ভারী বর্ষণে চকরিয়ার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

0

বশির আল মামুন,চকরিয়া : টানা দুই দিন ধরে ভারী বর্ষণে ও মাতামুহুরী নদী দিয়ে প্রবাহিত বানের পানিতে চকরিয়ার একটি পৌরসভা সহ ১৮ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে নেমেছে উজান থেকে পাহাড়ি ঢলের পানি। গতকাল বিকাল ৫টার দিকে নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে প্রবাহিত হচ্ছিল। উপজেলার বেশির ভাগ নিচু এলাকা হাঁটু সমান পানিতে তলিয়ে গেছে। শনিবার রাত থেকে বর্ষণ অব্যাহত থাকায় মাতামুহুরী নদীতে বেড়ে চলছে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি।

এ কারণে গতকাল বিকাল ৫টার কিছু আগে নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে প্রবাহিত হচ্ছিল। ঢলের পানি লোকাকলয়ে প্রবেশের কারণে উপজেলার হাজারো পরিবার গতকাল দুপুর থেকে কার্যত পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন বলে দাবি করেছেন স্থানীয় জন প্রতিনিধিরা। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে যে কোন মুহূর্তে উপজেলার রামপুর এলাকার চিংড়িজোন পানিতে তলিয়ে গিয়ে হাজার কোটি টাকার মাছ বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় চিংড়ি প্রকল্প মালিক ও চাষীরা।

উপজেলার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউপি চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম জানিয়েছেন, শনিবার রাত থেকে শুরু ভারী বর্ষণ গতকাল সোমবার পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। এ অবস্থার কারনে মাতামুহুরী নদীতে বেড়ে চলছে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি। ইতোমধ্যে নদীর পানি ঢুকে তাঁর ইউনিয়নের অন্তত শতাধিক পরিবারের বসতঘর প্লাবিত হয়ে পড়েছে। গতকাল দুপুর থেকে দুর্গত এসব পরিবারে পানি ঢুকে পড়ার কারণে রান্নাঘরে খাবার তৈরি বন্ধ হয়ে গেছে।

বরইতলী ইউপি চেয়ারম্যান জালাল আহমদ সিকদার বলেন, ভারী বৃষ্টিপাতে মাতামুহুরী নদীতে গতকাল সকাল থেকে পানি প্রবাহ বেড়েছে। এ অবস্থার কারণে নদীর শাখা খাল হয়ে তার ইউনিয়নের গোবিন্দপুর, ডেইঙ্গাকাটা, রসুলাবাদসহ একাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে গেছে। এলাকার দুর্গত জনসাধারণ বর্তমানে পানিবন্দি হয়ে পড়ার কারণে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।

কোনাখালী ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার ও বিএমচর ইউপি চেয়ারম্যান এসএম জাহাংগীর আলম বলেন, ভারী বর্ষণের ফলে মাতামুহুরী নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় নদীর তীরবর্তী নীচু এলাকার লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে পানি। এ কারণে দুই ইউনিয়নের হাজার পরিবার গতকাল থেকে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

চিরিঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান জসীম উদ্দিন বলেন, দুইদিনের ভারী বৃষ্টিপাতে মাতামুহুরী নদীতে পাহাড়ি ঢলের প্রবাহ বেড়েছে। এ অবস্থায় উপজেলার চিংড়িজোনের শত শত চিংড়ি প্রকল্প পানিতে তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। তিনি বলেন, বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হবে। এতে চিংড়ি প্রকল্প তলিয়ে গেলে মাছ ভেসে গিয়ে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবে চিংড়িজোনের হাজারো চাষী।

কৈয়ারবিল ইউপি চেয়ারম্যান মক্কী ইকবাল বলেন লাগাতার বর্ষণ ও মাতামহুরী নদী দিয়ে প্রবাহীত বানের পানিতে কৈয়ারবিলে অধিকাংশ নিম্নাঞ্চল এখন হাটু পরিমান পানির নীচে। বিশেষ করে ডিককুল, ভরণ্যারচর, ইসলাম নগর, বাণিয়ার কুম, খোজাকালী এলাকাতে মানুষের বাড়ি ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামীন সড়ক এখন পানির নীচে। পানি বন্দী হয়ে পড়েছে শতাধিক পরিবার। তাদেও রান্না বান্নায় মারাত্বক ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে।

চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী বলেন, গত দুইদিন ধরে চকরিয়ায় ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এ কারণে মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমেছে পাহাড়ি ঢলের পানি। ফলে নদীর পানি আর বৃষ্টির পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের একাধিক নিম্নাঞ্চল। মেয়র বলেন, গতকাল দুপুর থেকে পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের এক নম্বর বাঁধ এলাকা অতিক্রম করে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে নদীর পানি। স্থানীয় মজিদিয়া মাদরাসাসহ আশপাশ এলাকার অন্তত শতাধিক পরিবারের বসতঘরে পানি ঢুকে পড়ার কারণে লোকজন দুর্ভোগে পড়েছে। তাছাড়া ২নং ওয়ার্ড়ের হালকাকারা, জেলে পাড়া , মৌলভীরচর, ৫ নং ওর্য়াডের করাইয়াঘোনা এলাকায় লোকালয়ে বানের পানি ঢুকে পড়েছে। এছাড়া ফাঁসিয়াখালী ইউনয়নের হাজিয়ান, হারবাং ইউনয়নের পহরচাঁন্দা, বৃন্দাবনখালী, উত্তর হারবাং এলাকায় বানের পানি ঢুকে পড়েছে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.