টুঙ্গিপাড়ায় ১৫ আগস্ট নওফেলের নেতৃত্বে চট্টগ্রামী মেজবান

0

সিটি নিউজ,চট্টগ্রাম :  জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুদিবসে বাবা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর পথ অনুসরণ করে নেতাকর্মীদের নিয়ে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় যাচ্ছেন মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। ১৫ আগস্ট বৃহস্পতিবার জাতীয শোক দিবসে দুপুরে টুঙ্গিপাড়ায় চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবানেরও আয়োজন করেছেন নওফেল।

বুধবার (১৪ আগস্ট) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ ময়দান থেকে নওফেলের নেতৃত্বে যাত্রা করে প্রায় ৫০০ নেতাকর্মীর বহর। রওনার আগে সেখানে সংক্ষিপ্ত পথসভায় বক্তব্য রাখেন নওফেল।

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নঈমউদ্দিন চৌধুরী ও আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, আইন সম্পাদক ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক চন্দন ধর, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান মো.আবদুচ ছালাম, কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মাহমুদুল হক,চট্টগ্রাম নগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু, যুগ্ম আহ্বায়ক ও সমাজ সেবক ফরিদ মাহমুদ, দেলোয়ার হোসেন খোকা ও মাহবুবুল হক সুমন, সেখানে উপস্থিত হয়ে টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশে রওনা দেয়া গাড়িরর বহরকে বিদায় জানান। তবে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ও তার অনুসারী কাউকে সেখানে দেখা যায়নি।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘আপনারা জানেন, আমার বাবা চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রতিবছর ১৫ আগস্ট টুঙ্গিপাড়ায় যেতেন এবং সেখানে মেজবানের আয়োজন করতেন। আমরা যারা আওয়ামী লীগের কর্মী, আমাদের কাছে এটা সাংগঠনিক অনুশীলনের মতো। কর্মীদের বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া, ইতিহাস জানানো- এই তাগিদ এবং জাতির জনকের জন্য প্রার্থনা করতে ও দোয়া নিতে আমরা সেখানে যাই। বাবার মতো আমি যতদিন আছি, প্রতিবছর চট্টগ্রামের নেতাকর্মীদের নিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় যাব।’

আশির দশক থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুদিবসে তাঁর জন্মস্থান গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় মেজবানের আয়োজন করে আসছিলেন বর্ষীয়ান রাজনীতিক ও চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। মাথায় হুলিয়া নিয়ে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায়ও ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে গিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি সাধ্যমতো সাধারণ মানুষের জন্য আপ্যায়নের আয়োজন করতেন মহিউদ্দিন।

২০১৭ সালের ডিসেম্বরে মহিউদ্দিনের জীবনাবসান হয়। তবে তাঁর অবর্তমানে গতবছরও নেতাকর্মীদের নিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে মেজবানের আয়োজন করেছিলেন নওফেল। এবারও এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ১৫ আগস্ট দুপুরে টুঙ্গিপাড়ায় ৪০ হাজার মানুষের জন্য মেজবানের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নওফেল।

১৫ আগস্ট সকালে নেতকর্মীরা বঙ্গবন্ধুর মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন। দুপুরে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কলেজ ও বালিয়াডাঙ্গা স্কুল মাঠে মেজবান অনুষ্ঠান হবে। আগেই টুঙ্গিপাড়ায় পৌঁছেছেন চট্টগ্রামের মোহাম্মদ হোসেন বাবুর্চির নেতৃত্বে ৪০ সদস্যের একটি টিম।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ৪০ হাজার মানুষের মধ্যে ৩০ হাজার মুসলিম এবং ১০ হাজার অমুসলিমের জন্য মেজবানের আয়োজন থাকছে। ২০টি গরু ও ৩ হাজার মুরগি কেনা হয়েছে।

টুঙ্গিপাড়ার পথে রওনা দিয়েছেন মহিউদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা মহিউদ্দিন, ছোট ছেলে বোরহানুল হাসান চৌধুরী সালেহীনও। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম এ রশীদ, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনান, প্রচার সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আবু তাহের,নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীরও আছেন গাড়িবহরে।

এছাড়া সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ, সভাপতি মাহমুদুল করিম ও সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মল্লিক সবুজের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগ এবং মায়মুন উদ্দিন মামুনের সঙ্গে সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা টুঙ্গিপাড়ায় যাচ্ছেন।

টুঙ্গিপাড়ার পথে থাকা চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ সারাবাংলাকে বলেন, “এবার নেতাকর্মী গতবারের চেয়েও বেশি হয়েছে। প্রায় ৪০০ জনের মতো আমরা জমিয়াতুল ফালাহ’র সামনে থেকে রওনা দিয়েছি। পথে পথে আরও গাড়ি যুক্ত হচ্ছে। শেষপর্যন্ত ৫০০ জনেরও বেশি হবে বলে মনে করছি। আমাদের নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী আমাদের যে সাংগঠনিক শিক্ষা দিয়ে গেছেন, নেতার অনুপস্থিতিতেও আমরা সেটার চর্চা করে যাব। টুঙ্গিপাড়ায় যাওয়া এবং মেজবানের আয়োজন করে গরীব-দুঃখী মানুষকে খাওয়ানোর মধ্য দিয়ে আমরা নেতার স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখতে চাই।’

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলে এর প্রতিবাদে তৎকালীন শ্রমিক নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী দেশে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। বিষয়টি তৎকালীন সামরিক সরকার জানার পর তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করে। তখন মহিউদ্দিন নিজের অনুসারীদের নিয়ে ভারতে পাড়ি জমান এবং সেখান থেকে সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করেন।

তবে ভারতের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তিনি দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হন। ১৯৭৭ সালে তিনি টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে বঙ্গবন্ধুর কবরটি পাকা করে দেন। এরপর থেকে প্রতিবছর তিনি ১৫ আগস্টে টুঙ্গিপাড়া চলে যান। ১৯৯৮ সালের ১৫ আগস্ট থেকে সেখানে বড় পরিসরে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবানের আয়োজন করতেন মহিউদ্দিন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.