নুসরাত রাফিকে হত্যাচেষ্টাঃ ৭ দিনের রিমান্ডে সিরাজ উদ দৌলা

0

সিটি নিউজ ডেস্কঃ মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টা মামলার এজাহারভুক্ত এক নম্বর আসামি ও সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদ দৌলার ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

আজ বুধবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে সোনাগাজী উপজেলা আমলি আদালতের বিচারক মো. শরাফউদ্দীন শুনানি শেষে এই রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন।

এর আগে বেলা সাড়ে ১২টার সময় আসামি এস এম সিরাজ উদ দৌলার ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে সোনাগাজী উপজেলা আমলি আদালতে হাজির করেন মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা সোনাগাজী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কামাল হোসেন। এ ছাড়াও এজাহারভুক্ত অপর আসামি মাদ্রাসার ইংরেজির প্রভাষক আফসার উদ্দিন ও আলিম পরীক্ষার্থী আরিফুর রহমানের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হলে তাদের ৫ দিন মঞ্জুর হয়।

উল্লেখ্য, গত ৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে আলিম (এইচএসসি) পর্যায়ের আরবি প্রথমপত্র পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসাকেন্দ্রে যান ঐ ছাত্রী। এরপর কৌশলে তাকে পাশের ভবনের ছাদে ডেকে নেওয়া হয়। পরে ঐ মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে তার দেওয়া শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলে নিতে বলেন বোরকা পরিহিত ৪-৫ জন। সে রাজি না হলে রাফির গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন তারা। এতে তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যায়।

পরে ঐ ছাত্রীকে উদ্ধার করে প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে ফেনী সদর হাসপাতালে পাঠান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়। গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় বর্তমানে নুসরাত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এদিকে এই ঘটনায় মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) দগ্ধ ছাত্রী নুসরাতের বাসা থেকে তার লেখা একটি চিঠি মামলার আলামত হিসেবে উদ্ধার করে পুলিশ। চিঠিটি উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সোনাগাজী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মো. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, চিঠিটি আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে। চিঠিতে যাদের নাম আছে, প্রয়োজনে তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। এদিকে চিঠিটির বিষয়বস্তু বিবেচনায় এটি সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার হাতে যৌন হয়রানির পর সহপাঠী বান্ধবীদের উদ্দেশ্যে লেখা বলে মনে করছেন তদন্তকারী সূত্র।

চিঠিতে গত ২৭ মার্চ ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন রাফি। ওই চিঠিতে রাফি আত্মহত্যা করবে না বলেও উল্লেখ করেন। তবে যৌন হয়রানির ঘটনার পর সিরাজ উদ দৌলা গ্রেফতার হলে তার মুক্তির দাবিতে বান্ধবীদের অংশগ্রহণে ক্ষোভ প্রকাশ করে নুসরাত। তাকে নিয়ে বান্ধবীদের বিভিন্ন কটূক্তিতেও তার মর্মাহত কথা উল্লেখ করা হয় চিঠিতে।

চিঠির এক লেখায় রাফি বান্ধবীদের উদ্দেশে বলেন, ”তোরা জানিস না, ওই দিন রুমে কি হইছে? উনি আমার কোন জাগায় হাত দিয়েছে এবং আরও কোন জায়গায় হাত দেওয়ার চেষ্টা করেছে।” উদ্ধার ওই চিঠিটি পড়ার টেবিলের একটি খাতায় দুই পাতায় লেখা ছিল। তামান্না ও সাথী নামের দুই বান্ধবীকে উদ্দেশ্য করে চিঠিটি লেখা হয়েছে বলে তদন্তকারী সূত্র জানায়।

এদিকে হত্যাচেষ্টার এ ঘটনায় ফেনীর সোনাগাজী থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কামাল উদ্দিনকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।

এ মামলা তদন্তের জন্য পুলিশ ইনভেস্টিগেটিভ ব্যুরোতে (পিবিআই) স্থানান্তর করা হয়েছে। স্পর্শকাতর এ মামলাটি তদন্ত করবে ফেনীর পিবিআইপ্রধান এএসপি মনিরুজ্জামানকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বুধবার (১০ এপ্রিল) পুলিশ সদর দপ্তরের জনসংযোগ শাখার এআইজি সোহেল রানা এ তথ্য জানিয়েছেন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.