গ্রেনেড হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার কেমন আছেন

0

সিটি নিউজ ডেস্ক :  ২০০৪ সালের শোকাবহ ২১ আগস্ট আজ এদিনে সন্ত্রাস বিরোধী জনসভায় তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল। এসময় মানবঢাল তৈরি করে নিজেদের জীবন দিয়ে শেখ হাসিনাকে রক্ষা করেন প্রাণপ্রিয় নেতাকর্মীরা। সৌভাগ্যক্রমে শেখ হাসিনা বেঁচে গেলেও আইভি রহমানসহ ২৩ জন নেতাকর্মীকে নৃসংশভাবে খুন হন। আহত হন প্রায় দেড় শতাধিক নেতাকর্মী ও সমর্থক।

এর মধ্যে লিটন মুন্সী ছিলেন আওয়ামী লীগের একজন নিবেদিত কর্মী। এর টানেই লিটন সে দিন সমাবেশে যোগ দিতে ঢাকায় গিয়েছিল। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে অনুষ্ঠিত শেখ হাসিনার সমাবেশে যোগ দিতে গিয়ে বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর গ্রামের যুবলীগ নেতা লিটন মুন্সী নির্মমভাবে নিহত হন। সেই নিহত লিটন মুন্সীর পরিবারে শোকের রেশ এখনো কাটেনি। পরিবারের সদস্যরা এখন কষ্টে জীবনযাপন করছেন।

ভয়াল ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতের পরিবার কেমন আছেন- জানার জন্য রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের চানপট্টি গ্রামের যুবলীগ নেতা নিহত লিটন মুন্সীর বাড়ি গেলে এক হৃদয়বিদারক ঘটনার সৃষ্টি হয়। এ সময় লিটন মুন্সীর মা আছিয়া বেগম, বাবা আইয়ুব আলী মুন্সী, বোন ইসমতআরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। মা আছিয়া বেগম বলেন, আমার বাবা (লিটন মুন্সী) বলেছিল, মা তোমার পেটের পাথর অপারেশন করে আনবো। মাত্র ১০ দিন অপেক্ষা করো। ৯ দিনের মাথায় বাবা লাশ হয়ে ফিরেছে। লিটনের বাবা আইয়ুব আলী মুন্সী বলেন, আমার ছেলের তো কোনো দোষ ছিল না। আমার একমাত্র ছেলেকে কবরে শুইয়ে রেখে কীভাবে বেঁচে আছি বলতে পারেন? তিনি এই গ্রেনেড হামলাকারীদের কঠোর শাস্তি দাবিসহ লিটন মুন্সীর কবরটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি একটিবারের মতো জিয়ারত করে যেতেন তাহলে আমি মরেও শান্তি পেতাম। একমাত্র বোন ইসমতআরা বলেন, আমার ভাই বাবা-মার একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিল। তার মৃত্যুর পর আমার বাবা কৃষি কাজ করে জীবনযাপন করছেন। বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়েছেন। এখন আর তার পক্ষে কৃষিকাজ করা সম্ভব নয়।

ইসমত আরা বলেন, ভাগ্য পরিবর্তন তো দূরে থাক বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলায় আহত মাদারীপুরের অন্তত ৫ জন এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন গ্রেনেডের স্প্লিন্টার। দীর্ঘদিন স্প্লিন্টারগুলো শরীরের বিভিন্ন স্থানে থাকায় চিকিৎসার অভাবে শরীরের এক একটি অংশ হয়ে পড়ছে অকেজো। সুচিকিৎসার অভাবে ধীরে ধীরে পঙ্গুত্ববরণ করছেন তারা। প্রাণ কৃষ্ণ নামের একজন চোখ হারিয়েও পায়নি সামান্য স্বীকৃতিটুকুও। আর বিচারের দীর্ঘসূত্রিতায় এ জেলার ওইদিন নিহত ৪ জনের বাড়িতে এখনো চলছে শোকের মাতম।

নিহত ও আহতদের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার সমাবেশে বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলার ১৪ বছরেও দোষীদের বিচার না হওয়ায় শুধু আর্তনাদই নয় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো আজ চরম ক্ষুব্ধ। এ দৃশ্য শুধু মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের চানপট্টি গ্রামে যুবলীগ নেতা নিহত লিটন মুন্সীর বাড়িরই নয় মাদারীপুরের ৪ নিহতের পরিবারেই। নিহতদের পরিবারের মূল দাবি দ্রুত বিচারের। আর যারা বেঁচে আছেন তারা কাটাচ্ছেন মানবেতর জীবন। জেলা সদরের ছিলারচর ইউনিয়নের পশ্চিম রঘুরামপুর গ্রামের প্রাণ কৃষ্ণ সে দিন চোখ হারিয়ে এখন চলছেন সহধর্মিণীর কাজের ওপর। তার স্ত্রী গোবর দিয়ে জ্বালানি বানিয়ে বিক্রি করে সংসার চালান। চোখ হারানো প্রাণ কৃষ্ণ পায়নি সামান্য স্বীকৃতিটুকুও। কালকিনি পৌরসভার কবিরের বাম হাত ধীরে ধীরে অচল হয়ে যাচ্ছে। তরকারি বেচে জীবন চালাতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। নিহত লিটনের বৃদ্ধ বাবা-মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আর্থিক সহায়তায় সন্তুষ্ট। প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক অনুদানে তাদের পরিবারে কিছুটা আর্থিক সচ্ছলতা ফিরে এসেছে। নিহত লিটনের কবরটিও পাকা হয়েছে। অপরদিকে লিটনের একমাত্র মেয়ে মিথিলাও প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক অনুদান পেয়ে খুশি। সে মাদারীপুর শহরের নানা বাড়িতে থেকে একটি ভালো স্কুলে ৫ম শ্রেণিতে পড়াশুনা করছে।

শুধু লিটন মুন্সী নন ওই গ্রেনেড হামলায় মাদারীপুরের এক নারীসহ আরো ৩ জন নিহত হন। কালকিনি উপজেলার কয়ারিয়া ইউনিয়নের রামারপোল গ্রামের শ্রমিকলীগ নেতা নাসির উদ্দিন, একই উপজেলার ক্রোকিরচর ইউনিয়নের মহিষমারি গ্রামের মোস্তাক আহাম্মেদ ওরফে কালা সেন্টু ও রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ি গ্রামের সুফিয়া বেগমের পরিবারেও স্মৃতির সাক্ষী শুধুই আহাজারি।
নিহত লিটনের মেয়ে মিথিলা বলেন, আমার বাবা নেই। সরকার যদি আমাকে একটু সহায়তা করে তাহলে পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারতাম। আমি ঢাকার একটি ভালো স্কুলে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া করে উচ্চশিক্ষিত হতে চাই। এ ব্যাপারে সে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা কামনা করে।

প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালের ১৭ আগস্ট দেশের বিভিন্ন স্থানে সিরিজ বোমা হামলার প্রতিবাদে ২১ আগস্ট দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে মহানগর আওয়ামী লীগের সমাবেশ ছিল। সমাবেশ শেষে সন্ত্রাসবিরোধী শান্তি মিছিল হওয়ার কথা ছিল। এ শান্তি মিছিলে নেতৃত্ব দেয়ার কথা ছিল আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও সে সময়ের বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার। মিছিল শুরুর আগ মুহূর্তে ট্রাকের ওপর নির্মিত খোলা মঞ্চে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনার বক্তব্য শেষ হওয়া মাত্র বিকেল ৫টা ২২ মিনিটে তাকে লক্ষ্য করে মুহুর্মুহ গ্রেনেড হামলা শুরু হয়। বিকট শব্দে একের পর এক বিস্ফোরিত হয় ১৩টি গ্রেনেড। নেতাকর্মীদের মানবঢালের কারণে সৌভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা। তারপরও শেখ হাসিনার গাড়িকে লক্ষ্য করে ১২টি গুলি ছোড়ে দুর্বৃত্তরা। নারকীয় ওই হামলায় রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার রেজিনা বেগমসহ ২২ জন প্রাণ হারান। আহত হন কয়েকশ নেতাকর্মী।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.