জনস্বার্থ বিবেচনায় ‘চট্টগ্রাম উন্নয়নের রোডম্যাপ চাই

0

সিটি নিউজঃ *কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ের শিল্প সম্ভাবনা অর্জন, * চট্টগ্রামে কয়েকটি ব্যাংকের হেডকোয়ার্টার স্থাপন * কেবিনেট মিটিং করা * আকাশপথ আরো উন্মুক্তকরণ *উন্নয়ন ও সেবা খাতে সমন্বয় *জনপ্রবৃদ্ধি ও বৈদেশিক বাণিজ্যের চাহিদা অনুযায়ী পরিকল্পনা * চট্টগ্রাম বন্দরের সর্বোচ্চ ব্যবহার  *মেট্রোরেল, সী বাস চালু *বন্দরের ট্রাক লরির জন্য টার্মিনাল-ডিপো নির্মাণ *জলজট-যানজট নিরসন

উপরোক্ত দাবীগুলো জনস্বার্থের অগ্রাধিকার বিবেচনার আলোকেই ‘চট্টগ্রাম উন্নয়নের রোডম্যাপ’ দাবি করা হয়েছে চট্টগ্রামের দুই উন্নয়ন ও নাগরিক সংগঠনের মতবিনিময় সভায়।  চট্টগ্রাম উন্নয়ন ফোরাম ও চট্টগ্রাম নাগরিক উদ্যোগের দুই প্রধান মঙ্গলবার মতবিনিময় সভায় এমন দাবিসহ উন্নয়ন ও সেবা খাতে সমন্বয়ের জোরদাবি জানান।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন ফোরামের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন এবং চট্টগ্রাম নাগরিক উদ্যোগের আহ্বায়ক পেশাজীবী নেতা রিয়াজ হায়দার চৌধুরীর এই মতবিনিময় সভা থেকে উন্নয়ন ও সেবা খাতে সরকারের বিশাল কর্মউদ্যোগের টেকসই ও দুর্নীতিমুক্ত বাস্তবায়নে নাগরিক পর্যবেক্ষণ চোখ অধিকতর জোরদার করার তাগিদও দেয়া হয়।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন ফোরামের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন বলেন, চট্টগ্রামের সমস্যাকে ‘আঞ্চলিক সমস্যা’ হিসেবে দেখা উচিত নয়।  চট্টগ্রামের মাধ্যমেই দেশের মোট রফতানির ৮০ এবং আমদানির প্রায় ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়। ফলে চট্টগ্রামের সংকট সমাধানে জাতীর সম্ভাবনার পথই প্রসারিত হয়। চট্টগ্রামের উন্নয়নের মানেই জাতীয় উন্নয়ন। এই উন্নয়ন কোন আঞ্চলিক নয়, জাতীয় দাবি।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম নাগরিক উদ্যোগের আহ্বায়ক, পেশাজীবী নেতা রিয়াজ হায়দার চৌধুরী  বলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতা ও উদারনৈতিক দৃষ্টির সুযোগে কেউ যদি উন্নয়নকে ভবিষ্যত ‘দুর্যোগের কারণ’ হিসেবে তৈরি করেন, তবে চট্টগ্রামবাসী তারজন্য ‘ঘৃণাস্তম্ভ’ তৈরি করবে। কালের যাত্রায় এর মাশুল গুণতে হবে।

তিনি উন্নয়নে সাম্যতা প্রতিষ্ঠায় চট্টগ্রাম থেকে আকাশপথে বৈশ্বিক যোগাযোগের পথ আরো উন্মুক্ত করা, কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ের শিল্প সম্ভাবনা অর্জন, কয়েকটি ব্যাংকের হেডকোয়ার্টার চট্টগ্রামে স্থাপন, বছরে অন্তত একটি কেবিনেট মিটিং চট্টগ্রামে আয়োজনসহ বেশকিছু দাবি তুলে ধরেন ।

ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন বলেন, বন্দর শহরে জনপ্রবৃদ্ধি ও বৈদেশিক বাণিজ্যের চাহিদা অনুযায়ী উন্নয়ন পরিকল্পনা হওয়া জরুরি। উত্তর-দক্ষিণ চট্টগ্রামে মিরসরাই ও আনোয়ারায় স্পেশাল ইকনোমিক জোনে দেশ-বিদেশের বিনিয়োগকারীরা শিল্প স্থাপনে সক্ষম হলে প্রায় দেড় কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

তিনি আরো বলেন, উন্নয়নে শুধু প্রবৃদ্ধিই নয়, পরিবর্তনও সাধন হয়। দেশে পরিবর্তনের যে ছোঁয়া লেগেছে তা স্হায়ী করতে অপরিণামদর্শী কোন সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না। উন্নয়নে জনস্বার্থের বিবেচনায় প্রকল্পের অগ্রাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
রিয়াজ হায়দার চৌধুরী বলেন,

গণপরিবহনের জন্য মেট্রোরেল, সী বাস সার্ভিস চালুসহ যানজট নিরসনে বন্দরের নিত্যকার ট্রাক লরির জন্য পৃথক টার্মিনাল-ডিপো নির্মাণ, ওয়াসার জন্য শতবর্ষী প্রকল্প গ্রহণ, চসিক-চউক প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়,

চট্টগ্রাম বন্দরের বে-টার্মিনাল ফার্স্ট ট্রেক প্রকল্প হিসেবে বাস্তবায়ন, বন্দরের প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ এবং বন্দরে গমনাগমনে সময়ের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত গেইট চালু এবং পর্যটন, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া বিনোদনের যুগান্তকারী পরিকল্পনা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি ।
সভায় দুই সংগঠনের পক্ষ থেকেই ঐক্যমত পোষণ করে বলা হয়, “দুঃখজনক হলেও সত্য , একটি মহল প্রকৃতিসৃষ্ট চট্টগ্রাম বন্দরের ‘বিকল্প’ হিসেবে মংলা বা পায়রা বন্দরকে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে।

সময়ের প্রয়োজনে অন্য বন্দর তৈরির বিরোধী নই আমরা। কিন্তু ঐতিহ্যের চট্টগ্রাম বন্দরের সর্বোচ্চ ব্যবহার ও সুফল আদায়ে অগ্রাধিকার দেয়াই জনস্বার্থে জরুরি । মংলা কিংবা পায়রায় নয়, বরং সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ ভবিষ্যত বাংলাদেশের সম্ভাবনাকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেবে।

মতবিনিময় সভা থেকে চট্টগ্রাম শহরের বাইরেও পর্যাপ্ত সরবরাহ সহ গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট সমাধান, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করার জন্য চট্টগ্রাম থেকে বিমানের ফ্লাইট চালু,পণ্য ও বিনিয়োগের দ্বার প্রসারে চট্টগ্রামকে অগ্রাধিকার,

চট্টগ্রামের মানুষের উন্নয়ন ভাবনা,অনুভূতি, চাহিদা কেন্দ্রীয় পর্যায়ের চিন্তা-চেতনায় প্রভাব বিস্তারে গণপ্রতিনিধিদের আরো নি:শঙ্ক ভুমিকা রাখার আহ্বান জানানো হয় ।

চট্টগ্রামের শিপব্রেকিং, শিপবিল্ডিং,আরএমজি,শিল্প বাণিজ্য, বন্দর,পর্যটন এবং কৃষি, মৎস্যসহ সমুদ্র সম্পদ খাতের বিপুল সম্ভাবনার সর্বোচ্চ অর্জনে চট্টগ্রামের বাণিজ্যিক সামুদ্রিক অর্থনীতির সুফল ঘরে তোলার তাগাদাও দেয়া হয়েছে ।

সভায় এই দুই উন্নয়ন ও নাগরিক সংগঠক ঐক্যমত পোষন করে এও বলেন, দেশের অর্থনৈতিক গতি প্রবৃদ্ধির প্রাণকেন্দ্র হিসেবে চট্টগ্রামের জলজট ও যানজট নিরসনে সুফল পাবে সারাদেশ। চট্টগ্রাম থেকে অর্জিত দেশের সবচেয়ে বেশি আমদানি শুল্কের একটি অংশ চট্টগ্রামের উন্নয়নে ব্যয় করা অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত। এর সুফলও পুরো দেশবাসীই ভোগ করবে’ বলেও আশা প্রকাশ করা হয় সভায়। মতবিনিময় সভায় আরো বলা হয়, কৃষির উন্নয়ন অগ্রগতি হলেও এখনো অব্যবহৃত বিপুল ভুমি রয়েছে, তার সদ্ব্যবহার করতে হবে। কৃষির পাশাপাশি শিল্প সম্ভাবনার শতভাগ অর্জন জরুরি।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.