উত্তপ্ত জাতীয় সংসদ

0

সিটি নিউজ ডেস্ক :  বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক এবং সংসদের বৈধতা নিয়ে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার প্রশ্ন করায় আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠে সংসদ অধিবেশন।

রোববার জাতীয় সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনার সময় এমন উত্তপ্ত পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

নির্ধারিত ১০ মিনিটের বক্তৃতায় তিন দফায় বাধার সম্মুখিন হন রুমিন ফারহানা। তিনি বলেন, এই সংসদের কেউ বলতে পারবেন জনগণের প্রত্যেক্ষ ভোটে নির্বাচিত? কেউ বলতে পারবেন না। এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে সরকারি দলের সদস্যরা হই হই করতে থাকেন।

এক পর্যায়ে ডেপুটি স্পিকার তার বক্তব্য থামিয়ে বলেন, আপনি বাজেটের বাইরে এমন কোনো কথা বলবেন না যাতে সংসদ উত্তপ্ত হয়।

ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, এই সংসদে আসার আগে সংসদ নেতা বলেছিলেন আমাদের কথা বলতে দেবেন। কিন্তু আমার প্রথম বক্তৃতার দুই মিনিটের এক মিনিটও শান্তিমতো কথা বলতে পারিনি। একই ঘটনা আজকেও।

কথা শুরু করার ৩৬ সেকেন্ডের মাথায় তার বক্তৃতা থামিয়ে ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, এমন কথা বলবেন না যাতে বিরোধী পক্ষ উত্তেজিত হয়।

পুনরায় বক্তব্য শুরু করে বলেন, আমরা কথা বলতে পারছি না। কোনো গণতন্ত্রের কথা বলছি। আমি আমার দলের কথা বলব, তারা তাদের দলের কথা বলবে।

প্রশ্ন রেখে বলেন, আমি দাঁড়াবার সঙ্গে সঙ্গে পুরো সংসদ যদি উত্তেজিত হয়ে যায়, তাহলে কীভাবে কথা বলব? পুরো ১০ মিনিটের বক্তৃতায় কয়েক সেকেন্ড শুধু সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনা করেন।

তার সেই আলোচনায় বলেন, ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে এ পর্যন্ত বাজেট বাস্তবায়ন হয়েছে ৭৬ শতাংশ। সরকারের সক্ষমতা দিন দিন কমছে।

প্রস্তাবিত বাজেটকে গতানুগতিক আখ্যা দিয়ে রুমিন ফারহানা বলেন, বাজেট সরকারের চরিত্র সম্পর্কে ধারণা দেয়। দেশের সব থেকে দরিদ্র প্রবণ ১০টি জেলায় মোট উন্নয়ন বাজেটের শূন্য দশমিক ৯৮ শতাংশ বরাদ্দ হলেও গোপালগঞ্জ জেলায় এই দশ জেলার মোট বরাদ্দের ৫ গুণের বেশি বরাদ্দ হয়। কেন প্রতিদিন বৈষম্য বাড়ছে তার জবাব পাওয়া যাবে এই বাজেট পড়লে।

রুমিন বলেন, সরকার শিক্ষা ক্ষেত্রে বাজেট জিডিপির ৩ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ দাবি করলেও এটি একেবারেই ভুল তথ্য। শিক্ষার সঙ্গে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বাজেট ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ যুক্ত করা হয়েছে। বিজ্ঞান প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ১৪ হাজার কোটি টাকা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বরাদ্দ। সঠিক হিসেব দেখা যায় শিক্ষায় বরাদ্দ জিডিপির মাত্র দুই দশমিক এক শতাংশ। শিক্ষার মানোন্নয়নের কোনো পদক্ষেপ এই বাজেটে নেই।

রুমিন দাবি করেন, বাজেটে কৃষকদের প্রতি ন্যূনতম সংবেদনশীলতা দেখানো হয়নি। কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে কী পদক্ষেপ নেবে তার কোন দিক নির্দেশনাও নেই এই বাজেটে। বেসরকারি বিনিয়োগ ২২ শতাংশে স্থবির হয়ে আছে। তেল, চিনি, গুঁড়া দুধের মতো অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করে বসিয়ে সাধারণ মানুষের জীবন-যাপনকে আরও কষ্ট সাধ্য করা হয়েছে।

রুমিন বলেন, দুর্নীতি বাংলাদেশে মহামারি রূপ নিয়েছে। সড়ক, রেলপথ নির্মাণে অন্য দেশের থেকে কয়েকগুণ বেশি ব্যয় হচ্ছে।

ব্যাংক খাতের সমালোচনা করে রুমিন ফারহানা বলেন, এই সরকার লুটেরা তোষণকারী সরকার। ব্যাংকের ঋণ খেলাপিতে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে আছে। ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ১২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। সরকারবান্ধব অর্থনীতিবিদরাও সরকারকে ঋণখেলাপি বান্ধব সরকার বলে আখ্যায়িত করছেন। এটা লুটেরা তোষণকারী সরকার, ঋণ খেলাপি বান্ধব সরকার। অবলোপন ছাড়াই বর্তমানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ব্যাংক কোম্পানি আইন পরিবর্তন করে ব্যাংগুলোকে এক একটি পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হলে ব্যাংকের হাতে আর অর্থ থাকবে না।

রুমিন বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসা মানেই শেয়ার বাজার ধ্বংস হয়ে যাওয়া। ২০১০-১১ সালে শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারিতে লক্ষ লক্ষ মধ্যবিত্তকে পথে বসানো হয়েছে। শেয়ার বাজারের ক্ষেত্রেও কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব বাজেটে নেই।

নির্বাচন কমিশনে ব্যয় বাড়ানোয় সমালোচনা করে ব্যারিস্টার ফারহানা বলেন, নির্বাচন কমিশনের ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। কি নির্বাচন তারা করেছে?

‘আমার একটা কথায় পুরো সংসদ উত্তপ্ত। কলামের পর কলাম লেখা হয়। এই সংসদে যারা আছেন, তারা আল্লাহকে হাজির নাজির করে বলুক তারা জনগণের প্রত্যেক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন? তারা নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করুক সবাই উত্তর পেয়ে যাবেন।’

বক্তৃতার ৪ মিনিট ৫৬ সেকেন্ডে আবারও বাঁধা প্রদান করা হয়। এভাবেই তার ১০ মিনিটের বক্তৃতা শেষ করেন।

পরে ডেপুটি স্পিকার তাকে উদ্দেশ্যে বলেন, আপনি বাজেটের বাইরে ও সংসদীয় ভাষার বাইরে যে কথাগুলো বলেছেন তার সবকথা সংসদীয় প্রসিডিউর থেকে এক্সপাঞ্জ করা হল।

এই কথা বলার পর বিএনপির সবাই অধিবেশন থেকে বেরিয়ে যান। পরে অবশ্য আবার অধিবেশনে ফেরেন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.