চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি উজ্জীবিত হচ্ছে তৃণমূল

0

জুবায়ের সিদ্দিকীঃ  চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র কমিটি পুনর্গঠন করা হচ্ছে আট বছর পর। এ ক্ষেত্রে দলের হাইকমান্ডের নির্দেশিত তিনটি অপশনের যে কোন একটি বাছাই করতে হবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতাদের। ১৫১ সদস্যের আহবায়ক কমিটি, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি অথবা বিদ্যমান কমিটির অধীনেই সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন।

এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গত ১৮ মার্চ নগরীর দলীয় কার্যালয়ে পুনর্গঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের বৈঠক করার কথা থাকলেও তা হয়নি। এর আগে কেন্দ্রীয় বিএনপি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সিনিয়র চারজন নেতাকে নিয়ে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দলটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান নতুন কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র যুগ্ন মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম।

উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, সাধারন সম্পাদক গাজী শাহজাহান জুয়েল, সিনিয়র সহ-সভাপতি শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও সাংগঠনিক সম্পাদক এস.এম মামুন মিয়া। দক্ষিণ জেলার অধীন সংসদীয় আসন থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া বিএনপির প্রার্থীরা এতে উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটি পুর্নগঠনের দায়িত্ব পাওয়া কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, ’দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করছি। যে কোন মুহুর্তে কমিটি ঘোষনা করা হতে পারে’।

তবে কোন প্রক্রিয়ায় কমিটি ঘোষনা করা হবে তা তিনি জানাতে চাননি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক প্রতিমন্ত্রী মন্ত্রী আলহাজ্ব জাফরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন,’ দক্ষিণ জেলা বিএনপির’র কমিটি পুর্নগঠনের বিষয়টি কেন্দ্রীয় বিএনপি’র এখতিয়ার। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা এটি বলতে পারবেন। প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে সম্মেলন করে গঠন করা হয়েছিল চট্টগ্রাম দক্ষিন জেলা বিএনপির কমিটি। জাফরুল ইসলাম চৌধুরীকে সভাপতি ও শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দিনকে সাধারন সম্পাদক করা হয়েছিল। যা দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অনুমোদনও দিয়েছিল।

২০১১ সালের এপ্রিলে কমিটি আবারো পুনর্গঠন করা হয়। সেবার জাফরুল ইসলাম চৌধুরীকে সভাপতি ও গাজী শাহজাহান জুয়েলকে সাধারন সম্পাদক ও শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দিনকে সহ-সভাপতি করা হয়। তিন বছরের জন্য গঠিত এ কমিটি আট বছরে পা দিয়েছে। কেন্দ্রের চাপে ওই বছরের ৬ ব্রেফ্রুয়ারী ঢাকায় বৈঠক করেছিলেন দক্ষিণ জেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দ। কিন্তু নিজেদের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় ভেস্তে যায় কমিটি গঠনের উদ্যোগ।

এর আগে ২০১৫ সালের ৯ আগষ্ট কমিটি পুনর্গঠনের জন্য সভাপতি-সাধারন সম্পাদকের কাছে চিঠি দিয়ে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন কেন্দ্রীয় বিএনপি। তবে নির্ধারিত সময়সীমা পার হলেও দক্ষিণ জেলা বিএনপিকে পুর্নগঠনের কোন উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। অভিযোগ আছে,’দুই নেতার মধ্যকার দ্বন্দ্বের কারণে দক্ষিণ জেলার অধীন বিভিন্ন উপজেলা ও পৌর কমিটিগুলোও বিভক্ত হয়ে পড়েছে। মাঝখানে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এনামুল হক এনামের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে দল থেকে অব্যাহতি পান শাহজাহন জুয়েল।

২০১৭ সালের ৩ মে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল দক্ষিণ জেলা বিএনপির কর্মী সমাবেশ। সেদিন দক্ষিণ জেলার সাধারন সম্পাদক গাজী শাহজাহান জুয়েল এবং সহ-সভাপতি এনামুল হক এনামের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষে পন্ড হয় কর্মী সমাবেশ। এতে আহত হন স্বয়ং এনামও। চট্টগ্রামের ১৫ জন নেতার সঙ্গে ওই বছরের ১৫ মে বৈঠকে বসেন খালেদা জিয়া। ওই বৈঠকে শাহজাহান জুয়েলকে দল থেকে অব্যাহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল।

অবশ্য একই বছরের নভেম্বর মাসে সেই অব্যাহতি আদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এদিকে ২০১৬ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সকল উপজেলা ও পৌরসভার বিদ্যমান সাংগঠনিক কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। দক্ষিন জেলা বিএনপির অধীন সাংগঠনিক ৭টি উপজেলা, ৫টি পৌরসভা ও একটি থানা রয়েছে। জানা গেছে, দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র বর্তমান কমিটির অনেক নেতা রাজনীতিতে সম্পুর্ন নিস্ক্রিয়। আছেন ব্যক্তিগত ব্যবসা-বানিজ্যে ব্যস্ত। দক্ষিন জেলার অধীন ৭টি উপজেলায় সাংগঠনিক অবস্থা খারাপ। নেতাদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব গ্রুপিং ও দলীয় ভুল সিদ্ধান্তের খেসারত দিচ্ছে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

বিভিন্ন ইউনিট কমিটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে নেতাদের যোগাযোগ নেই। চেন অব কমান্ড ভেঙ্গে গেছে ওয়ার্ড ইউনিয়ন থেকে উপজেলা বিএনপিতে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস হারিয়ে ফেলেছে দলটি। এ দলকে গুছানোর কোন চেষ্টা নেই জেলা নেতাদের। উপরন্তু জেলা নেতাদের মধ্যে বিরোধ, গ্রুপিং ও ল্যাং মারা রাজনীতি চর্চার কারনে অস্তীত্ব সংকট দেখা দিয়েছে। তৃনমুল নেতাকর্মী থেকে সিনিয়র পর্যন্ত বিভিন্ন মামলায় জর্জরিত হয়ে পুলিশের অভিযানের মুখে এলাকা ছেড়েছে।

তৃণমূলের নেতাদের দু:সময়ে কাছে থাকেননি নেতারা। এসব কারনে দক্ষিন জেলা বিএনপিতে এখন হতাশা ভর করেছে। অভিযোগ রয়েছে, দক্ষিন জেলার পটিয়ায় সাবেক এমপি গাজী শাহজাহান জুয়েল ও সহ-সভাপতি এনামুল হক এনামের মধ্যে রয়েছে দ্বন্দ্ব ও গ্রুপিং। দুই নেতার অনুসারীরা রয়েছেন পরস্পর বিরোধী অবস্থানে। অবস্থাটা এমন যে, এক গ্রুপ অপর গ্রুপকে দমিয়ে রাখার ফর্মুলায় সরকারী দলের নেতাদের কাছে ধর্না দিচ্ছেন।

একই অবস্থা বোয়ালখালীতে। গত নির্বাচনে নগর বিএনপির সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ানকে দলীয় প্রার্থী করা হলেও তার পক্ষে মাঠে ছিলেন না হেভিওয়েট নেতা এম.মোরশেদ খান ও এরশাদ উল্লাহর অনুসারীরা। পটিয়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, আনোয়ারা ও বাঁশখালী উপজেলায় একই অবস্থা। প্রবীন বিএনপি নেতাদের অনেকের মতে, দলীয়ভাবে ভুল সিদ্ধান্তের খেসারত দিচ্ছে তৃণমূলের নেতাকর্মী থেকে সিনিয়র নেতারাও। তাদের মতে জরুরী ভিত্ত্বিতে তৃনমুল থেকে জেলা পর্যায় পর্যন্ত সকল সাংগঠনিক কমিটি গঠন করে দলকে গতিশীল ও নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করা না হলে ভবিষ্যতে আরও খারাপ অবস্থা হতে পারে।

বিএনপির দলীয় সুত্র মতে, দক্ষিন জেলাধীন বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের অবস্থাও একই রকম। নেতাদের মধ্যে বিরোধ, গ্রুপিং ও একলা চল নীতির কারনে পদে পদে মার খাচ্ছে। অপরদিকে দলীয় ভুল সিদ্ধান্তও অনেকটা দায়ী। সিনিয়র নেতাদের মতে,’ উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহন না করা এবং দলীয় প্রার্থীদের বহিস্কার ঘোষনা ছিল আরেকটি ভুল সিদ্ধান্ত। তাদের মতে দল যদি নির্বাচনমুখী না হয় তবে কর্মী সমর্থক থেকে দুরে সরে যাবে। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মামলা, হামলা, হয়রানী ও ঠিকে থাকার জন্য সরকারী দলের সঙ্গে মিশে যেতে শুরু করেছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে মাঠে দাঁড়ানোর অবস্থা থাকবে না। এসব সতর্কবার্তা প্রবীন নেতাদের। ছাত্রদল নেতাদের অনেকে বলেন,’ দলের সিনিয়র নেতারা যদি আন্তরিকভাবে আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে আসে তবে জনগনের শতস্ফুর্ত অংশগ্রহন বাড়বে। তাদের মতে,’ বরাবরই চট্টগ্রামে বিএনপির জনপ্রিয়তা ছিল এবং আছে। জনসম্পৃক্ততা না থাকলে দলের অচলাবস্থা দুর হবে না। নেতাদের মতে,’ ইতিমধ্যে দক্ষিন জেলার বিভিন্ন উপজেলার গ্রেপ্তার হওয়া নেতাকর্মীরা জামিনে বেরিয়ে এসেছে। আরও কিছু নেতা সহসা জামিনের অপেক্ষায়। অপরদিকে আন্দোলন, সংগ্রাম ও সরকার বিরোধী কর্মসুচীর ধরন পাল্টানোর তাগিদ দিচ্ছে তারা। সহিংসতার পরিবর্তে অহিংস ও জনসম্পৃক্ত কর্মসুচী দেওয়ার পক্ষে জোর দিচ্ছে তারা।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.