চট্টগ্রাম ছাত্রদল উত্তর-দক্ষিন ও নগরে হযবরল !

0

জুবায়ের সিদ্দিকীঃ চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের অবস্থা এখন প্রায় শুন্য। প্রায় ছয় বছর আগে ঘোষিত নগর ছাত্রদলের বিদ্যমান কমিটির সদস্যরাও সাংগঠনিক কর্মকান্ডে হারিয়ে গেছেন। পাঁচ বছর আটমাস আগে ১১ সদস্যের নগর ছাত্রদলের কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এর মধ্যে একজন মারা গেছেন। বাকিদের মধ্যে নয়জনই যোগ দিয়েছেন বিএনপির অন্য অঙ্গসংগঠনগুলোতে। ফলে মাত্র এক সদস্যের নগর ছাত্রদলকে হারাধনের গল্পের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে সাবেক ছাত্রনেতা ও চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সহ-সভাপতি শাহেদ আকবর বলেন,’ চট্টগ্রাম মহানগরে ছাত্রদল নাই-ই। এটা তো মৃত। তাদের কোন কর্মকান্ড আছে? নেতাদের কেউ বিএনপিতে, কেউ সেচ্ছাসেবক দলে যোগ দিয়েছেন। এখন দরকার যোগ্যদের নিয়ে ছাত্রদল গঠন করা। কোন অবস্থাতেই ৩০ বছর বয়সের বেশি কাউকে ছাত্রদলের সম্পৃক্ত করা উচিত হবে না। এদিকে নগর ছাত্রদল সুত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ২১ জুলাই নগর ছাত্রদলের ১১ সদস্যের কমিটি ঘোষনা করা হয়েছিল। এতে সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক এবং চারজন সহ-সভাপতি, চারজন যুগ্ন সম্পাদক এবং একজনকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়।

কেন্দ্র থেকে এ কমিটিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল পরবর্তী তিন মাসের মধ্যেই পুর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করার। কিন্তু গত প্রায় ছয় বছরে পুর্নাঙ্গ হয়নি এ কমিটি। বরং অন্য সংগঠনে যোগ দিয়েছেন নেতারা। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, ১১ জনের মধ্যে ২০১৭ সালের ১৭ মে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান যুগ্ন সম্পাদক জালাল উদ্দিন সোহেল। এ ছাড়া সভাপতি গাজী মোহাম্মদ সিরাজ উল্লাহ যোগ দেন বিএনপিতে। তিনি বর্তমানে মহানগর বিএনপির যুগ্ন সম্পাদক। পাশাপাশি সাধারন সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু বর্তমানে নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি পদে আছেন।

এ ছাড়া নগর ছাত্রদলের চারজন সহ-সভাপতি যথাক্রমে মঈন উদ্দিন শহীদ বর্তমানে নগর বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক, ফজলুল হক সুমন নগর যুবদলের সহ-সভাপতি ও জিয়াউর রহমান জিয়া নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে রয়েছেন। নগর ছাত্রদলের চার যুগ্ন সম্পাদক যথাক্রমে জমির উদ্দিন নাহিদ স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ন সম্পাদক, আলী মুর্তুজা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ন সম্পাদক ও মোশাররফ হোসেন যুবদলের সিনিয়র যুগ্ন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। শুধু সহ-সভাপতি জসিম উদ্দিন চৌধুরী এ পর্যন্ত কোন সংগঠনের সাথে যুক্ত হননি। এদিকে ছাত্রদলের বেহাল দশার প্রভাব পড়েছে সাংগঠনিক কর্মকান্ডেও।

দলীয় কোন কর্মসুচীও থাকে না তাদের। এমনকি গত ১ জানুয়ারী ছাত্রদলের প্রতিষ্টাবার্ষিকীও পালন করেনি নগর কমিটি। অবশ্য নগর ছাত্রদলের সভাপতি প্রার্থী জসিম উদ্দিন হিমেলের নেতৃত্বে সংক্ষিপ্ত পরিসরে দোয়া মাহফিল করেছিল। নগর ছাত্রদলের সাংগঠনিক কর্মকান্ড ঝিমিয়ে পড়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বেলায়েত হোসেন বুলু বলেন,’ আমি বর্তমানে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারন সম্পাদক। এ পদে আসার পর থেকে ছাত্রদলের কর্মকান্ড পরিচালনা করি না। কেন্দ্রকে বারবার বলেছি, নতুন কমিটি দেয়ার জন্য। কিন্তু দেয়নি’।

নগর বিএনপির সিনিয়র নেতাদের হস্তক্ষেপের কারনেই নগর ছাত্রদলের কমিটি হচ্ছে না ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, মহানগর ও সেন্ট্রাল নেতাদের উপর শ্রদ্ধা রেখে বলছি, নিজেদের গ্রুপ চিন্তা করবেন না। বরং যোগ্য ও আন্দোলন সংগ্রামে ছিলেন যারা তাদের মধ্যে থেকে ছাত্রদলের নেতৃত্ব বাছাই করুন। সাহসী নেতৃত্ব বাছাই করুন। নগর কমিটির কোন পদে না থাকলেও বিভিন্ন সময়ে ছাত্রদলের ব্যানারে দলীয় কর্মসুচী পালন করতে দেখা গেছে জসিম উদ্দিন হিমেল কে।

নগর কমিটির এ সভাপতি প্রার্থী বলেন,’নগর ছাত্রদলের অবস্থা খুবই করুন। একজন ছাড়া বাকিরা বিভিন্ন কমিটিতে আছেন। নগর ছাত্রদলের কমিটি গঠন করা দরকার। এবং সেটা দ্রুতই করতে হবে। বিএনপিকে ষ্টাবলিস্ট করতে হলে ছাত্রদলকে সুসংগঠিত করার বিকল্প নেই। এদিকে নগর ছাত্রদলের অতীত ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা গেছে, নগরে সর্বশেষ পুর্নাঙ্গ কমিটি হয়েছিল ২০০৩ সালে। পরবর্তীতে ২০০৫ সালে ছাত্রদলের দুই নেতার সমর্থকদরে মধ্যে সংঘর্ষের পর কয়েক বছর বিলুপ্ত ছিল নগর কমিটির কার্যক্রম। এরপর ২০১০ সালের ১০ আগষ্ট নতুন কমিটি গঠনের জন্য সপ্তম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হলেও সেই ফলাফল প্রকাশ করেনি কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। এরপর ২০১৩ সালে কমিটি গঠন করা। সেটিও অপুর্নাঙ্গ।

১৬ বছর পরে দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসান ও সাধারন সম্পাদক আকরামুল হাসান। নতুন কমিটিতে চট্টগ্রাম কলেজের মাষ্টার্সের ছাত্র শহীদুল ইসলাম শহীদকে সভাপতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাস্টার্সের ছাত্র মো: মহসিনকে সাধারন সম্পাদক এবং ইকবাল হায়দার চৌধুরীকে সিনিয়র সহ-সভাপতি কে.এম আব্বাসকে যুগ্ন সম্পাদক ও গাজী মনির কে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। গত বছরের ১ আগষ্ট এই কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। এ কমিটিতে স্থান পাওয়া নেতাদের মধ্যে প্রানচাঞ্চল্য দেখা গেলেও পদবঞ্চিতদের মধ্যে রয়েছে অসন্তোষ। যে কারনে বিগত জাতীয় নির্বাচনের পুর্বে দক্ষিনের দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে মাঠে সরব ছিল না ছাত্রদল।

২০০২ সালের নভেম্বর মাসে ছাত্রদল নেতা মহসিন চৌধুরী রানাকে সভাপতি ও রেজাউল করিম নেছারকে সাধারন সম্পাদক করে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের পুর্নাঙ্গ কমিটি অনুমোদন করা হয়। পরে ২০১১ সালে ছাত্রদল নেতা জসিম উদ্দিনকে সভাপতি এবং মরহুম শহীদুল ইসলামকে সিনিয়র সহ-সভাপতি করে প্রথমে ১৪ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি করা হয়েছিল। পরে আহবায়ক কমিটিতে ২০৫ সদস্যে উন্নীত করা হয়েছিল। নতুন অনুমোদিত কমিটির শহীদুল আলম শহীদ ও সাধারন সম্পাদক মো: মহসীন চৌধুরীর মতে, দক্ষিন জেলা ছাত্রদলের কমিটি অনুমোদন পাওয়ায় দীর্ঘ দিন পরে প্রতিটি উপজেলার নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রানচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। এদিকে পদবঞ্চিত নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,’ যারা দীর্ঘদিন ধরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়ার আদর্শ বুকে ধারন করে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে সেসব নেতাকর্মীকে মুল্যায়ন করা হবে।

এদিকে চট্টগ্রাম উত্তর জেলায় ছাত্রদলের অবস্থা এতটা দুর্বল যে, ছাত্রদল কোন কর্মসুচী পালন করতে পারছে না। বিএনপির সিনিয়র নেতাদের দ্বন্দ্ব ও গ্রুপিং রাজনীতির প্রভাব পড়েছে ছাত্রদলে। এসব কারনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ছাত্রদলের শক্ত অবস্থান দেখা যায়নি। জানা গেছে, ’এখন দল গোছাচ্ছে বিএনপি। বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নতুন আহবায়ক কমিটি করা হচ্ছে। সে লক্ষ্যে ছাত্রদলকেও ঢেলে সাজাতে চায় বিএনপি। বিএনপির সহযোগী সংগঠনগুলোর অন্যতম হচ্ছে ছাত্রদল। ছাত্রদল থেকে বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনে যুক্ত একসময় বিএনপির মুল রাজনীতিতে স্থান পায়। দলে ও দেশ পরিচালনায় ভুমিকা রাখেন। বর্তমান বিএনপির নীতিনির্ধারকদের অনেকের রয়েছে সোনালী অতীত। আন্দোলন সংগ্রাম ও নেতৃত্বে ছিলেন এগিয়ে। সেই ছাত্রদলের এখন করুন অবস্থা।

গত ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন (ডাকসু) তে কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি সংগঠনটি। এ জন্য বর্তমান শীর্ষ দুই নেতাকে দুষছেন নিচু সারির নেতারাও বিএনপির হাইকমান্ড। ২৯ বছর পর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ছাত্রদল তাদের প্যানেল চুড়ান্ত করতেই হিমশিম খায়। সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা বলছেন, নতুন কমিটি করতে হবে। তবে কোন লেভেলের নেতাদের নিয়ে কমিটি হবে তা নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা।

জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর রাজীব আহসানকে সভাপতি ও মো: আকরামুল হাসানকে সাধারন সম্পাদক করে ছাত্রদলের ১৫৩ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষনা করা হয়। এরপর একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কমিটির বেশিরভাগ নেতার ছাত্রত্ব না থাকাসহ বিভিন্ন কারনে ব্যাপক সমালোচিত হয়। যে কারনে জেলা, উপজেলা থেকে নগর এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্টানের কমিটিগুলোর চেনঅব কমান্ড নেই।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.