ্গ করলে আমেরিকার মত দেশে তাকে আর চাকরি ব্যবসা করতে হবেনা। কোর্ট আর উকিলের পেছনে দৌড়াতে গিয়ে আমেরিকার সোনার হরিণ কারাগারেই খুঁজতে হবে! সাধু সাবধান !!!!

    1. ctnews bd says

      উৎপল কুমার বড়ুয়া নামে একজন নিউজটা দিয়েছিলেন, উনার বাড়ী সম্ভবত সীতাকুণ্ডে। আমাদের সীতাকুন্ড প্রতিনিধির মাধ্রমে নিউজটা আমাদের অফিসে আসে।

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.