চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক নিয়োগে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ

0

সিটি নিউজ ডেস্ক : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষক (প্রভাষক) নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি,অনিয়মও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলন করেছে দর্শন বিভাগের শিক্ষক (প্রভাষক) নিয়োগ প্রার্থী মাহবুবুর রহমান।

সম্প্রতি সোমবার ৭ মে প্রেসক্লাবে লিখিত বক্তব্যে এসব অভিযোগ করেন দর্শন বিভাগের শিক্ষক (প্রভাষক) নিয়োগ প্রার্থী মাহবুবুর রহমান।

মাহবুবুর রহমান বলেন, দীর্ঘ নয় (৯) বছর পর ১২/০১/২০১৭ইং তারিখে দর্শন বিভাগের প্রভাষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। উক্ত বিজ্ঞপিত শিক্ষক (প্রভাষক) নিয়োগের ব্যাপারে নির্বাচনী বোর্ড না বসিয়ে প্রায় ১ বছর ৮মাস পর ১০/০৯/২০১৮ইং তারিখে পুনরায় দর্শন বিভাগের শিক্ষক (প্রভাষক) পদের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। আমি একজন প্রার্থী হিসেবে উভয় বিজ্ঞাপনে প্রভাষক পদের নিয়োগের জন্য দরখাস্ত দাখিল করেছিলাম।

উভয় বিজ্ঞাপন আলাদা আলাদা ভাবে প্রকাশ হলেও উপাচার্য়ের মেয়াদ শেষ হবার আগ মুর্হূতে তাড়াহুড়া করে দর্শন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে নির্বাচনী বোর্ডে প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার করার তারিখ ঘোষণা করেছিল। আমরা দুইবার দরখাস্ত দাখিল করলেও একবার সাক্ষাৎকার নেওয়ার সিন্ধান্তে আমাদের অধিকার থেকে আমরা বঞ্চিত হই। কারণ একটি সিলেকশন বোর্ডে সুযোগ না হলেও পরবর্তীতে সুযোগ হতো।

বিগত ১৭/০৪/২০১৯ইং তারিখে ভাইস চ্যান্সলর মহোদয়ের অফিসকক্ষে দর্শন বিভাগের শিক্ষক (প্রভাষক) নিয়োগের ব্যাপারে নির্বাচনী বোর্ডে একজন বিতর্কিত যিনি হাইকোট কর্তৃক নিষিদ্ধব্যক্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক জসীম উদ্দিন, জগন্নার্থ বিশ্ববিদ্যালয় ড. লৎফর রহমান, বিভাগীয় সভাপতি ও ভিসি স্যার সহ চার জন সদস্য বিশিষ্ট নিবার্চনী বোর্ড বসে। কিন্তু নির্বাচনী বোর্ডের পূর্বপরিকল্পিত হিসেবে নির্ধারিত প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়ার নিমিত্তে হঠাৎ লিখিত পরীক্ষা সিন্ধান্ত নেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এই যাবৎ কোন বিভাগে লিখিত পরীক্ষা না হওয়ার দরুন কিংবা আমাদেরকে না জানানোর কারণে আমরা লিখিত পরীক্ষা সর্ম্পকে অবগত ছিলাম না। তাছাড়া লিখিত পরীক্ষার খাতার উপর প্রার্থীর নাম ও রোল নং লেখা ছিল বিধায় প্রার্থীর গোপনীয়তা রক্ষা হইনি। যার পরিপ্রেক্ষিতে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনস্প্রীতি বহি:প্রকাশ ঘটে ফলে অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীদের নিয়োগ প্রদান করা হয়। যাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বিশেষ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রার্থী তাদেরকে আমরা ছাত্রজীবনের শিবির বা ছাত্রী সংস্থা ও কোটা বিরোধী আন্দোলনকারী হিসেবে ছিনি।

বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে শক্তি তথা জননেত্রী, দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ পরিচালনার অংশ হিসেবে মাননীয় উপাচার্য মহোদয়কে দলীয় ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদান করা হয়। ভিসি মহোদয়ের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের আনুগত্য থাকলে তিনি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের প্রগতিশীল মেধাবী প্রার্থীদের অথবা সর্বোচ্চ মেধার ভিত্তিতে প্রার্থীকে নিয়োগ দিতেন। কিন্তু উপাচার্য মহোদয়ের কাছে দলীয় আনুগত্য কিংবা মেধার মূল্যায়ন গুরুত্ব নয় বরং অর্থ ও স্বজনপ্রীতি তার কাছে মূখ্য। যার প্রমান বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে নমুনা উপস্থাপন করা যায়।

আপনার আমার সকলের একটি মনস্কামনা হলো সামনে দিকে চলার পথটি যেন মসৃন হয়। আমি অন্যায় কিছু চাইনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন বিষয়ে সর্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জন করার পর শত বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে আমি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের “সন্ত্রাসবাদঃ বিশ্বশান্তির নৈতিকঅন্তরায়” অভিসন্দর্ভের উপর অত্যন্ত সফলতায় সাথে এম.ফিল ডিগ্রী অর্জন করি। যার ফলে নিজ যোগ্যতা বলে নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হতে চেয়েছিলাম।

আজ আমাকে আপনাদের সামনে এসে দাঁড়াতে হলো। আমি আপনাদের মাধ্যমে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মানবতাবাদের জননী,দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন জানাই, বিগত ১৭/০৪/২০১৯ইং তারিখে অনুষ্ঠিত দর্শন বিভাগের নিয়োগ বোর্ডের মাধ্যমে নিয়োগকৃতদের মধ্যে থেকে জামাত শিবির ও কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীদের বাদ দিয়ে আর্থিক লেনদেন বিষয়ে তদন্ত পূর্বক যোগদান হতে সবাইকে বিরত রেখে নতুনভাবে পুনরায় উভয় বিজ্ঞাপনে আলদা ভাবে সাক্ষাৎকার নিয়ে নিয়মানুযায়ী শিক্ষক নিয়োগের দাবী জানাচ্ছি।

দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারেই আমার জন্ম। মা-বাবার লালিত স্বপ্নের বাস্তবিক রুপ দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে আমার বিরামহীন পথ চলা। ২০০১-২০০২ সেশনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগে ভর্তি হয়েছিলাম। ২০০৭ সালে স্নাতক সম্মান ও ২০০৮ সালে স্নাতকত্তোর ডিগ্রী এবং ২০১৬ সালে “সন্ত্রাসবাদঃ বিশ্বশান্তির নৈতিক অন্তরায়” অভিসন্দর্ভের উপর এম.ফিল ডিগ্রী অর্জন করি। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী গবেষণা ও উচ্চ শিক্ষা সহায়তা তহবিলের আওতায় পি-এইচ.ডি ডিগ্রীর লক্ষ্যে এম.ফিল কোর্সের বৃত্তি প্রাপ্ত হই।

২০০১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীনতা বিরোধী জামায়ত শিবিরের মিনি ক্যান্টেন্টম্যান্ট খ্যাত ক্যাম্পাসে যেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বাধীনভাবে চলাফেরা করা দুস্কর ছিল সেখানে আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা পতাকাবাহী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত ছিলাম। আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ সম্পাদক কাজী-এরশাদ কমিটির (২০০৪-২০১০) এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাবেক সদস্য রিপন রোটন কমিটির (২০০৬-২০১১)। ছাত্ররাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থেকেও আশানুরুপ ফলাফল নিয়ে উর্ত্তীণ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছি। আমার স্বপ্ন ছিল যোগ্যতা অভিজ্ঞতার আলোকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে আমাদের দর্শন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ হবে। কিন্তু এখানে দেখলাম স্বচ্ছতার নামে মাননীয় উপাচার্যসহ সংশ্লিষ্ঠদের অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা।

উক্ত সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন,চবি নৃবিজ্ঞান বিভাগ সহকারী অধ্যাপক মোক্তার আহম্মদ চৌধুরী,সাবেক সহ-সম্পাদক ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছাত্রলীগ চবি এস.এম আরিফুল ইসলামসহ অন্যরা।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.