মেয়াদোত্তীর্ন কমিটি নিয়ে চলছে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ

0

জুবায়ের সিদ্দিকীঃ চট্টগ্রাম উত্তর, দক্ষিন ও নগর আওয়ামী লীগের কমিটির মেয়াদোত্তীর্ন হয়ে গেছে। এই তিন সাংগঠনিক জেলার আওতাধীন ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও পৌরসভা কমিটিগুলোতে একই অবস্থা। অনেক উপজেলায় এক যুগেরও বেশি সময় এক কমিটি পার করছে। ওই সব কমিটির নেতাদের অনেকে মৃত্যুবরন করেছেন। যারা আছেন তাদের অনেকেই বয়োবৃদ্ধ ও অসুস্থ। সাংগঠনিক কর্মসুচি বাস্তবায়ন করার মত সক্ষমতা নেই। এসব কারনে ঝিমিয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগের রাজনীতি।

এসব কারনে জাতীয় ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পর নতুন করে কমিটি গঠনের প্রতি জোর দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া সংগঠনিকভাবে দলকে শক্তিশালী করতে জেলা, উপজেলা কমিটি গঠনে সিনিয়র নেতাদেরও তাগাদা দেওয়া হয়েছে। আগামী অক্টোবরে জাতীয় সম্মেলনের আগে সবক’টি কমিটি গঠন কাজ শেষ করতে চায় দলটি। আর কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত পেলেই চট্টগ্রামের নেতারা কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শুরু করবেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে উত্তর জেলা ও নগর আওয়ামী লীগের দুই সভাপতির মৃত্যুতে ভারপ্রাপ্ত দিয়েই চলছে সাংগঠনিক কার্যক্রম।

চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিন বলেন, নেত্রীই কমিটি করবেন। কেন্দ্র যখনই কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিবেন, তখনই আমরা সিদ্ধান্ত মেনে নিব। থানা কমিটি গঠন কাজ চলমান আছে। ২০১৮ সালে নির্বাচনের কারনে কিছুদিন কর্মকান্ড বন্ধ ছিল। এর পর কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ করেছি। কমিটি গঠনে যেটি বাধা ছিল সেটি তুলে দেয়া হয়েছে। এখন আমরা ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা কমিটি গঠনে পদক্ষেপ নিচ্ছি। কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগেই সবকটি কমিটি গঠন করে নগর কমিটি গঠনের পূর্বপ্রস্তুতি সম্পন্ন করবো।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম.এ সালাম বলেন, কেন্দ্র থেকে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে এখনো কোন চিঠি পাইনি। আনুষ্ঠানিক চিঠি পেলেই আমরা পদক্ষেপ নিব। এর আগে আমরা ফটিকছড়িতে নতুন কমিটি করে দিয়েছি। অন্যান্য কমিটিগুলো নতুন করেই করা হবে। এরপর নেত্রী জেলা কমিটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিবেন।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, আমরা যে কমিটিগুলো করতে পারি নাই, সেগুলো করার উদ্যোগ নিচ্ছি। আমরা দায়িত্ব পাওয়ার পর পাঁচটি কমিটি গঠন করেছি। আরো পাঁচটি কমিটি বাকি আছে। এসব কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করবো। এরপর কেন্দ্র থেকে যখনই চাইবে জেলা কমিটি ঘোষনা করতে পারবে।

দলীয় সুত্র জানায়, উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগর আওয়ামী লীগে মেয়াদোত্তীর্ন কমিটি দিয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে। ২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর নগর আওয়ামী লীগের কমিটি, ২০১২ সালের ২৫ ডিসেম্বর উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি, ২০১৩ সালের ৯ এপ্রিল দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠিত হয়। এর মধ্যে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত হলেও নগর ও দক্ষিণ জেলা কমিটি কেন্দ্র থেকে দেওয়া হয়।

মেয়াদোত্তীর্ন এসব কমিটির মধ্যে উত্তর জেলার সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরীর মৃত্যুতে সেখানে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন রাউজান থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী। নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুতে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী।

গত বছরের ৫ মে নগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত তৃনমুলের বর্ধিতসভায় সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেয়ে আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দ্বৈত কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে নতুন কমিটি করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এর প্রেক্ষিতে ২১ জুন নগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় সাত দ্বৈত কমিটি স্থগিত করা হয়। পরে ২৭ জুন আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা ডেকে কমিটিগুলোর বিষয়ে আবারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক মাহাবুবুল আলম হানিফ দ্রুত সময়ের মধ্যে সাত ওয়ার্ডে আহবায়ক কমিটি গঠনের জন্য নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদককে পুনরায় নির্দেশ দেন।

২৭ জুলাই সতা ওয়ার্ডের প্রত্যেকটিতে একজনকে আহবায়ক, তিনজনকে যুগ্ন-আহবায়ক ও ৪৭ জনকে সদস্য করে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। গত পাঁচ বছরে সাংগঠনিক কর্মকান্ডে এটিই ছিল নগর আওয়ামী লীগের বড় সফলতা। বাকি কমিটিগুলো মেয়াদোত্তীর্ন হলেও কমিটি গঠনে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এমনকি কয়েকটি কমিটির সভাপতি-সাধারন সম্পাদক মারা গেলেও সেখানে কাউকে স্থলাবিষিক্ত করা হয়নি। উত্তর জেলায় ২০০০ সালে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কমিটি গঠিত হয়। কমিটিতে সভাপতি খলিলুর রহমান চৌধুরী ও সাধারন সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শাসসুল আলম।

২০১২ সালের ২২ ডিসেম্বর নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও এখনো পুর্নাঙ্গ কমিটি করা হয়নি। রাউজান উপজেলায় প্রয়াত সফিকুল ইসলাম চৌধুরী বেবীকে সভাপতি ও মুসলিম উদ্দিন খানকে সাধারন সম্পাদক করে ১৯৯৬ সালে কমিটি করা হয়। দীর্ঘ ২২ বছর ধরে এ কমিটি বহাল রয়েছে। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কামাল উদ্দিন আহমেদ। সীতাকুন্ডে আবুল কাশেম মাস্টারকে সভাপতি ও আব্দুল্লাহ আল বাকের ভুঁইয়াকে সাধারন সম্পাদক করে ২০১২ সালে কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির সভাপতি আবুল কাশেম মাষ্টার মারা যাওয়ায় ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন মো: ইসহাক।

মিরসরাইয়ে ২০১৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর শেখ আতাউর রহমানকে সভাপতি ও জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীকে সাধারন সম্পাদক করে সর্বশেষ কমিটি গঠন হয়। ২০১১ সালের ৩০ জানুয়ারী উপকুলীয় সন্দ্বীপ উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কমিটিতে মাষ্টার শাহজাহান বিএ’কে সভাপতি ও মোহাম্মদ আলী খসরুকে সাধারন সম্পাদক করা হয়। হাটহাজারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর।

এ ছাড়া দক্ষিণ জেলার বোয়ালখালীতে ২০১৭ সালের মে মাসে উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠিত হয়। বাঁশখালীতে ১৯৯৬ সালে মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীকে সভাপতি ও খোরশেদ আলমকে সাধারন সম্পাদক করে কমিটি গঠন করা হয়েছিল। পরে সে কমিটি থেকে খোরশেদ আলমকে বাদ দিয়ে অধ্যাপক আব্দুল গফুরকে সাধারন সম্পাদক করা হলেও দীর্ঘ ২৩ বছরেও নতুন কমিটি গঠিত হয়নি। ইতিমধ্যে বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের অনেক দায়িত্বশীল নেতা মৃত্যুবরন করেছেন।

২০১৩ সালের ৩ জুলাই খোরশেদ আলমকে সভাপতি ও সালাউদ্দিন হিরুকে সাধারন সম্পাদক করে লোহাগাড়া আওয়ামী লীগের কমিটি গঠিত হয়। ২০১৩ সালের ৭ জুলাই সম্মেলনের মাধ্যমে সাতকানিয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি হন আব্দুল মোতালেব ও সাধারন সম্পাদক হন কুতুব উদ্দিন চৌধুরী। ২০১৩ সালের ৭ জুলাই সম্মেলনে চন্দনাইশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে জাহাঙ্গীর চৌধুরী সভাপতি ও আবু আহমদ চৌধুরী সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন। এসব কমিটি মেয়াদোর্ত্তীর্ন হলেও পটিয়া, আনোয়ারা ও কর্নফুলী উপজেলায় নিয়মিত কমিটি আছে।

আওয়ামী লীগের দলীয় সুত্র মতে জানা যায়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কর্মকান্ড জোরদার ও তৃনমুলের নেতাকর্মীদের মুল্যায়নে সারাদেশের মতো চট্টগ্রামের জন্যও বিভাগীয় সাংগঠনিক টিম গঠন করা হচ্ছে। দলের উপদেষ্ঠামন্ডলী, প্রেসিডিয়াম ও কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের সমন্বয়ে এই বিভাগীয় সাংগঠনিক কমিটি গঠন করা হচ্ছে।

কমিটি গঠনের পর কেন্দ্রীয় টিমের সদস্য চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা সহ প্রত্যেক উপজেলায় সম্মেলনের মাধ্যমে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মুল্যায়ন করা হবে। এর মধ্য দিয়ে তৃনমুল পর্যায়ে দলের সাংগঠনিক কর্মকান্ড জোরদার হবে। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সুত্র মতে, চলতি বছরেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২১মত জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.