শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে ভারতের বিদায়
স্পোর্টস ডেস্কঃ ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপ আজ তাসের ঘরের মতো ঢলে পড়েছে। যার পরিনতি সেমিফাইনালে হার। সাথে ধূলোয় মিশে গেছে কোহলিদের দম্ভ। ভারতের দলীয় ৯২ রানে ছয় উইকেট খোয়ায়। এক রানের হ্যাট্টিকও করেছে ভারতীয় বাহিনী। ভারতীয় শিবিরে হতাশার কালো মেঘ নেমে আসে তখনই যথন মাত্র ৯২ রানে হারায় ৬ উইকেট। এমন পরিস্থিতিতে ধোনি ও জাদেজা জুটি বেঁধে ভারতকে আশার আলো দেখাতে থাকে। ধোনি ধীরে খেললেও জাদেজা ঝড়ো ব্যাট করতে থাকেন। এই জুটিই আশা দেখাচ্ছিল ভারতকে। তবে, শেষটা করে আসতে পারেননি তারা। ফলে ১৮ রানে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে হলো ভারতকে। আর শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে ভারতকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বার ফাইনালে উঠলো নিউজিল্যান্ড। আগামী ১১ জুলাই অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড ম্যাচের জয়ী দলের বিপক্ষে লর্ডসের ফাইনালে নামবে কিউইরা।
প্রথমবারের মত রিজার্ভ ডে’তে গড়ালো ক্রিকেট বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল। টস জিতে ব্যাটিং করে আগের দিন ৪৬.১ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে কিউইরা তোলে ২১১ রান। পরে আর বল মাঠে না গড়ালে ম্যাচের বাকিটুকু গড়ায় রিজার্ভ ডে’তে। ৫০ ওভারে নিউজিল্যান্ড ৮ উইকেট হারিয়ে তোলে ২৩৯ রান। পরে ২৪০ রানেট টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ৪৯.৩ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ভারত তোলে ২২১ রান।
প্রথম দিন ওল্ড ট্রাফোর্ডে ব্যাটিংয়ে নেমে ১ রানে বিদায় নেন কিউই ওপেনার মার্টিন গাপটিল। হেনরি নিকোলস ৫১ বলে করেন ২৮ রান। তিন নম্বরে নেমে উইলিয়ামসন এবং রস টেইলর জুটি গড়েন। ৯৫ বলে ছয়টি বাউন্ডারিতে ৬৭ রানের ইনিংস খেলে বিদায় নেন উইলিয়ামসন। জিমি নিশাম ১২, কলিন ডি গ্রান্ডহোম ১৬ রান করে বিদায় নেন। উইলিয়ামসন-নিকোলস জুটিতে আসে ৬৮ রান। আর উইলিয়ামসন-টেইলর জুটিতে আসে ৬৫ রান। টেইলর-নিশাম জুটিতে আসে ২৮ রান। টেইলর-গ্রান্ডহোম জুটিতে স্কোরবোর্ডে যোগ হয় ৩৮ রান।
৬৭ রান করে অপরাজিত থেকে আজ আবারো ব্যাটিংয়ে নামেন টেইলর। ৩ রানে অপরাজিত থেকে টেইলরকে সঙ্গ দিতে নামেন টম ল্যাথাম। ৪৮তম ওভারের শেষ বলে টেইলর রানআউট হওয়ার আগে করেন ৭৪ রান। তার ৯০ বলের ইনিংসে ছিল তিনটি চার আর একটি ছক্কার মার। ৪৯তম ওভারের প্রথম বলে বিদায়ের আগে ল্যাথাম করেন ১১ বলে ১০ রান। একই ওভারের শেষ বলে ফেরেন ১ রান করা ম্যাট হেনরি। মিচেল স্যান্টনার ৯ আর ট্রেন্ট বোল্ট ৩ রানে অপরাজিত থাকেন।
ভারতের হার্দিক পান্ডিয়া ১০ ওভারে ৫৫ রান দিয়ে ১টি, রবীন্দ্র জাদেজা ১০ ওভারে ৩৪ রান দিয়ে ১টি আর যুভেন্দ্র চাহাল ১০ ওভারে ৬৩ রান দিয়ে ১টি উইকেট তুলে নেন। ভুবনেশ্বর কুমার ১০ ওভারে ৪৩ রান দিয়ে ৩টি উইকেট পান। আর জাসপ্রিত বুমরাহ ১০ ওভারে ৩৯ রান দিয়ে তুলে নেন ১টি উইকেট।
২৪০ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ধরাশয়ী শক্তিশালী ভারত। ৫ রানেই তিন উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে কোহলি’র দল। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই হেনরির শিকার হন রোহিত শর্মা। দলীয় ৪ রানেই সাজঘরে ফিরেছেন রোহিত। এরপর স্কোরকার্ডে ১ রান যোগ হতেই বোল্টের হানায় ফিরেছেন টিম ইন্ডিয়ার অধিনায়ক ভিরাট কোহলি। স্কোরকার্ডে কোন রান যোগ না হতেই সেই হেনরির তোপেই ফিরলেন ওপেনার লোকেশ রাহুল। দলীয় ২৪ রানের মাথায় ফেরেন ২৫ বলে ৬ রান করা দীনেশ কার্তিক। অথছ গত ম্যাচে রোহিত ও রাহুল দু’জনই সেঞ্চুরী হাকান।
এরপর ৪৭ রানের জুটি গড়েন রিশব পান্ত-হার্দিক পান্ডিয়া। দলীয় ৭১ রানের মাথায় বিদায় নেন রিশব পান্ত। ৫৬ বলে চারটি চারের সাহায্যে পান্ত করেন ৩২ রান।
দলীয় ৯২ রানের মাথায় বিদায় নেন হার্দিক পান্ডিয়া (৩২)। মিচেল স্যান্টনারের বলে দলপতি উইলিয়ামসনের তালুবন্দি হওয়ার আগে পান্ডিয়া ৬২ বলে দুই বাউন্ডারিতে করেন ৩২ রান।
জাদেজা যখন উইকেটে আসলেন, ৯২ রানেই ভারতের নেই ছয় উইকেট। নিউজিল্যান্ডের ২৩৯ রান টপকে ভারতের ফাইনালে যাওয়ার আশা অনেকখানিই ফিকে হয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকেই দারুণ এক ইনিংস খেলছেন রবীন্দ্র জাদেজা। এমন চাপের মুখেও ৩৯ বলে তুলে নিয়েছেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১১তম অর্ধশতক। আর জাদেজাকে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। দুজন মিলে গড়েছেন ১১৬ রান। দলীয় ৪৮তম ওভারে বিদায় নেন ৫৯ বলে চারটি চার আর চারটি ছক্কা হাঁকিয়ে ৭৭ রান করা জাদেজা।
৭২ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ৫০ রান করে ৪৯তম ওভারে সাজঘরে ফেরেন ধোনি। একই ওভারে বোল্ড হন ভুবনেশ্বর কুমার। শেষ ওভারে দরকার ছিল ২৩ রান। তৃতীয় বলে শেষ উইকেট হিসেবে আউট হন ৫ রান করা যুভেন্দ্র চাহাল।
কিউই স্পিনার মিচেল স্যান্টনার ১০ ওভারে ৩৪ রান দিয়ে নিয়েছেন দুটি উইকেট। ম্যাট হেনরি ১০ ওভারে ৩৭ রান দিয়ে নেন তিনটি উইকেট। ট্রেন্ট বোল্ট ১০ ওভারে ৪২ রান দিয়ে নেন দুটি উইকেট। লুকি ফার্গুসন ১০ ওভারে ৪৩ রানে তুলে নেন একটি উইকেট। জিমি নিশাম ৭.৩ ওভারে ৪৯ রান দিয়ে পান একটি উইকেট। কলিন ডি গ্রান্ডহোম ২ ওভারে ১৩ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকেন।